ক্রীড়া ডেস্ক:
শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৩৭ রানের বিশাল জয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের এশিয়া কাপ অভিযান। এক জয়েই সুপার ফোর নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ফাইনালের স্বপ্নে লেগেছিল বাড়তি রং। কিন্তু পরপর দু’দিন টানা দুই ম্যাচে প্রতিরোধহীন শোচনীয় হারে রঙিন ছবিটা ভীষণ বিবর্ণ হয়ে গেছে।
ফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখতে এখন সুপার ফোরের বাকি দুই ম্যাচেই জিততে হবে মাশরাফিদের। টিকে থাকার প্রথম লড়াইয়ে আজ আবুধাবিতে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
হার দিয়ে সুপার ফোর পর্ব শুরু করায় দু’দলের জন্যই ম্যাচটা বাঁচা-মরার লড়াই। তবে বিপরীতমুখী পারফরম্যান্সের কারণে মানসিকভাবে বাংলাদেশের চেয়ে ঢের ভালো অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান। দুবাইয়ে আজ সুপার ফোরের আরেক মহারণে দেখা হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের।
এই ম্যাচে যারা জিতবে তাদের ফাইনালের টিকিট প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে। কারণ দু’দলই সুপার ফোর পর্ব শুরু করেছে জয় দিয়ে। আর সবাই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে বুঁদ হয়ে থাকলেও বাংলাদেশের সমর্থকদের আজ আবুধাবি থেকে দুবাইয়ে দৃষ্টি সরানোর সুযোগ নেই। কারণ আফগানদের বিপক্ষে ফের পা হরকালে এবারের এশিয়া কাপ বাংলাদেশের জন্য হয়ে থাকবে দুঃস্বপ্নের পাণ্ডুলিপি।
বদলে যাওয়া সূচির দরুন গ্রুপপর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল একেবারেই গুরুত্বহীন। কিন্তু আজ মাশরাফিদের সামনে জয়ের কোনো বিকল্প নেই। শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই চোটের থাবায় বাংলাদেশ হারিয়েছে দলের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকে।
তামিমের সঙ্গে বিদায় নিয়েছে যেন সুসময়ও। গ্রুপের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৩৬ রানের লজ্জার হার। সেই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই শুক্রবার সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে হার সাত উইকেটে। ব্যাটিং ব্যর্থতায় দুই ম্যাচেই কার্যত অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৫৬ রানের জয়ের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ১১৯ রানে গুটিয়ে যাওয়া। পরদিন ভারতের বিপক্ষে ১৭৩ রানেই অলআউট। ১০১ রানে সাত উইকেট হারানোর পর অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা (২৬) ও মেহেদী হাসান মিরাজের (৪২) ব্যাটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দেড়শ’ ছাড়ালেও ভারতকে কোনো চ্যালেঞ্জই জানাতে পারেনি বাংলাদেশ।
অধিনায়ক রোহিত শর্মার (৮৩*) চওড়া ব্যাটে হেসেখেলেই অনায়াস জয় তুলে নেয় ভারত। এ দুই ম্যাচে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের ফিফটি নেই। মাশরাফিকে সবচেয়ে বেশি ভাবিয়ে তুলেছে টপঅর্ডারের দুর্দশা। তিন ম্যাচে একটিতেও ভালো শুরু পায়নি দল।
ওপেনিংয়ে লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত বারবার ব্যর্থ হওয়ায় অধিনায়ককে কিছু না জানিয়েই শুক্রবার রাতে আচমকা সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েসকে এশিয়া কাপের দলে অন্তর্ভুক্ত করেছেন নির্বাচকরা। কাল সন্ধ্যায় দু’জনই উড়ে গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
বাজে ফর্মের কারণে বাদ পড়া সৌম্য ও ইমরুলকে এভাবে হুট করে ফিরিয়ে দলের চাহিদা কতটা পূরণ হবে তা নিয়ে মাশরাফি নিজেই সন্দিহান।
বাংলাদেশের আসল চ্যালেঞ্জটা হবে আজ আফগানিস্তানের তিন স্পিনার রশিদ খান, মুজিব উর রাহমান ও মোহাম্মদ নবীকে সামলানো। টুর্নামেন্টে তিনজনই এখন পর্যন্ত ওভার প্রতি সাড়ে তিনের বেশি রান দেননি। রশিদ ও মুজিবকে খেলা রীতিমতো অসম্ভব হয়ে উঠছে।
রশিদ তিন ম্যাচে সাতটি ও মুজিব নিয়েছেন ছয় উইকেট। স্পিনের বিপক্ষে বাংলাদেশের দুর্দশা ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এক বছর পর ভারতের ওয়ানডে দলে সুযোগ পাওয়া রবীন্দ্র জাদেজা মাত্র ২৯ রানে চার উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ধসিয়ে দেন।
সেখানে রশিদ ও মুজিব রয়েছেন ফর্মের তুঙ্গে। আফগানদের ব্যাটিং পারফরম্যান্সও যথেষ্ট ভালো। গ্রুপপর্বে শ্রীলংকা ও বাংলাদেশকে উড়িয়ে দেয়ার পর সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকেও কাঁপিয়ে দিয়েছিল তারা। আফগানিস্তানের ২৫৭ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোরের জবাবে অভিজ্ঞ শোয়েব মালিকের (৫১*) ব্যাটে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তিন বল বাকি থাকতে তিন উইকেটের ঘাম ঝরানো জয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে পাকিস্তান।
এই আফগানিস্তানকে মাটিতে নামাতে তিন বিভাগেই অনেক উন্নতি করতে হবে বাংলাদেশকে। তবে টানা দুটি শোচনীয় হারে আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকলেও ফাইনালের আশা ছাড়ছেন না মাশরাফি, ‘আমরা টুর্নামেন্ট থেকে এখনও ছিটকে যায়নি। ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর এখনও সুযোগ আছে। এখনও ফাইনালে খেলা সম্ভব। এত হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে যদি জিততে পারি, তাহলে ৫০-৫০ সুযোগ চলে আসবে। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলে ভালো সুযোগ থাকবে ফাইনালে খেলার।’