অর্থনীতি ডেস্ক:
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাটের তৈরি ব্রিফকেস হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম
বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের সোনালি দিন আবার ফিরে আসছে। দেশীয় বাজারের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে এর ব্যবহার বাড়ছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে স্থানীয়ভাবেও এর ব্যবহার বাড়ছে। এ জন্য সরকার ৬ মার্চকে জাতীয় পাট দিবসও ঘোষণা করে। এবার রাষ্ট্রীয়ভাবে এর ব্যবহার বাড়াতে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকেও কালো চামড়ার ব্রিফকেসের পরিবর্তে ব্যবহার করা হবে পাটের তৈরি সোনালি ব্রিফকেস। এ জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় গত ২৬ সেপ্টেম্বর ৭০টি ব্রিফকেস মন্ত্রিপরিষদের কাছে হস্তান্তর করেছে।
গতকাল রবিবার বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, পাটের সোনালি অতীতকে তুলে ধরতে মন্ত্রণালয় থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।
পাটের ব্যাগ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পাটপণ্যের বহুমুখীকরণে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) করা হয়েছে। এতে ২৩৫ প্রকারের পাটপণ্যের স্থায়ী প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র করা হয়। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট দিয়ে ‘সোনালি ব্যাগ’ উৎপাদনের লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। এ ছাড়া পাট থেকে পানীয় উৎপাদন, কম্পোজিট টেক্সটাইল ও জুট গার্মেন্ট স্থাপন করা হচ্ছে। তিনি জানান, পাটপাতা থেকে মহামূল্যবান ভিসকস উৎপাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন (বিজেএমসি) একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী বলেন, আবারও সোনালি আঁশের দেশ হিসেবে রূপান্তর করে পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে বর্তমান সরকার। এ জন্য ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ সুষ্ঠুভাবে শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য সতর্ক মনিটর করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাটের তৈরি ব্রিফকেস হস্তান্তর করে মির্জা আজম এসব কথা বলেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের হাতে এ ব্রিফকেসগুলো হস্তান্তর করা হয়। এ সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব রীনা পারভীন উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববাজারে পাটের বিপুল সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন পাটপণ্য উৎপাদনকারী সমিতির আহ্বায়ক ও ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ইউরোপের ২৫টি দেশসহ কোরিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়ার বাজারে বাংলাদেশের পাটের ব্যাগের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সম্ভাবনাময় আন্তর্জাতিক শপিং ব্যাগের বাজারে পাটজাত শপিং ব্যাগ রপ্তানির ক্ষেত্রে বিপুল সুযোগ রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
মুন্না আরো বলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবেশী দেশগুলো পাট নিয়ে উন্নতমানের সুতা ও ফ্যাব্রিকস তৈরি করে। অথচ নানা প্রতিকূলতার কারণে বাংলাদেশে তেমন শিল্প গড়ে উঠছে না। আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সময়োপযোগী পরিকল্পনা করা গেলে আগামী পাঁচ বছরে বিভিন্ন দেশে পাটের রপ্তানি কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে (২০১৭-১৮) পাট ও পাটজাত পণ্যে রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১০২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। এই আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে ৬.৫৫ শতাংশ বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৯৬ কোটি ২৪ লাখ ডলার।