আমাদের কফি উৎসব শুরু হলে বাড়িতে পথচারীদের নিমন্ত্রণ করি। আমরা তাদের বলি, ‘কফি একদম প্রস্তুত। দয়া করে আসুন এবং আমাদের সাথে পান করুন’। যখন কফি বানানো হয় তখন গোটা বাড়ি সুগন্ধে ভরে যায়। এতে মেহমানরা শান্তি পান। তাদের ক্লান্তি আর ঘুম ঘুম ভাব চলে যায়। কফি উৎসব ইথিওপিয়ানদের সংস্কৃতির এক ঝলমলে অংশ।
কফির কৃষিতে জড়িয়ে আছেন আনাজ হাইলে এবং আসাইয়েচ গেব্রিমারিয়াম। এই দুই নারী কফির প্রস্তুতিপর্ব সারছেন এবং এ নিয়ে কথা বলছেন। একজন বলছেন, আমি তিনটি পাথর দিয়ে বানানো চুলায় কফি ভাজতে থাকি। পরে এগুলো এনে মেহমানদের সামনে দেই। তারা সুগন্ধ নেন। ইথিওপিয়ান সংস্কৃতিতে এককাপ ভালো কফি বানানো গর্বের বিষয়।
তারা বলেন, সাত বছর বয়স থেকে আমরা কফি বানাই। তবে কফি ভাজার ক্ষেত্রে আমরা এখনো সুদক্ষ হতে পারিনি। উৎসবের সময় কফি গুঁড়া করা, এগুলো ধোয়া এবং বাড়িঘর পরিষ্কার করা জরুরি কাজ। সাধরণত দিনে তিন বার কফি খাওয়ার আয়োজন করা হয়।
‘বুনা দাবো নাউ’ বলে একটা কথা আছে আমাদের সমাজে। এর অর্থ ‘কফি আমাদের রুটি’। আমরা পূর্বপুরুষদের কাছে শিখেছি, যেকোনো খাবার আসার আগে কফি আসা চাই। কফি প্রথমে আসতে হবে। এই কফি দেয়া হয় বাঁশের তৈরি কাপে।
এই কফি উৎসব সামাজিক জীবনের অনেক গভীরে প্রবেশ করেছে। সঙ্গে থাকে রুটি। এগুলো ছিড়ে এবং পুড়িয়ে দেয়া হয়। এই সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে নানা বিষয়ে আলোচনা চলে। চাকরি নিয়ে কথা চলে। প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করা হয় একসঙ্গে কিছু করার পরিকল্পনা হাতে নেয়ার জন্যে। আবার অনেক গসিপও চলে। অন্যদের জীবনযাপন নিয়ে সমালোচনাও চলে।
প্রত্যেক ঘর থেকেই কফি উৎসব পালন করা হয়। একে একে সবাইকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ায়। কফি সবার জন্যে। কফি খাওয়ানোর মাধ্যমে আমরা অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি।
তাদের এই কফি উৎসব সবচেয়ে প্রাচীন। তারা সবচেয়ে প্রাচীন পদ্ধতিতেই কফি তৈরি যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করেন।