মুম্বাই ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী। সরকারি দিনগুলো বাদে এই শহরে সব সময়ই লেগে থাকে যানজট। অথচ ২২ অক্টোবর এই শহরই হয়ে গিয়েছিল সুনসান। ছিল না গাড়ির ভিড়। কারণ অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবার ও ওলা’র চালকেরা এ দিন ধর্মঘট ডেকেছিলেন। তাতে ব্যস্ত শহরটির রাইড শেয়ারিং ব্যবস্থা পুরো অচল হয়ে গিয়েছিল। আর এই এক ধর্মঘটেই পুরো ভারতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে উবার ও ওলা।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের খবরে বলা হয়েছে, রাইড শেয়ারিং ব্যবস্থায় ভারতের শীর্ষ দুটি কোম্পানি হলো উবার ও ওলা। অক্টোবরের ধর্মঘটে মুম্বাইয়ের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা বেশ বিপাকে পড়ে। ট্রেন-বাস ও রিকশা ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা। স্থানীয় ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, সেদিন শহরের ৩৫ হাজার চালকের প্রায় ৯০ শতাংশই কাজ বন্ধ রেখেছিলেন।
তবে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বা প্রতিবাদের ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগে যুক্তরাজ্যেও এ ধরনের ধর্মঘটের মুখোমুখি হতে হয়েছিল উবারকে। ভারতেও এ ধরনের ধর্মঘট ঠেকানোর মতো কোনো আইন নেই। চালকদের ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে তাঁদের মোট দাবির ৮০ শতাংশই মেনে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভাড়ার হার বাড়ানোর মতো দাবিও ছিল। সে ক্ষেত্রে এই প্রথমবারের মতো রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোকে মধ্যস্থতা করতে হলো বা আলোচনার মাধ্যমে নমনীয় হতে হলো।
ইকোনমিস্ট বলছে, চালকদের অভিযোগগুলো বেশ সোজাসাপটা। প্রায় পাঁচ বছর আগে মার্কিন কোম্পানি উবার ও মুম্বাইভিত্তিক কোম্পানি ওলা রাইড শেয়ারিং চালু করে। চালকেরা বলছেন, ওই সময় কোম্পানিগুলো চালকদের বেশ ভালো পরিমাণের অর্থ পরিশোধ করত। অনেক চালক সেই সময় মাসে এক লাখ রুপি পর্যন্ত রোজগার করেছেন। কিন্তু গত দুই বছর ধরে অর্থের অঙ্কটি ক্রমান্বয়ে কমে গেছে। গত কয়েক মাসে ভারতে পেট্রলের দাম বেড়ে যাওয়ায় অবস্থা আরও বেগতিক হয়ে গেছে।
নিখিল ঠাকুর নামের এক চালক বলেন, ‘তারা আমাদের লুট করছে। আমরা একটি আস্থায় ভর করে গাড়ি কিনেছিলাম। এখন আমরা মারা যাচ্ছি।’ নিখিল জানান, আগে দিনে ৩ হাজার রুপির মতো রোজগার করতেন তিনি। আর এখন আয় নেমেছে ২ হাজার রুপিরও নিচে।
অন্যদিকে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো বলছে, সরকারি কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষণা পাচ্ছে না তারা। ভারতে গাড়ির চালকদের পুলিশের সদস্যরা প্রায় সময়ই হয়রানি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত বছর এ সংক্রান্ত একটি আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়েছে উবার।
অবশ্য বিপাকে আছে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোও। কোম্পানিগুলোর লোকসানের পাল্লা ধীরে ধীরে ভারী হচ্ছে। গত বছর ওলা’র লোকসান বেড়ে গিয়েছিল ৫৫ শতাংশ। যদিও উবার লাভ-লোকসানের কোনো অঙ্ক প্রকাশ করে না, তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, উবার ভারতে খুব একটা রোজগার করতে পারছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্মঘট করে চালকেরা যদি পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যায়, তবে সংকটে পড়বে দুই পক্ষই। তখন বেকার হয়ে যেতে পারে হাজার হাজার চালক।