শাম্মী আক্তার
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আমরা সবাই একটু বেশি উৎফুল্ল কারণ আমরা বিশ্বাস করি এবং আশা রাখি আগামী পাঁচ বছরের জন্য আবারও আমরা আপনার আশীর্বাদ ও অকৃত্রিম ভালোবাসা পাব। আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাবে, আপনার ভালোবাসায় আপামর জনতা ভালো থাকবে।
আপনার প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে যখন ভাবি আপনিই সেই মহান নেত্রী যিনি প্রথম ২০১০ সালে আমাদের মায়েদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছেন, আমাদের জননীদেরকে সবার সামনে তুলে ধরেছেন। তাদের ত্যাগ, ভালোবাসার মর্যাদা দিয়েছেন। আপনি যতদিন বেঁচে থাকবেন প্রিয় নেত্রী আমরা মেয়েরা, মায়েরা ততদিন ভালো থাকবো এই আশায় সব সময় আরো বেশি উজ্জীবিত হয়। নিজেদেরকে ভালো রাখার এই লোভে সর্বদা আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করি।
ভাবলে অবাক লাগে মনেহয় আমাদের পরিচয় বহনকারী কাগজপত্রে যদি আমাদের মায়েদের নাম উল্লেখ না থাকত তাহলে সারাজীবন মায়েদের কাছে একজন অকৃতজ্ঞ সন্তান হিসেবে থেকে যেতে হতো আমাদের! সে কি নিদারুণ যন্ত্রণায় না হতো! আপনার প্রচেষ্টায় আমরা সেই বিষন্ন অনুভূতি থেকে মুক্তি পেয়েছি। আমাদের মেয়েদের ভালো থাকার জন্য, তাদের উন্নয়নের জন্য, তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য জন্য আপনাকে আরও অনেক বেশি দরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ভয় হয় যদি আপনি না থাকেন প্রিয় নেত্রী তাহলে আমাদের কী হবে!
আমি সর্বদা বেগম রোকেয়ার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই কারণ তিনি আমাদের অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে এসেছিলেন আর প্রিয় নেত্রী আপনাকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই কারণ আপনার জন্য আমরা আলোতে থাকতে পারছি এবং সেই আলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারছি। আলোময় হচ্ছে সকল নারীর জীবন।
চিন্তা করলে শিউরে উঠি মনে হয় যদি আপনি না থাকেন তাহলে হয়তো আমরা আবার অনেক বেশি পিছিয়ে যাবো, আমাদেরকে দমিয়ে রাখা হবে, আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যাওয়া হবে এতে করে শুধু আমরা পিছিয়ে যাবো না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশও পিছিয়ে যাবে। এমন আমরা চাই না প্রিয় নেত্রী! আমি বিশ্বাস করি নারীরা এখন অনেক বেশি সচেতন কারণ সবাই জানে যদি নেত্রী আপনি ক্ষমতায় আসেন তাহলে নারীরা ভালো থাকবে, তাদের অবস্থান শক্ত হবে, তারা পরিবারের প্রতি, সমাজের প্রতি, সর্বোপরি দেশের প্রতি অবদান রাখতে পারবে। এখন আমরা নারীরা বুঝি পুরুষরা ভোট প্রদানের জন্য যদি একবার ভাবে তাহলে নারীদের সেখানে দুইবার ভাবতে হবে। নারীদের মেধার প্রকৃত মূল্যায়নের জন্য, তাদেরকে মূল স্রোতধারায় শক্ত অবস্থান তৈরি করার জন্য আপনাকে খুব দরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
আমি আমার মেয়ে মাহিরাহ মুর্তজার পক্ষ থেকে আপনাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ আপনিই সেই মমতাময়ী নেত্রী যিনি আমাদের সন্তানদের এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং নিশ্চিত করার জন্য, তাদের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য, তাদের মঙ্গলের জন্য ২০১১ সালে ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করেছেন। কারণ আপনি জানেন এবং বোঝেন যে একটা সন্তানের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত যে একমাত্র ব্যতিক্রমী নিয়ামক “মাতৃদুগ্ধ” সেটা থেকে যেন আমাদের সন্তানেরা কোনোভাবেই বঞ্চিত না হয়! এ তার অধিকার। আমরা জানি আপনি সমস্ত রকমের অধিকারের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেষ্ট , আন্তরিক এবং সচেতন। একজন সন্তানের জন্য এ এক পরম পাওয়া প্রিয় নেত্রী। শুধু আপনি এই অধিকারই নিশ্চিতই করেন নাই পাশাপাশি তাদের সুস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য “ব্রেস্ট মিল্ক সাবস্টিটিউট অ্যাক্ট ২০১৩” প্রণয়ন করেছেন এবং পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাও অব্যাহত রেখেছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে “ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার” চালু করার জন্য নির্দেশনাও দিয়েছেন।
