২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:২৪

বন্যায় প্লাবিত মৌলভীবাজারের অর্ধশতাধিক গ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জেলা সদর কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ৪ টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় কমপক্ষে অর্ধশতাধিক গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে।

রোববার ভোর ৫টায় রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নে ভোলানগর এলাকায় প্রায় ১শ’ ফুট ও দুপুর এক টায় কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে ৫০ ফুট এবং এলাকা জুড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়।

এছাড়াও চলতি বছর মনু নদের পানি উন্নয়ন বোর্ড ঘোষিত ৩৯ টি স্থান ঝুকিপূর্ণ স্পটের মধ্যে ২৪টি স্থানে ফাটল দিয়ে পানি বের হচ্ছে। যেকোন সময় এই স্পটগুলো ভেঙ্গে বন্যা কবলিত হতে পারে শত শত গ্রাম ।

কুলাউড়ার নিশ্চিন্তপুর  গ্রামের আবুল কালাম, আব্দুল লতিফ, আব্দুল হান্নান, লেদু মিয়া, এলাইচ, রবিউল হাসান ছায়েদ,লয়লু, মিজানুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে জানান, দুপুর দেড়টায় নিশ্চিন্তপুর এলাকায় মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ এলাকা দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ শুরু করে। প্রায় ৫০ ফুট এলাকা জুড়ে সৃষ্ট ভাঙনের ফলে উপজেলার হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, মাদানগর, ভূঁইগাঁও, আলীপুর, দত্তগ্রাম, সোনাপুর, ইসমাইলপুর, রনচাপসহ কমপক্ষে ২০টি গ্রামে বন্যা কবলিত হয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

শরিফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জুনাব আলী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, শরীফপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের এই ভাঙনের পানি মৌলভীবাজার শহরে গিয়ে পৌঁছবে। ক্ষতির পরিমান এখন নিরুপন সম্ভব হয়নি। তবে চাতলাঘাট এলাকায় দু থেকে আড়াইশ ফুট প্রতিরক্ষা বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সৃষ্ট ভাঙনের ফলে লোকালয়ে পানি প্রবেশ না করলেও মনু নদের উপর নির্মিত ব্রিজটি মনে হয় আর রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মালিক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ইউনিয়নের মিয়ারপাড়া ও খন্দকারের গ্রাম এলাকায় মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। শত শত মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে ভাঙন রোধে চেষ্টা চালাচ্ছে। এছাড়া হাজিপুর ইউনিয়নের মন্দিরা ও কোনগাঁও গ্রামের দুটি স্পটে ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে।

কামারচাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সেহরির পর কোন এক সময়ে ভোলানগর এলাকায় মুন নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ এলাকায় প্রায় ১০০ ফুট এলাকা জুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। এতে ভোলানগর, মিটিপুর, শ্যামর কোনা ও করাইয়ার হাওর এলাকায় কমপক্ষে ১৫ গ্রাম বন্যা কবলিত হয়। ভোলানগর গ্রামের যে স্থান দিয়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে, সেই ভাঙনের মুখে ফারুক মিয়ার বাড়িটি নদের ¯্রােতে ভেসে গেছে।

এছাড়া আর বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার তাৎক্ষণিক খবর পাওয়া যায়নি। চেয়ারম্যান আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার বলার পরও তারা কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এখন এই ভয়াবহ বিপদ হলো। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠা হবে দুষ্কর।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফ হোসাইন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মাতারকাপন ও বাঁশতলা এলাকায় পৃথক দু’টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে কমপক্ষে ২০টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোডের্র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুখলেছুর রহমান তালুকদার সংবাদ মাধ্যমকে জানান, মনু নদের ৪৪টি ঝুকিপূর্ণ স্থানের মধ্যে ২৪টি স্থানে ফাটল দিয়ে পানি বের হচ্ছে যেকোন সময় ভাঙন সৃষ্টি হতে পারে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, মনু নদের ৩-৪ টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের ক্ষোভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্ষোভ থাকতেই পারে। আসলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কোন লাভ নেই। বরাদ্দ অনুসারে কাজ চলছে।

দৈনিক দেশজনতা/এমএম

প্রকাশ :জুন ৫, ২০১৭ ১২:২০ অপরাহ্ণ