তফসিল ঘোষণার আগে সংলাপসহ ৭ দফা দাবি জানিয়ে শিগগিরই সরকারকে চিঠি দেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল বিকালে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের পর জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাব, তফসিল ঘোষণার আগে বৈঠক করার জন্য। তাতে বলা হবে আমরা যারা নির্বাচন করতে চাই তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে যেন তফসিল ঘোষণা না করা হয়। সে জন্য আমরা ৭ দফা দাবি সরকার ও সরকারি দলকে জানিয়ে চিঠি দিব। একইভাবে আমাদের দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনেও একটি প্রতিনিধি দল যাবে।
সরকার ও ক্ষমতাসীন দলকে চিঠি কবে দেবেন এমন প্রশ্নে রব বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্যাডে লিখিতভাবে ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করে আমাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে চিঠি যাবে। তবে কবে দেওয়া হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। যতটুকু সিদ্ধান্ত হয়েছে তা আমি আপনাদের বলেছি।
এ দিকে ২৪ অক্টোবর সিলেটে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ১৪টি শর্ত দিয়ে এ সভার অনুমতি দেওয়া হয়।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং ও সমন্বয় কমিটির নেতারা গতকাল বৈঠক করেন। রাজধানীর মতিঝিলে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ যৌথ বৈঠক শুরু হয়। বিকাল পাঁচটায় শুরু হওয়া বৈঠক চলে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী। সিলেট সফরের বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে।
বৈঠকের শুরুতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং ও সমন্বয় কমিটির নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। স্টিয়ারিং কমিটিতে বিএনপির পক্ষে রয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ; নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, শহীদুল্লাহ কায়সার, মমিনুল ইসলাম, ডা. জাহেদ উর রহমান; জেএসডির আ স ম আবদুর রব, মিসেস তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন ও শহিদুদ্দিন মাহমুদ স্বপন। এ ছাড়া রয়েছে গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর।
সমন্বয় কমিটিতে বিএনপির পক্ষ থেকে রয়েছেন বরকতউল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, মনিরুল হক চৌধুরী ও হাবিবুর রহমান হাবিব; নাগরিক ঐক্যের পক্ষে শহীদুল্লাহ কায়সার, মমিনুল ইসলাম ও ডা. জাহেদ উর রহমান, জেএসডির পক্ষে মিসেস তানিয়া রব, আব্দুল মালেক রতন ও শহিদুদ্দিন মাহমুদ স্বপন; জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় আ ও ম শফিকুল্লাহ, জগলুল হায়দার আফ্রিক ও মোস্তাক আহমেদ। বৈঠকে গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও ছিলেন। গণফোরামের কার্যালয়ে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু।
সংবাদ সম্মেলনে আ স ম আবদুর রব বলেন, গতকাল সকালে চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে সিলেটের জনসভার আগেই তার মুক্তি দাবি করছি। তিনি জানান, আগামী ২৪ অক্টোবর সিলেটের রেজিস্ট্রি মাঠে জাতীয় যুক্তফ্রন্টের উদ্যোগে জনসভা হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন যুক্তফ্রন্টের শীর্ষ নেতা সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেন ও প্রধানবক্তা থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
রব বলেন, আমরা বলেছি আমরা যে কোনো উপায়ে সিলেটে যাবই। আমাদের যাওয়ার ঘোষণাটায় সরকার বুঝেছে বাধা দিলে বাধবে লড়াই। এ লড়াইয়ে জিততে হবে। আমরা কোনো চাপের কাছে, স্বৈরাচারী আচরণের কাছে মাথানত করব না। এটা বুঝতে পেরে সরকার সিলেটের জনসভার অনুমতি দিয়েছে। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ার জন্য। আমি আশা করি, আগামী ২৭ তারিখে চট্টগ্রামের জনসভারও অনুমতি দেবে। রাজশাহীর জনসভার তারিখ ৩০ অক্টোবর থেকে পিছিয়ে ২ নভেম্বর করা হয়েছে। তিনি জানান, সুশীল সমাজ-বুদ্ধিজীবী-পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে ২৬ অক্টোবর বিকাল তিনটায় হোটেল পূর্বাণীতে। এ ছাড়া শিক্ষকদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবে ঐক্যফ্রন্ট। যার সময়সূচি নির্ধারণ হয়নি।
১৪ শর্ত সিলেটের সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রবিরোধী, আইনশৃঙ্খলা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয় এমন কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্ল্যাকার্ড বহন না করা, মাইক বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার করে কারও অসুবিধার সৃষ্টি না করা এবং সমাবেশস্থলে নিজস্ব নারী-পুরুষ স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগের শর্ত। এর আগে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন দুই দফা ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। প্রথমে ২৩ অক্টোবর সিলেট রেজিস্ট্রি মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি চায় ঐক্যফ্রন্ট। ওইদিন অনুমতি না পেয়ে পরদিন একইস্থানে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়। সে আবেদন ঝুলিয়ে রাখে পুলিশ।
এ অবস্থায় রবিবার দুপুরে হাইকোর্টে রিট করেন বিএনপি নেতা আলী আহমদ। সোমবার এ রিটের শুনানির তারিখ ধার্য করেন আদালত। তবে তার আগেই পুলিশ সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার কথা জানায়।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী এ জোট ২৪ অক্টোবরের সিলেট সফরের মধ্য দিয়েই তাদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করবে।