গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা। ‘অসত্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল’ অভিযোগ এনে গত শুক্রবার রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় ওই জিডি করেন সেনাসদরে কর্তব্যরত মেজর এম রকিবুল আলম। এদিকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় ডা. জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে যে জিডি করা হয়েছিল, তা রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ বলে আমলে নিয়ে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জিডিতে বলা হয়েছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়ের আগের রাতে হঠাৎ অপ্রাসঙ্গিকভাবে সেনাপ্রধান সম্পর্কে প্রদত্ত বক্তব্যটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বিদ্বেষপ্রসূত ও ষড়যন্ত্রমূলক, যা সেনাবাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি তথা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি কেন, কী উদ্দেশ্যে এবং কাদের প্ররোচনায় এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক, বানোয়াট ও অসত্য বক্তব্য টকশোতে বলেছেন, তা তদন্তের দাবি রাখে। এর আগে ২০ আগস্ট রাতে সময় টেলিভিশনের টকশো অনুষ্ঠানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ যখন ‘চট্টগ্রামের জিওসি’ ছিলেন, সেখান থেকে ‘সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ চুরি’
যাওয়ার ঘটনায় তার ‘কোর্ট মার্শাল’ হয়েছিল।
গণমাধ্যমে এ তথ্য উপস্থাপনের পর সেনাসদরের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে একটি প্রতিবাদ পাঠানো হয়। প্রতিবাদে বলা হয়, জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকরিজীবনে কখনই চট্টগ্রামের জিওসি বা কমান্ড্যান্ট ছিলেন না। ওই সময় চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা সেনানিবাসে কোনো সমরাস্ত্র বা গোলাবারুদ চুরি বা হারানোর ঘটনা ঘটেনি। জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকরিজীবনে কখনো কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি হননি। জাফরুল্লাহর বক্তব্য সেনাবাহিনীপ্রধানসহ সেনাবাহিনীর মতো রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে জনসম্মুখে হেয় করার হীন অপচেষ্টা বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবাদলিপিতে। সেনাসদরের প্রতিবাদের পর গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার বক্তব্যে ও শব্দ চয়নে ভুল ছিল জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।
‘পুনরায় মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন জাফরুল্লাহ’ : গতকাল সোমবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে আরেকটি প্রতিবাদ পাঠানো হয়। আইএসপিআরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলমগীর কবিরের স্বাক্ষরিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, জাফরুল্লাহ শব্দ চয়নে ভুল করে কোর্ট অব ইনকোয়ারির স্থলে কোর্ট মার্শাল বলেছেন, তার এ তথ্যটিও সঠিক নয়। ব্যক্তি আজিজের বিরুদ্ধে কখনো কোর্ট মার্শাল তো হয়ইনি, বরং জেনারেল আজিজের সুদীর্ঘ বর্ণাঢ্য চাকরিজীবনে কোনো কোর্ট অব ইনকোয়ারিও হয়নি। বস্তুতপক্ষে জাফরুল্লাহর তথ্যটি চরম মিথ্যাচারের শামিল।
এর আগে সময় টিভিতে ভুল, দায়িত্বহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্যের জন্য ভুল স্বীকার ও দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়ে পুনরায় অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে জেনারেল আজিজ আহমেদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। এ ছাড়া টেলিভিশন আলোচনায় জাফরুল্লাহ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেডের উৎস হিসেবে ‘সুকৌশলে’ সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার একটি চেষ্টা করেছিলেন, যা ছিল ‘দুরভিসন্ধিমূলক’। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অসত্য বক্তব্যকে সংশোধন করার কোনো চেষ্টা করেননি। তার সামগ্রিক বক্তব্যে এটা স্পষ্ট, তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত সব পদবির সদস্যদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টার পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে সেনাবাহিনীপ্রধানের ভাবমূর্তি এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন।
জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে জায়গা দখল ও ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা : অন্যদিকে ডা. জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে জায়গা দখল ও ভাঙচুরের অভিযোগে আশুলিয়া থানায় মামলা করেছেন মোহাম্মদ আলী নামে এক ব্যক্তি।
গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোবাইল ফোনে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জিয়াউল হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের সময়কে জানান, রাত ১২টার দিকে মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উল্টো দিকের একটি জায়গা দখলে নিতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ এনেছেন তিনি।