২০-দলীয় জোটের (সম্প্রসারিত ২৩ দল) শরিকদের সর্বোচ্চ ৩৫-৪০ আসন দেয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। তবে সমঝোতা না হলে চূড়ান্ত দরকষাকষির সময় আরও দুই-তিনটি আসনে ছাড় দিতে পারে। বিএনপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
ইতিমধ্যে ২০ দলের শরিক দলগুলো নিজ নিজ দলের প্রার্থী তালিকা তৈরি করে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতার হাতে পৌঁছে দিয়েছে। প্রার্থী তালিকা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।
আগামীকাল বুধবার বিএনপির দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শেষ হচ্ছে। এর পরই আসন ভাগাভাগি নিয়ে জোটসঙ্গীদের সঙ্গে বসবে দলটি। সামনের সপ্তাহের মাঝামাঝি আসন বণ্টন চূড়ান্ত হতে পারে।
বিএনপির সঙ্গী এখন দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক মোর্চা। দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা ২০ দল ছাড়াও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক দল রাজপথের এই বিরোধী দল।
এ দুটি মোর্চায় রাজনৈতিক দল রয়েছে ২৭টি (জোটের ২৩ দল+ ঐক্যফ্রন্টের ৪ দল)। এর বাইরেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন আইনজীবী, সাবেক সচিব, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজ মিলিয়ে বেশ কয়েকজনকে মনোনয়ন দিতে চান।
সব মিলিয়ে আসন ভাগাভাগিতে দুটি বৃহৎ জোটের শরিকদের সন্তুষ্ট রাখা বিএনপির বড় ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদিও দলটির নেতারা বলছেন, উইনেবল প্রার্থী হলে শরিকদের আসন ছাড় দিতে আপত্তি নেই তাদের।
২০-দলীয় জোট শরিকদের প্রার্থী তালিকা বিএনপির কাছে ইতিমধ্যে জমা দেয়া হয়েছে। কয়টা আসন ছাড়া যায় তা নিয়ে শিগগিরই শরিকদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
জোটের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের কাছে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা দিয়েছে ২০-দলীয় জোটের শরিকরা। রোববার রাতে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থী তালিকা জমা দেয়। তারা বিএনপির কাছে ৫০ জনের তালিকা দিয়েছে।
জামায়াতের ৫০ আসনের বিপরীতে বিএনপি ২০টি আসনে ছাড় দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। তবে এতে জামায়াত রাজি না হলে আরও দুই-একটি আসন ছাড় দেয়া হতে পারে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতকে ৩৫ আসন দিয়েছিল বিএনপি।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিও (এলডিপি) বিএনপির কাছে প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে।
কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি ৩০ জনের একটি তালিকা জমা দিয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে ১২ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকাও দেয়া হয়। অলির চাওয়া অন্তত ৬ থেকে ৮টি আসন। এর মধ্যে কর্নেল অলি আহমেদ (চট্টগ্রাম-১৩), রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), শাহাদাত হোসেন সেলিমকে (লক্ষ্মীপুর-১) বিএনপি ছাড় দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানতে চাইলে এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আমরা ৩০টি আসনে প্রার্থীর তালিকা জমা দিয়েছি। নানা নির্যাতন, অত্যাচার সহ্য করে আমরা জোটে আছি। আশা করি বিএনপি এবার আমাদের যথাযথ মূল্যায়ন করবে।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১২ আসনের তালিকা দিয়েছে। এর মধ্যে দলটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমকে চট্টগ্রাম-৫ আসনটি ছাড় দেয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিএনপিকে বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। কারণ ওই আসনে বিএনপির এক হেভিওয়েট প্রার্থী মনোনয়নপ্রত্যাশী।
জাতীয় পার্টির (জাফর) ১৬ জনের একটি তালিকা বিএনপির কাছে জমা দিয়েছে। তাদের সর্বোচ্চ দুটি আসন দেয়া হতে পারে। পার্টির চেয়ারপারসন জয়া কাজীকে কুমিল্লা-১৪ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে জোটের মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। তবে ওই আসনে জামায়াতের হেভিওয়েট প্রার্থী ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরও মনোনয়ন চাইছেন।
ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বিজেপির চাওয়া তিনটি আসন। দলের চেয়ারম্যান ভোলার দুটি আসন থেকে নির্বাচন করতে চাইছেন। তবে ভোলা-১ আসনটি পার্থকে দেয়া হবে এটি মোটামুটি নিশ্চিত।
এ ছাড়া খেলাফত মজলিস ৪টি আসন দাবি করলেও তাদের একটিতে ছাড় দেয়া হতে পারে।
জাগপা তিনটি আসনের তালিকা দিয়েছে। দলটির প্রয়াত সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানকে একটি আসন দেয়া হতে পারে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের দুটি অংশই ২০ দলে রয়েছে। উভয় অংশ থেকে ৫ জন করে তালিকা দেয়া হয়েছে। দুই অংশে দুজনকে ছাড় দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।
এনপিপিও তাদের প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে। দলটির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নড়াইল-২ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ লেবার পার্টি দলের চেয়ারম্যান-মহাসচিবসহ তিনজনের তালিকা জমা দিয়েছে। দলটির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান চাইছেন পিরোজপুর কিংবা ঢাকার একটি আসনে নির্বাচন করতে। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে মনোনয়ন নাও দেয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে জোট ক্ষমতায় এলে তাকে অন্য কোনো সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হতে পারে।
মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের রীতা রহমানকে নীলফামারী-১ ও মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মণ্ডলকে যশোর-২ আসনে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। এ ছাড়া জোটের অন্য শরিকরা আসন নিয়ে দরকষাকষি করছে না।
বিএনপি থেকে তাদের কোনো আসন দেয়া হতে পারে, নাও পারে। তবে ক্ষমতায় গেলে তাদের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে বলে ইতিমধ্যে ওই সব শরিককে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আসন ছাড়ের ক্ষেত্রে সংখ্যা নয়, জনপ্রিয়তাকে প্রাধান্য দেবে বিএনপি। ইতিমধ্যে শরিকদের কাছ থেকে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই তালিকা ধরে বিএনপির পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে জরিপ চালানো হচ্ছে। জরিপে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আসন ছাড় দেয়া হবে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০-দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের দুটি জোট আছে। কারও সঙ্গেই এখনও আলোচনা শুরু হয়নি। সময় আছে অনেক। তবে এবার আমাদের বিজয়ী হতে হবে একটি ভীরু পরিবেশে। তাই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা যার বেশি, তাকেই আমরা মনোনয়ন দেয়ার চেষ্টা করব।