অন্যদিকে আপনার নেতৃত্বে শিশুদের ইপিআই প্রোগ্রাম এক যুগান্তকারী সাফল্য নিয়ে এসেছে। ২০১৫ সালের জাতীয় জরিপের ফলাফল অনুযায়ী ইপিআই এর আওতায় এক বছরের নিচের শিশুদের টিকা গ্রহণের হার ছিল প্রায় শতভাগ যা কিনা ১৯৮৫ সালে ছিল মাত্র ২ শতাংশ। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ পোলিওমুক্ত সনদ অর্জন করে। আপনার মমতাময়ী নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুহার কমেছে। ইউনিসেফের “লেভেলস অ্যান্ড ট্রেন্ডস ইন চিল্ড মর্টালিটি রিপোর্ট -২০১৭” অনুযায়ী গত ২৫ বছরে বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার শতকরা ৭৩ ভাগ কমেছে! ধন্য আমরা প্রিয় নেত্রী আপনাকে পেয়ে! আপনার দূরদর্শিতা, আপনার মমত্ববোধ সত্যিই আমাদের জন্য এক অনন্য আশীর্বাদ।
একদিন শুনি আমার মেয়ে তার এক আন্টির সাথে এভাবে গল্প করছে; আন্টি তুমি কি গোপালগঞ্জ গিয়েছো? উনি বললেন কেন গোপালগঞ্জ যাবো কেন? সে অবাক হয়ে উত্তর দিল গোপালগঞ্জ যাবো কেন মানে? গোপালগঞ্জ তো হাসিনা দিদার (সে এভাবেই ডাকতে পছন্দ করে) বাড়ী তুমি যাও নাই? আমি মনে করি আমার এই ছোট্ট মেয়ের মতো সকল শিশুই আপনাকে এভাবেই ভালোবাসে প্রিয় নেত্রী। শিশুদের জন্য আপনি অনেক শিশুবান্ধব আইন প্রণয়ন করেছেন এবং উপযোগী হেল্পলাইন চালু করেছেন। তন্মধ্যে শিশু আইন ২০১৩, বাল্যবিবাহ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩, শিশু হেল্পলাইন ১০৯৮, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ হেল্পলাইন ১০৯২১, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ হেল্পলাইন ১০৯, উল্লেখযোগ্য।
অন্যদিকে তুলনামূলকভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য দেশরত্ন আপনার অনন্য উদ্ভাবন হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক যা তাদের জন্য এক বড় আশীর্বাদ! বর্তমানে আমাদের দেশে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে বিনামূল্যে ৩২ রকমের ওষুধ দিয়ে সেবা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ১৩ হাজার মেটারনিটি সেন্টার ও চলমান রয়েছে। এসবের মাধ্যমে প্রাইমারি হেলথ কেয়ার এখন মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে। প্রায় দেড় লক্ষ মহিলা মেটারনাল হেলথ ভাউচার স্কিমের মাধ্যমে সেবা নিচ্ছে, ৫ লক্ষ দরিদ্র গর্ভবতী মা মাতৃত্বকালীন ভাতা পাচ্ছে, এবং ২ লক্ষ দুগ্ধদানকারী মাও ভাতা পাচ্ছে। এসব যুগান্তকারী অবদানে মাধ্যমে আপনি সাধারণ মানুষের হৃদয়ে এক সুবিশাল জায়গা করে নিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
প্রিয় নেত্রী আপনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বিশেষভাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এক যুগান্তকারী অর্জন সম্ভব হয়েছে। তন্মধ্যে বিনামূল্যে বই, মিড ডে মিল এবং বৃত্তি ও উপবৃত্তি কার্যক্রম অন্যতম। প্রতিবছর প্রায় ৪ কোটি ৬০ লক্ষ ছাত্রছাত্রী একযোগে বিনামূল্যে বই পাচ্ছে। প্রায় ২ কোটি তিন লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী বৃত্তি ও উপবৃত্তি পাচ্ছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৩০ লক্ষ প্রাথমিক বিদ্যালয় এর ছাত্র ছাত্রীরা তাদের মায়েদের মোবাইলের মাধ্যমে উপবৃত্তি গ্রহণ করছে। এর মধ্যে আবার ২০ লক্ষ মা পেয়েছে মোবাইল সুবিধা। প্রকৃত অর্থে উপবৃত্তি ও বৃত্তি কার্যক্রম এক অভিনব পরিবর্তন এনেছে শিক্ষাক্ষেত্রে। এর মাধ্যমে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার যেমন বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে পাশাপাশি বেশি আকর্ষণীয় হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের তুলনামূলক হার। এইসব যুগান্তকারী পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ অত্যন্ত গর্বের সাথে সফলভাবে দারিদ্র ও অপুষ্টির দুষ্টচক্রকে ভেঙে দিচ্ছে। উন্মোচিত হচ্ছে শিক্ষা ও পুষ্টির ধনাত্মক চক্র। প্রিয় নেত্রী যার ফলাফল ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এ সবই সম্ভব হয়েছে আপনার দক্ষ, দুর্দান্ত কৌশলের কারণে। আমরা জানি আপনার কাছে নারীর ক্ষমতায়ন পলিসির থেকে অনেক বেশি। যখন একজন নারী ক্ষমতায়িত হয় তখন তাদের সন্তানের দের সুখের পথ সুগম হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাদার অব হিউম্যানিটি, কুইন অব ওয়ার্ল্ড পিস আপনার নিরলস বিনিদ্র নেতৃত্বে আমরা মায়েরা যেমন ভালো থাকতে চাই তেমনি আপনার মাধ্যমে আমাদের সন্তানদের ভালো রাখতে চাই। আপনি দীর্ঘজীবী হন, আপনার নেতৃত্ব আরও বেশি দরকার প্রিয় নেত্রী। আপনার অভিব্যক্তিই যেন সত্য হয় : “আবার আসিব ফিরে এই মহান সংসদে”। জয় হোক আপনার, জয় হোক জনতার।