২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:০০

যে ম্যাচ দেখার অপেক্ষায় সবাই

আজ রাত ৯টা ৩০ মিনিটে মুখোমুখি হবে লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার সিটি। এ ম্যাচকে অবশ্য ক্লপ ও গার্দিওলার ম্যাচ বলাই ভালো। আক্রমণের উল্টো পাশে রক্ষণ নয়, আক্রমণই
ইয়ুর্গেন ক্লপের সঙ্গে মাশরাফি বিন মুর্তজার কখনো দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে বলে শোনা যায়নি। কিন্তু ভিন্ন দুটি খেলার দুই জগতের মানুষের কথার ধরনে কী আশ্চর্য মিল!
ক্রিকেটারদের নিয়ে সদা উচ্চকিত এ দেশের মানুষকে সব সময়ই অন্য পেশার মানুষের সাফল্য বা বীরত্বগাথা মনে করিয়ে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। আজ ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে পরশু ক্লপের মুখেও প্রায় একই সুর। ম্যাচটা নিয়ে বলতে বলতে হঠাৎ লিভারপুল কোচ বললেন, ‘আরেকবার বলি, ফুটবলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ মানুষকে বিনোদন দেওয়া। এটা শুধু ফুটবলই তো, আমরা কারও জীবন বাঁচাই না, কোনো কিছু তৈরি করি না, সার্জারি করি না, আমরা শুধু ফুটবলেই ভালো। আর আমরাই যদি মানুষকে বিনোদন না দিতে পারি, তাহলে আর খেলা কেন?’

‘বিনোদন’ শব্দটিই হয়তো আজ অ্যানফিল্ডের ম্যাচটির রিংটোন। সুরহীন আবহসংগীত। স্প্যানিশ লিগে আজ রাতেই ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে খেলবে বার্সেলোনা, সৌন্দর্যের আকর্ষণ সেখানেও থাকবে। কিন্তু সেয়ানে-সেয়ানে লড়াই বলতে হবে অ্যানফিল্ডের ম্যাচটিকেই।

ফুটবলের সৌন্দর্য তো আর বীজগণিতের সূত্র দিয়ে প্রমাণ করার ব্যাপার নয়। পছন্দ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন। তবে এ মুহূর্তে প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফুটবল খেলে বলে যে তিনটি দল সর্বজনে সমাদর পাচ্ছে, তার দুটিই আজ মুখোমুখি, অন্য দলটি চেলসি। ডাগআউটে দুই কোচ পেপ গার্দিওলা ও ইয়ুর্গেন ক্লপের কৌশলে আক্রমণের কোনো বিকল্প শব্দ নেই। গার্দিওলার সিটির আক্রমণ যদি হয় বল দখলে রেখে, ক্লপের লিভারপুলের ‘জেজেনপ্রেসিং’ কৌশলের মূল ভিত্তি প্রতিপক্ষের পা থেকে বল দ্রুত কেড়ে নেওয়া। সিটির ফুটবলে থাকে পাসের পসরা, লিভারপুলের গতির ঝড়। তার ওপর প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দলের লড়াই। ৭ ম্যাচ শেষে দুই দলেরই পয়েন্ট ১৯, গোল ব্যবধানে এগিয়ে সিটি। এই সপ্তাহের পরই আবার আন্তর্জাতিক বিরতি, তার আগে প্রতিপক্ষকে একটু পেছনে ফেলতে কোন দল না চাইবে!

দুই দলের সাম্প্রতিক ও দূর অতীতও আকর্ষণ জাগায়। সিটির জন্য অ্যানফিল্ড ১৫ বছর ধরেই দুঃস্বপ্নের অন্য নাম। সেই ২০০৩ সালে অ্যানফিল্ডে জয়ের পর ১৭ সাক্ষাতে ১২ বারই হেরেছে সেটি, জয় নেই একটিও। ১৯৮১ সালের পর থেকেই জয় ওই একটি, ১৯৫৬ সালের পর দুটি।
অতি পুরোনো রেকর্ড একপাশে রাখতে চাইলেও উঁকি দেবে দুই দলের সাম্প্রতিক অতীত। গত মৌসুমে লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে দুই দলের চার ম্যাচ যে ফুটবলের সৌন্দর্যের পাশাপাশি জাগিয়ে তুলেছে নতুন একটা দ্বৈরথও। লিগে ১-১ সমতা থাকলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে দুই ম্যাচেই জিতেছে লিভারপুল। যদিও সেটি মাথায় আনছেন না ক্লপ, ‘আমার মনে হয় না ওই তিন জয়ের কোনোটির পরই আমরা ড্রেসিংরুমে গিয়ে ভেবেছি, “এখন আমরা জানি কীভাবে ম্যানচেস্টার সিটিকে হারাতে হয়।” গার্দিওলাকেও পরশু সংবাদ সম্মেলনে ওই তিন হারের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রশ্ন হলো, ‘…অনেকেই বলছে লিভারপুল নাকি সিটিকে হারানোর টোটকা পেয়ে গেছে!’শ্লেষের সঙ্গে সিটি কোচ উত্তর দিয়েছেন, ‘ভালো তো। অভিনন্দন, তাঁরা ঠিকই বলছেন। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগ আমরা জিতেছি।’

দুই দলের মধ্যেই আবার পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধটা আছে। মানে-ফিরমিনো-সালাহকে নিয়ে গড়া লিভারপুলের আক্রমণত্রয়ী নিয়ে গার্দিওলার ‘ভয়ের’ কথা তো আগস্টে প্রকাশিত সিটির অল অর নাথিং প্রামাণ্যচিত্রেই জানা গেছে। ক্লপও সিটিকে নিয়ে বলেছেন, ‘সিটির মানের সঙ্গে টক্কর দিতে যদি ১১০ ভাগ সম্ভব না-ও হয়, আমাদের শতভাগই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
বিতর্কও আছে ম্যাচের আগে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে অ্যানফিল্ডে সর্বশেষবার ঢোকার সময় সিটির বাসে বোতল-ক্যান ছুড়ে মেরেছিলেন লিভারপুল সমর্থকেরা। গার্দিওলা সে জন্য লিভারপুলকে দায়ী করে বলেছেন, ‘আমাদের বাসের নিরাপত্তার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো লিভারপুল সমর্থকদের (আগেই) স্টেডিয়ামে ঢুকে যাওয়া।’ সিটি বাসে হাই-ডেফিনিশন ক্যামেরাও লাগিয়েছে, যাতে কেউ কিছু ছুড়লে তাঁকে পাকড়াও করা যায়।

এবার সবাই চান উত্তেজনা-আক্রমণ সব মাঠে ফুটবল পায়েই হোক। সেটিই তো এই ম্যাচের মূল আকর্ষণ।

প্রকাশ :অক্টোবর ৭, ২০১৮ ৬:৩২ অপরাহ্ণ