প্রেম করেছে মেয়ে। কিন্তু মেনে নিতে পারেননি মা। অবশেষে মেয়েকে খুন করে মরদেহ ফেলে দিলেন বাড়ির পাশের ডোবায়। নোয়াখালীর মাইজদী পৌর বাজারে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।
নিহত তাবাসসুম তানিয়া চমক (২২) নোয়াখালীর সোনাপুর ডিগ্রি কলেজের অনার্স (সম্মান) হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।
তানিয়াকে তার মা শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ছোট বোন তাসনিম তাহসিন চাঁদনী।
এ ঘটনায় তানিয়ার মা সাজেদা আক্তার নিপু (৪০), ছোট বোন তাসনিম তাহসিন চাঁদনী (১৯), প্রেমিক তাপস ও মামা জাহিদুল ইসলাম সোহেলকে (৩৩) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তানিয়া হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে জানিয়ে শনিবার বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ।
তিনি বলেন, অনার্সে পড়া অবস্থায় তাপস নামের এক হিন্দু সহপাঠীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তানিয়া। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
খুনের ঘটনার ছয়দিন আগে ডাক্তার দেখানোর জন্য তানিয়ার বাবা শাহজাদা এনামুল হক ও মা সাজেদা আক্তার নিপু ঢাকায় যান। এ সময় তানিয়া ও তার ছোট বোন চাঁদনীকে বাসায় রেখে যান।
গত ১১ নভেম্বর রাত ১০টার দিকে ট্রেনে করে ঢাকা থেকে বাসায় ফেরেন তানিয়ার মা নিপু। মায়ের অনুপস্থিতিতে তানিয়া প্রেমিক তাপসের সঙ্গে সারাক্ষণ ফোনে কথা বলেছেন জানিয়ে অভিযোগ করেন ছোট বোন চাঁদনী।
হিন্দু ছেলে হওয়ায় বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি মা। বিষয়টি জেনে ক্ষিপ্ত হয়ে রাত সাড়ে ১০টার তানিয়াকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথি মারেন। একপর্যায়ে তানিয়া মেঝেতে পড়ে গেলে ছোট বোন চাঁদনীর ওড়না গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তানিয়াকে হত্যা করেন মা।
পরে মা নিপু তার ছোট ভাই জাহিদুল ইসলাম সোহেলের সহযোগিতায় ওড়না দিয়ে টেনে ঘরের পাশের একটি ডোবার তানিয়ার মরদেহ ফেলে দেয়।
ঘটনার পরের দিন রেলস্টেশন থেকে তানিয়াকে আনতে গিয়ে নিখোঁজ হয় মর্মে থানায় একটি জিডি করেন মা। তিনদিন পর তাদের বাসার পাশের ডোবা থেকে তানিয়ার গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন রাতে তানিয়ার প্রেমিক তাপসকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনায় তানিয়ার মা ও ছোট বোন এবং মামাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ সুপার ইলিয়াছ শরীফ বলেন, শুক্রবার নিহত তানিয়ার ছোট বোন চাঁদনীকে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহেব উদ্দিন খাঁনের আদালতে হাজির করা হয়।
আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন চাঁদনী। জবানবন্দিতে পুরো ঘটনার বিবরণ দেন তিনি। পরে চাঁদনীকে কারাগারে পাঠানো হয়। পাশাপাশি মা সাজেদা আক্তার নিপু ও মামা জাহিদুল ইসলাম সোহেলের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ঘটনায় তানিয়ার বাবা শাহজাদা এনামুল হক হিমেল বাদী হয়ে মামলা করেছেন বলেও জানান পুলিশ সুপার।