১৯৯৫ সাল কিংবা তারপরে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন তারা পূর্বের জেনারেশনের তুলনায় অনেক বেশি অসুখী ও মানসিকভাবে দুর্বল। ১৯৯৫ সালের পরে যারা জন্ম গ্রহণ করেছেন তারা পুরো কৈশোর সময়টা স্মার্টফোনের পেছনে ব্যয় করে। সুতরাং স্মার্টফোন ব্যবহারের মাধ্যমে পুরো কৈশোর পেরিয়ে যাওয়ার দিক দিয়ে তারাই প্রথম প্রজন্ম। কথাগুলো বলেছেন সান ডিয়াগো স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জ্যাঁ টুয়েঞ্জ।
অধ্যাপক জ্যাঁ টুয়েঞ্জ এই প্রজন্মের নাম দিয়েছেন ‘আইজেন’। তার মতে, এই প্রজন্ম বিগত প্রজন্মের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ। তারপরও আগের প্রজন্মের তুলনায় তাদের বিকাশের গতি মন্থর।
এই মনোবিজ্ঞানী বলেন, ‘১৯৯৫ সাল ও এরপরে জন্ম নেয়া প্রজন্ম আইজেন প্রজন্ম। এই প্রজন্ম তাদের কিশোর বয়সের অধিকাংশ সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করে কাটায়। তারা প্রচুর সময় অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যয় করে। এসব মাধ্যমে নানা ধরনের গেম খেলেও তারা অনেক সময় পার করে থাকে। কিন্তু স্ক্রিনের বাইরে বই পড়া, ঘুমানো বা তাদের বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা করার কাজে অনেক কম সময় ব্যয় করে।’
তিনি বলেন, ‘এসব শিশু-কিশোরদের বিকাশের গতি খুবই মন্থর। ১৮ বছর বয়সেও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া, চাকরি করা, মদ্যপান বা অভিভাবক ছাড়া বাইরে বের হওয়ার মতো যথেষ্ট যোগ্য তাদের মনে হয় না। এসব ক্ষেত্রে আগের জেনারেশনের কিশোর-কিশোরীদের তুলনায় তাদের কম যোগ্য মনে হয়।
এসব কিশোর-কিশোরীর আচরণ ও মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে এ মনোবিজ্ঞানী তার গবেষণায় বলেন, ২০১১ ও ২০১২ সালের দিকে কিশোর বয়সের শিশুদের মধ্যে খুব দ্রুত আমি একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করি। তাদের মধ্যে নিঃসঙ্গতাবোধ ক্রমেই বাড়তে দেখি। তারা কোনো কিছু সঠিকভাবে করতে পারে না। তারা ভাবছে তাদের জীবনটা অর্থহীন। আর এসবই হতাশার মূল লক্ষণ।
এসব ক্ষেত্রে ওই অধ্যাপকের পরামর্শ হচ্ছে, সুখ ও মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের চিন্তা-চেতনার ওপর নির্ভর করে। আর এ বিষয়গুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জন্মগতভাবে শরীরে আমরা যে জিন বহন করছি তা পাল্টানো সম্ভব নয়, যেমন রাতারাতি দারিদ্র্য দূর করার কোনো সমাধান নেই। কিন্তু আমরা আমাদের অবসর সময় কীভাবে ব্যয় করব, সেটা ইচ্ছা করলেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এ কাজে আমরা আমাদের শিশুদের সহায়তা করতে পারি।
এ গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা দিনে প্রায় দুই ঘণ্টা বা এর কম সময় ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারে। এতে সামাজিক মাধ্যমের সকল সুবিধা যেমন আমরা পাব তেমনি এর ক্ষতি থেকেও রক্ষা পাব।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিশোরদের ওপর স্মার্টফোনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পেতে ৪০ হাজারেরও বেশি শিশু-কিশোরদের ওপর গবেষণা চালান অধ্যাপক টুয়েঞ্জ ও তার সহকর্মী এবং ইউনির্ভাসটি অব জর্জিয়ার অধ্যাপক কেইথ ক্যাম্পবেল। এসব শিশু-কিশোরদের বয়স ২-১৭ বছরের মধ্যে। ২০১৬ সালে সারা দেশব্যাপী এসব শিশু-কিশোরদর ওপর জরিপ চালানো হয়।
এই নারী মনোবিজ্ঞানী বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১১ সালের পর থেকে শিশু-কিশোরদের আচরণগত ও মানসিক স্বাস্থ্যে হঠাৎ পরিবর্তন এসেছে। আচরণগত এসব পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে একাকিত্ব বোধ করা, অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা, কোনোকিছু সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে না পারা কিংবা তারা মনে করে যে, তারা তাদের সময়টা কাজে লাগাতে পারছে না। এই মনোবিজ্ঞানীর মতে, এগুলো সবই হতাশার উপসর্গ।