ক্যান্সার কোনো রোগ নয়, বলা যায় অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগের সমষ্টির নাম ক্যান্সার। এখন পর্যন্ত ক্যান্সার চিকিত্সার কার্যকর কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। এই কারণে ক্যান্সরে মৃত্যু হার অনেক বেশি। প্রাথমিক অবস্থায় সহজে ক্যান্সার ধরা পড়ে না, শেষ পর্যায়ে গিয়ে ক্যান্সার ধরা পড়ে বলে এর ভালো চিকিত্সা করানোটা জটিল আকার ধারণ করে। পৃথিবীতে দুইশর বেশি ক্যান্সার রয়েছে। ক্যান্সার নিয়ে বিজ্ঞানীরা প্রচুর গবেষণা করছেন। এমনই এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোষের চারপাশে চর্বি জমার কারণে যে স্থূলতা দেখা দেয় তার ফলে দেখা দিতে পারে ক্যান্সার। এ কারণে স্থূলকায় মানুষের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন কেন্দ্রিক ট্রিনিটি কলেজের একদল গবেষক জানিয়েছেন, শরীরের এক ধরনের কোষ ক্যান্সারের টিস্যুকে ধ্বংস করে থাকে। কিন্তু ক্যান্সার প্রতিরোধী এই কোষের চারপাশে চর্বি জমে গেলে তারা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এতে করে ক্যান্সারের ঝুঁকি দেখা দেয়।
যুক্তরাজ্যের ক্যান্সার গবেষণা সংস্থার তথ্য মতে, ধূমপানের কারণে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ক্যান্সার হয়। এরপর বেশি ক্যান্সার হয় স্থূলতার কারণে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে প্রতি বছর যুক্তরাজ্যে ২২ হাজার ৮০০টি ক্যান্সারের ঘটনা ঘটে। গড়ে ২০ জন ক্যান্সার রোগীর মধ্যে অন্তত একজনের ক্যান্সারের জন্য দায়ী অতিরিক্ত ওজন।
বিশেষজ্ঞরা দেখতে পেয়েছেন, এক ধরনের চর্বি ক্যান্সার প্রতিরোধী কোষগুলোকে ধ্বংস করতে থাকে এবং যে ধরনের কোষ ক্যান্সারের জন্য দায়ী তাদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। ট্রিনিটি’র বিজ্ঞানীরা ন্যাচার ইমিউনোলোজি জার্নালে দেখিয়েছেন,চর্বি কিভাবে শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধী কোষগুলোকে ঢেকে রেখে নিষ্ক্রিয় করে রাখে। একই সাথে তারা এমন ওষুধ আবিষ্কারের আশা করছেন যেটা চর্বির কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া কোষগুলোকে পুনরায় সক্রিয় করে তুলতে সক্ষম হবে।
অধ্যাপক লেডিয়া লিঞ্চ বলেন, আমরা এমন এক ধরনের ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা করছি, যেটা ক্যান্সার প্রতিরোধী কোষকে নিষ্ক্রিয় থেকে পুনরায় সক্রিয় করে তুলবে। আমরা ইতোমধ্যে ল্যাবরেটরিতে এ সংক্রান্ত চেষ্টা করে কিছুটা সফলতাও লাভ করেছি। তবে এই জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে না গিয়ে আগেভাগেই প্রত্যেকের সচেতন হওয়া উচিত। অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলাটাই সর্বোত্তম পন্থা।
যুক্তরাজ্যের বিটসন ইনস্টিটিউটের ক্যান্সার গবেষক ড. লিও কার্লিন বলেন, আগে থেকেই আমরা জানতে পেরেছি যে অন্তত ১৩ ধরনের ক্যান্সারের জন্য অতিরিক্ত ওজন সরাসরি দায়ী। কিন্তু কিভাবে সেটি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতো তা জানা ছিল না বিজ্ঞানীদের। এবার সেটি অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে। বিজ্ঞানীরা প্রত্যাশা করছেন, ক্যান্সার চিকিত্সার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখবে এই গবেষণার ফলাফল।