ভুয়া খবর ছড়ানো আর নির্বাচনের মতো বিষয়গুলোতে যাতে দুর্বৃত্তরা প্রভাব ফেলতে না পারে, এ জন্য ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করতে যাচ্ছে ফেসবুক। চালু করছে ‘ওয়ার রুম’। ফেসবুকের বিরুদ্ধে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ঠেকাতে ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফেসবুকের প্রভাব নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে।
নির্বাচন ঘিরে যাতে ফেসবুক ব্যবহার করে ভুয়া খবর ছড়াতে না পারে, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্বাচনে ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপ যাতে না পড়ে, এর ব্যবস্থা হিসেবে ‘ওয়ার রুম’ চালু করেছে তারা। এখানে ২০ সদস্যর একটি দল কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে ফেসবুকে সন্দেহভাজন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় মেনলো পার্কে ফেসবুকের প্রধান কার্যালয়ে ওই বিশেষ ইউনিট চালু করেছে ফেসবুক। এ দলটি ফেসবুকে ভুয়া তথ্য ছড়ানো ও বিদেশ থেকে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার মতো বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করবে।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেসবুকের ওই ওয়ার রুমের মধ্যে ঘড়িতে বিভিন্ন এলাকার সময়, ম্যাপ দেখানোর পাশাপাশি বিভিন্ন টিভি চ্যানেল দেখাচ্ছে। কিছু মনিটরে রিয়েল টাইমে ফেসবুক কার্যক্রমের গ্রাফ দেখাচ্ছে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে ফেসবুক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এবার বিশ্বকে ফেসবুক তাদের কঠোর পদক্ষেপের বিষয়টি দেখাতে ওয়ার রুম চালু করেছে।
ফেসবুকের সাইবার নিরাপত্তা নীতিমালার প্রধান নাথানিয়েল গ্লেইসার বলেছেন, আমাদের কাজ হচ্ছে রাজনৈতিক বিতর্কগুলো যাতে কেউ প্রভাবিত করতে না পারে, সে বিষয়টি শনাক্ত করা। যারা এ কাজ করবে, তাদের বের করে ব্যবস্থা নেওয়া।
ফেসবুকের এ ওয়ার রুমে বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্ট টুল কাজ করবে।
ফেসবুকে ভুয়া খবর ও তথ্য ছড়ানো ঠেকাতে যে ২০ হাজার কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাকারবার্গ, এ টিমটি তারই অংশ। এর সঙ্গে ফেসবুকের ফ্যাক্ট চেকিং সহযোগীরাও যুক্ত হবেন।
গ্লেইসার বলেছেন, ভুয়া খবর বা নির্বাচনে প্রভাব ফেলাসংক্রান্ত যেকোনো ধরনের প্রচেষ্টার খোঁজ পেতে এই দল সতর্ক থাকবে। এতে ভুয়া খবর দ্রুত ছড়িয়ে নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারবে না।
ফেসবুকের কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্বৃত্তদের চেয়ে আমাদের এগিয়ে থাকতে হবে। তারা দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে চাইবে। আমাদের সে দরজা বন্ধ করতে হবে।
ফেসবুক প্রাইভেসি সুরক্ষা ও ভুয়া খবর ছড়ানোসহ নানা বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের ওপর চাপ বাড়ছে। তাঁর অপসারণ চাইছেন অনেকেই।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, একের পর এক তথ্য ফাঁসের কেলেঙ্কারির পর ফেসবুকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে মার্ক জাকারবার্গকে সরে দাঁড়াতে বলছেন কয়েকজন বিনিয়োগকারী। তাঁরা চেয়ারম্যান পদে এমন কাউকে চাচ্ছেন, যিনি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নন।
অবশ্য বিনিয়োগকারীদের এই জোটের প্রস্তাব বাস্তবায়নের সম্ভাবনা খুব কম। কারণ, ফেসবুকের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে আগে থেকেই ব্যবস্থা করে রেখেছেন মার্ক জাকারবার্গ। যেকোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার ক্ষমতা তাঁর হাতেই। কারণ, সবচেয়ে বেশি ভোট তাঁরই নিয়ন্ত্রণে।
বিনিয়োগকারীরা এর আগেও চেয়ারম্যানের পদ থেকে জাকারবার্গকে হটাতে চেয়েছেন। সফল হননি, বলাই বাহুল্য। নতুন কেউ পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হলে ফেসবুকে জাকারবার্গের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যাবে। সূত্র: সিএনএন