২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:৩৭

সংসদের শেষ অধিবেশনের পর নির্বাচনী প্রক্রিয়া: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই দেশে উন্নয়ন দৃশ্যমান। দেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে এবং উন্নয়ন চাইলে জনগণ ফের নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। আর যদি নাও দেয়, আমার কোনো আপসোস নেই। কেননা বাংলাদেশের উন্নয়নের যে ধারাটা আমরা শুরু করেছি, আমি চাই সে ধারাটা যেন অব্যাহত থাকে। আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে জনগণের সেবা করার সুযোগ দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। গতকাল শনিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সংসদের শেষ অধিবেশন শুরু হচ্ছে। এ অধিবেশন শেষ হওয়ার পরই নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরির যে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি, এই একটি সিদ্ধান্ত সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে। অবশ্য পদ্মা সেতুর কারণে আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের অনেক অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। তবুও মাথা নত করিনি। কারণ বাবার কাছে শিখেছি অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করতে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এমডি এবং একজন সম্পাদক অপপ্রচার চালিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করেছিল। যারা আমাদের পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করেছিল, তারাতো আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সাপোর্ট করে নাই। তাদের বাদ দিয়ে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, উনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) আমেরিকাতে আগে থেকেই লবিং করতেছিল। হিলারি ক্লিনটন নিজে আমাকে টেলিফোন করলেন, ওনাকে এমডি পদে রাখতে হবে। আমি বললাম, ওনাকে এমডি পদে কেন, ওনাকে আমরা আরও উচ্চ পদে রাখতে চেয়েছিলাম। সেটা গ্রহণ করেননি। আমার সঙ্গে কথা হলে তার একই কথা। টনি ব্লেয়ার তখন প্রধানমন্ত্রী, তিনি আমাকে বললেন, আমি একই উত্তর দিলাম। এটা কোর্টের ব্যাপার, আইনের ব্যাপার। এরপর আমাদের দেশেরই একজন সম্পাদক খুব ভালো ইংরেজি বলেন, তিনিও তার সঙ্গে দোসর হলেন। আমেরিকাও চলে গেলেন, হিলারির কাছে বহু মেইল পাঠানো হলো। তারই প্রচারণায় হিলারি ক্লিনটন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে নির্দেশই দিল যে, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে।

শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের সোনার ছেলে-মেয়ে তৈরির দায়িত্ব আপনাদের। সোনার সন্তান তৈরি করে দেশকে এগিয়ে দেবেন। এ দেশ যেন আর থেমে না যায়। দেশে উন্নয়নের বর্তমান ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার স্বার্থে আগামী নির্বাচনে জয়লাভের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। শিক্ষকদের সকল দাবি-দাওয়া মেনে নিয়েছি। শিক্ষকরা কীভাবে ভালো থাকবেন তাদের সে সুযোগ-সুবিধা করে দিয়েছি। তিনি বলেন, এখন যারা শিক্ষক, অনেকে বয়সে আমার চেয়ে অনেক ছোট। আপনাদের হাতে দেশের ভবিষ্যত্। আবার মুরব্বিরাও আছেন। আপনাদের বলব আপনাদের হাতে দেশের ভবিষ্যত্। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণা কার্যক্রমে আরও গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা গবেষণায় গুরুত্ব দিয়েছি বলেই ধান উত্পাদন, শাকসবজি উত্পাদন, মাছ উত্পাদন, ফলমূল উত্পাদনে উন্নত বিশ্বের কাতারে রয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যাতে ঠেকে না থাকে সে কারণে প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষায়ও আমরা বৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। তিনি বলেন, আমরাই প্রথম বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা শুরু করি। আমরা এর সুফলও দ্রুত পেয়েছি। লবণাক্ত, জলমগ্ন, খরা সহ্য করতে পারে এমন ধান আবিষ্কার করার ফলেই আজ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আরও বেশি করে গবেষণার তাগিদ দেন। শিক্ষকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ এবং গবেষণার ব্যাপারে সরকার যত্নশীল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবারও ক্ষমতায় এলে তাদের অন্য দাবিগুলোও পূরণ করবে সরকার।

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস মুক্ত করতে হবে। এটা করা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এখানে শিক্ষক, অভিভাবক সকলে মিলে সমাজের দায়িত্ব নিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। আমরা বাংলাদেশকে সেভাবে গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশে যে উন্নয়নের ধারাটা আমরা শুরু করেছি আমি চাই সেই ধারাটা যেন অব্যাহত থাকে। নির্বাচনে সকলে ভোট চায়, আমরাও ভোট চাই। যাতে করে উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি এএসএম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম।

সৌদি সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরবে ৪ দিনের সরকারি সফর শেষে শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে দেশে ফিরেছেন। সৌদি বাদশাহ এবং দু’টি পবিত্র মসজিদের খাদেম সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদের আমন্ত্রণে তিনি এ সফরে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ভিভিআইপি ফ্লাইটটি রাত ১টা ২৫ মিনিটে এখানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করেন।

সৌদি আরব সফরকালে প্রধানমন্ত্রী রিয়াদে রাজপ্রাসাদে সৌদি বাদশাহর সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন এবং তাঁর সম্মানে বাদশাহর দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। তিনি সৌদি যুবরাজ, উপ-প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী কাউন্সিল অব সৌদি চেম্বার এবং রিয়াদ চেম্বার অব কমার্সের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর ঢাকা এবং রিয়াদের মধ্যে শিল্প ও বিদ্যুত্খাতে সহযোগিতার ব্যাপারে ৫টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

প্রকাশ :অক্টোবর ২১, ২০১৮ ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