জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায় উপলক্ষে আজ সোমবার আদালতে যাবেন না বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন বলেছেন, খালেদা জিয়া আজ আদালতে যাবেন না বলে তাঁদের জানিয়েছেন।
চিকিৎসার জন্য গত ৬ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আনা হয় খালেদা জিয়াকে। তিনি এরপর থেকে সেখানকার ভিআইপি কেবিনে চিকিৎসাধীন আছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। এরপর থেকে খালেদা জিয়া নাজিমুদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। সেখান থেকেই তাঁকে বিএসএমএমইউয়ে আনা হয়।
আজই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চলার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁর করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
আপিল বিভাগের এই আদেশের ফলে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতে আজ রায় ঘোষণার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান।
বিচারিক আদালতে এই মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজ দিন ধার্য রয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান গত ১৬ অক্টোবর রায় ঘোষণার এই দিন ধার্য করেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ আজ আদেশে বলেন, ‘ডিসমিসড (খারিজ করা হলো)।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আবেদনের ওপর গতকাল আপিল বিভাগে শুনানি শেষ হয়। পরে আজ (সোমবার) আদেশের জন্য দিন রেখেছিলেন আদালত।
সর্বোচ্চ আদালতের আজকের আদেশের পর দুদকের কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ হয়েছে। তাই এই মামলায় আজ বিচারিক আদালতে রায় হতে আইনগত বাধা নেই।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আবেদন খারিজ হওয়ায় এখন বিচারিক আদালত আজ রায় দেবেন কিনা, তা সেই আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয়।
পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে কি না—জানতে চাইলে জয়নুল আবেদীন বলেন, আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গতকাল রোববার বলেছিলেন, লিভ টু আপিল খারিজ হলে আজ (সোমবার) বিচারিক আদালতে এই মামলার রায় দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আজ রায় ঘোষণা করা হলে, এটি হবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় কোনো মামলার রায়।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, হত্যা, নাশকতা, রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিসহ মোট ৩৪টি মামলা রয়েছে।
রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ এজলাসে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারকাজ চলছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচারক তাঁকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। সেদিন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে ওই মামলার বিচার কার্যক্রম চলবে বলে বিচারিক আদালত আদেশ দেন। এর বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে ১৪ অক্টোবর হাইকোর্ট আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দেন। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া লিভ টু আপিল করেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার অপর তিন আসামি হলেন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং মনিরুল ইসলাম খান। তাঁদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী পলাতক।
৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। ওই সাজার রায়ের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। এই আপিল নিষ্পত্তিতে সময় বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে, যা গতকাল চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালতে ওঠে। আদালত আবেদনটি আজ আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন।