দক্ষিণ জার্মানির কান্সটাট থেকে আন্টারতুরখেইমের দূরত্বটা মোটে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার। পল ডাইমলার (১৮৬৯-১৯৪৫) এই পথটুকুই গিয়েছিলেন বাবা গোত্তালিব ডাইমলারের উদ্ভাবিত মোটরবাইক চালিয়ে। গতিসীমা ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১ কিলোমিটার। ১৮৮৫ সালের ১০ নভেম্বরের ডাইমলারের সেই সংক্ষিপ্ত বাইক চালনাই ইতিহাসের প্রথম মোটরসাইকেল যাত্রা।
জার্মান উদ্ভাবক গোত্তালিব ডাইমলার (১৮৩৪-১৯০০) এবং প্রকৌশলী উইলহেম মেব্যাচ (১৮৪৬-১৯২৯) বহুদিন ধরেই চেষ্টা করছিলেন বাষ্পচালিত একটি বাহন তৈরির। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের সাফল্য হয়ে ধরা দেয় ১৮৮৫ সালের শেষ ভাগে। কাঠের ফ্রেমে ইঞ্জিন বসিয়ে চাকা জুড়ে দিয়ে তৈরি করেন বিশ্বের প্রথম মোটরসাইকেল। ইঞ্জিনের সঙ্গে ঘড়ির পেন্ডুলামের সাদৃশ্য থাকায় তাঁরা তাঁদের আবিষ্কারের নাম দিয়েছিলেন ‘গ্র্যান্ডফাদার্স ওল্ড ক্লক’ বা দাদার পুরোনো ঘড়ি। তবে মোটরসাইকেলের নাম কিন্তু শুরুতে মোটরসাইকেল ছিল না। প্রাথমিকভাবে এই যানের নাম রাখা হয়েছিল রেইতওয়াগেন। সেই মোটরবাইকই চালিয়েছিলেন যন্ত্রপ্রকৌশলী পল ডাইমলার। মোটরসাইকেল আবিষ্কারের ফলে পুরো পরিবহনব্যবস্থায় এক নতুন বিপ্লবের সূচনা হয়। ডাইমলারদের দেখাদেখি অন্য উদ্ভাবকেরাও মোটরসাইকেল তৈরিতে মনোনিবেশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তৈরি প্রথম মোটরসাইকেলটি বাজারে আসে ১৮৯৪ সালে। যার সর্বোচ্চ বেগ ছিল ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার। জার্মানদের হাত থেকে বাজারে এলেও কালের পরিক্রমায় মোটরসাইকেলের ব্যবসার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ চলে যায় জাপানের হাতে। বর্তমানে জাপানের সুজুকি, হোন্ডা, কাওয়াসাকি ও মিতসুবিশি—চারটি প্রতিষ্ঠানই মূলত বিশ্বের মোটরসাইকেল ব্যবসার একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।