একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আজ রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে ড. কামাল হোসেন এ ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল বলেন, আমরা জনগণের ঐক্যের ওপর জোর দিচ্ছি। আমাদের ইতিহাসে দেখা গেছে, যখনই জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তারা বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। ইনশাআল্লাহ এবারও হবে। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হবে। সবচেয়ে বড় দাবি পরিবর্তন। সংবিধানের মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে এই ঐক্য গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এই ঐক্য। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানাতে আজ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সংবাদ সম্মেলনে জোটের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের সই করা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জোটের মুখপাত্র, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা জানান, নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রতীক কী হবে, তা পরে জানাবে। তবে আজ বৈঠকে বসবে ঐক্যফ্রন্ট। ওই বৈঠক থেকেই প্রতীক, নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম বিক্রিসহ সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হবে।
নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকলে কী করবেন— জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা আন্দোলন করব। প্রয়োজনে আমরা আইনের আশ্রয় নেব। দরকার হলে আদালতেও যাব।
কোনো প্রতিকার না পেলে নির্বাচন বর্জন করবেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখা যাক।
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণতন্ত্রের সংকট সমাধানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সবসময় আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতাকে গুরুত্ব দিয়েছে। সেই লক্ষ্যে এক্যফ্রন্ট সরকারকে চিঠি দিয়ে সংলাপে আহ্বান জানায়। সেই আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি দলের আমন্ত্রণে ১ ও ৭ নভেম্বর গণভবনে দুই দফা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুঃখজনকভাবে এই সংলাপে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বর্তমানের গভীর সংকট থেকে উত্তরণের পথে ন্যূনতম সমঝোতা করার মানসিকতা আমরা দেখতে পাইনি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে ৭ দফা দাবি আমরা সরকারের কাছে পেশ করেছিলাম, সেগুলোর প্রায় সবগুলোই তারা নাকচ করেছেন। এমনকি বর্তমান সংবিধান সংশোধন না করেও যে দাবিগুলো পূরণ করা যায়, তার প্রায় সবগুলোর ব্যাপারে তারা কোনো আশ্বাস তো দেনইনি, উপরন্তু সেগুলোর কয়েকটিকে সংবিধান বহির্ভূত বলেও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।
দুই দফা সংলাপে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিরোধীদের সভা-সমাবেশ করার ওপর থেকে সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া এবং গায়েবি মামলাসহ রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তি ও ভবিষ্যতে এ ধরনের মামলা না দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এই আশ্বাসের পর ঐক্যফ্রন্টের দুইটি জনসভা হয়েছে— একটি ঢাকায় ও একটি রাজশাহীতে। দুইটি জনসভারই লিখিত অনুমতি দিতে দেরি করে এবং সরকারি মদতপুষ্ট পরিবহন সংকট তৈরি করে মানুষের জনসভায় অংশগ্রহণের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। রাজশাহীতে জনসভা হওয়ার দু’দিন আগে থেকে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এমনকি রাজশাহীর সঙ্গে আশপাশের অনেক জেলার বাস যোগাযোগ বন্ধ ছিল।
এতে আরও বলা হয়, দুই দিনের জনসভাকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শত শত নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হয়রানিমূলক গ্রেফতার বন্ধের আশ্বাস দেওয়ার পর একদিনে ১২শরও বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যে দুইটি বিষয়ৈ সরকারপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন, সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যখন অবিশ্বাস্যরকম বৈপরীত্য দেখা যায়, তখন আমাদের এটা ধরে নিতেই হয়, সরকার আসলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ন্যূনতম সমঝোতা করার ক্ষেত্রে আন্তরিক ছিল না।
ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, সাত দফা দাবির বিস্তারিত বিচার-বিশ্লেষণের জন্য আরও আলোচনার প্রয়োজন ছিল। সে জন্য তারা আরও কয়েকটি সংলাপ চেয়েছিলেন এবং সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তফসিল না ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, তফসিল ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি দলের আনন্দ মিছিল প্রমাণ করে, নির্বাচন কমিশন প্রকৃতপক্ষে সরকারের চাহিদামতো তফসিল ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়, সরকারের যাবতীয় চেষ্টার উদ্দেশ্য হলো— জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনের বাইরে রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আদলে আরেকটি নির্বাচন করা।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তড়িঘড়ি করে একাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণা প্রমাণ করে সরকার সংলাপের পর কোনও সমঝোতায় যায়নি। কোনও শর্তই সরকার পালন করেনি। এই পরিস্থিতিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া অসম্ভব ব্যাপার। তার পরও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি নির্বাচনের তারিখ এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। ফখরুল বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন কমিশন ও সরকারের তৎপরতার প্রতি কড়া নজর রাখবে।জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একক কোনও প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে কিনা- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে ফখরুল ও কামাল জানান, এই সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাসদ সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ।
এর আগে শনিবার রাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের সভায় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে শেষে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা জানান, বৈঠকের সিদ্ধান্ত রোববার সংবাদ সম্মেলনে জানানো হবে।