ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার নতুন মেয়র হিসেবে ফিরহাদ হাকিমের নাম ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
আগের মেয়র শোভন চ্যাটার্জি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর নতুন এই মেয়রের নাম ঘোষণা করা হলো। এর মধ্যে দিয়ে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমবারের মতো কলকাতার মেয়র হলেন কোনো মুসলিম।
নতুন মেয়র ফিরহাদ হাকিম, যিনি ‘ববি হাকিম’ নামেই বেশি পরিচিত, আগে থেকেই রাজ্যের নগরোন্নয়ন এবং পৌর দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতার নতুন মেয়র বেছে নেয়ার জন্য দলীয় কাউন্সিলরদের বৈঠক আগেই ডাকা হয়েছিল, যেখানে মমতা ব্যানার্জি ছাড়াও হাজির ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই বৈঠকেই মমতা ব্যানার্জি নতুন মেয়রের নাম ঘোষণা করেন।
১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার আগে পাঁচজন মেয়র ছিলেন মুসলিম, যাদের মধ্যে ছিলেন শের-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হকও। কিন্তু তারপর থেকে কখনও কোনো মুসলিম নেতা কলকাতার মেয়র পদে বসেননি।
নতুন মেয়র ফিরহাদ হাকিম দক্ষিণ কলকাতার চেতলা অঞ্চলের মানুষ। কংগ্রেসের রাজনীতি করতে করতেই মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি এবং গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে কলকাতা করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে প্রথম নির্বাচন করে তিনি জয়লাভ করেন।
এরপর যতই দিন গেছে, ততই মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠদের বৃত্তে ঢুকে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছাকাছি পাড়ার বাসিন্দা ফিরহাদ হাকিম। করপোরেশনের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছিয়ে গেছেন বিধানসভায়। ভোটে জিতে বিধায়ক হওয়ার পরে হয়েছেন মন্ত্রী। আর রাজনীতির ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছেন মমতা ব্যানার্জির ‘ম্যান ফ্রাইডে’দের অন্যতম।
পাকিস্তানের ‘ডন’ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, তার দাদু বিহারের গয়া জেলা থেকে কলকাতায় এসে ব্যবসা শুরু করেন। বাবা ছিলেন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের আইন আধিকারিক। আর মা ছিলেন কলকাতার একটি স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা।
ফিরহাদ হাকিমের মায়ের আদি বাড়ি ছিল ফরিদপুরে। তার মা হিন্দু মুখার্জি পরিবারের সন্তান ছিলেন বলে জানিয়েছেন ফিরহাদ হাকিমের বাল্য বন্ধু ঋষিকেশ মুখার্জি, ‘ববি ধর্মে মুসলমান ঠিকই, নিয়মিত নামাজও পড়ে। গত বছর হজ করে এসেছে, কিন্তু ওর মধ্যে হিন্দু-মুসলিম প্রসঙ্গটা একেবারেই নেই। ওর মা ছিলেন পূর্ব বঙ্গীয় হিন্দু পরিবারের মানুষ, বোনের বিয়ে দিয়েছে হিন্দু পরিবারে।’
তিনি আরও জানান, যে বড় নেতা বা তারপরে মন্ত্রী হয়ে যাওয়ার পরেও কলকাতায় থাকলে নিয়মিত আড্ডায় বসেন বন্ধুদের সঙ্গে, সেখানে রাজনীতির আলোচনা কমই হয়।