স্বাস্থ্য ডেস্ক:
ব্লাডপ্রেসার, স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় পালংশাক! এই শাকের রসে নানাবিধ উপাকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পরই কাজ করা শুরু করে দেয়। মস্তিষ্ক থেকে হার্ট হয়ে শরীরের ছোট-বড় সব অঙ্গেরই ক্ষমতা বাড়ায় পালংশাক।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, পালংশাকের রসে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, পেশির ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং হৃদরোগের মতো মরণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকাও কমে যায়। খবর বোল্ডস্কাইয়ের।
তবে এখানেই শেষ নয়, প্রতিদিনের খাবারে পালংশাক রাখলে মেদ গলে শরীরের ওজন কমে যাবে। আসুন এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিই;
ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে: একাধিক স্টাডিতে প্রমাণিত হয়েছে, নিয়মিত ১০০ গ্রাম করে সিদ্ধ পালংশাক অথবা এক গ্লাস পলংয়ের রস খাওয়া শুরু করলে শরীরে ডায়াটারি ফাইবারের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে বহুক্ষণ পেটভরা থাকে। আর এমনটা হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই বারে বারে খাওয়ার প্রবণতা কমে। আর কম পরিমাণে খাওয়ার কারণে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এছাড়া এর রস পেটের চর্বি গলিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
ত্বক রক্ষা করে: পালংশাকের অন্দরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, যা অতি বেগুনি রশ্মির থেকে ত্বককে রক্ষা করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বক পুড়ে যাওয়ার আশংকা যেমন কমে, তেমনি স্কিন ক্যান্সারের মতো রোগ দূরে থাকতেও বাধ্য হয়। এছাড়া পালংশাক ও পানি একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে মুখে লাগাতে পারেন। এতে ত্বক আরও মসৃণ হবে।
ক্যান্সার থেকে বাঁচায়: পালংশাকে উপস্থিত ফ্লেবোনয়েড শরীরে প্রবেশ করে ক্যান্সার জন্ম নেয়ার আশংকা কমিয়ে দেয়। ফলে এই মারণ রোগটি ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়: এই শাকটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন, লুটেইন এবং জ্যান্থিন, যা রেটিনার ক্ষমতা বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এই শাকটিতে উপস্থিত ভিটামিন এ আই আলসার এবং ড্রাই-আইয়ের মতো সমস্যা কমায়
চুল পড়া কমে: পালংশাকের আয়রন, চুল পড়া কমানোর পাশাপাশি লোহিত রক্ত কণিকার ঘাটতি দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে পালংশাক রস বানিয়ে ভালো করে চুলে লাগিয়ে কিছু সময় রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
স্মৃতিশক্তি বাড়ে: পটাশিয়াম, ফলেট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই শাকটি যদি প্রতিদিন খাওয়া যায়, তাহলে স্মৃতিশক্তি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে পটাশিয়াম মনোযোগ ক্ষমতারও উন্নতি ঘটায়।
ত্বক ফর্সা করে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, পালংশাকে উপস্থিত ভিটামিন কে এবং ফলেট ত্বককে ফর্সা করে তোলার পাশাপাশি ডার্ক সার্কেলকে দূর করে উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এক্ষেত্রে পালংশাক দিয়ে বানানো পেস্ট মুখে লাগাতে পারেন। এছাড়া পালং শাকের রস খেলেও সমান উপকার পাওয়া যায়।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে: পলংশাকে রয়েছে বিপুল পরিমাণে পটাশিয়াম। এই খনিজটি শরীরে প্রবেশ করা মাত্র সোডিয়াম বা নুনের হারিয়ে যাওয়া ভারসাম্য ফিরে আসে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশংকা হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, পালংশাকে থাকা ফলেটও ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
পেশির ক্ষমতা বাড়ে: জার্নাল অব কার্ডিওভাসকুলার নার্সিং- এ প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে, পালংশাকের অন্দরে লুকিয়ে থাকা নানা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, হার্টের পেশির কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এর পাশাপাশি সারা শরীরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অন্যান্য পেশির শক্তিশালী করে। এতে হাইপারলিপিডেমিয়া, হার্টফেলিওর এবং করোনারি হার্ট ডিজিজের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা কমে।
হজম ক্ষমতা বাড়ায়: অ্যামাইনো অ্যাসিড হল এমন একটি উপাদান, যা মেটাবলিজম রেট বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। আর এই অ্যামাইনো অ্যাসিড প্রচুর মাত্রায় রয়েছে পালংশাকে।
ত্বকের অন্দরে প্রদাহ কমায়: পালংশাকের অন্দরে রয়েছে নিয়োক্সেথিন এবং ভায়োল্যাক্সানথিন নামক দুটি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা দেহের পাশাপাশি ত্বকের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর ত্বকের ভিতরে প্রদাহের মাত্রা কমলে নানাবিধ স্কিন ডিজিজ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশংকাও হ্রাস পায়।
স্ট্রোকের আশংকা কমে: লুটেইন নামে একটি বিশেষ উপাদানের সন্ধান পাওয়া গেছে পালংশাকে। এই উপাদানটি ব্লাড ভেসেলের অন্দরে কোলেস্টেরল জমার হার কমিয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকবাবেই স্ট্রোক, অ্যাথেরোস্কেলোসিস এবং হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশংকা কমে।
ব্রণের প্রকোপ কমে: পালংশাক নিয়ে তার সঙ্গে অল্প পরিমাণে পানি মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করুণ। এরপর সেই পেস্টটা ভালো করে মুখে লাগিয়ে কম করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। সময় হয়ে গেলে মুখটা ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে প্রতিদিন ত্বকের পরিচর্যা করলে ত্বকের অন্দরে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদান বেরিয়ে যাবে।