নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের অন্যান্য সামাজিক সমস্যার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। ১৪ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ এটি। প্রতিবছরই তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছর দেশে আত্মহত্যা করে ১১ হাজার ৯৫ জন, দিনে যা ৩০ জনেরও বেশি।
জাতীয় মানসিক সংস্থা এবং পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা যায়। এদিকে আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে দৌড়ের আয়োজন করেছে ব্রাইটার টুমোরো ফাউন্ডেশন (বিটিএফ)।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাদকসেবন বেড়ে যাওয়া, কর্মসংস্থানের অভাব, পারিবারিক কলহ, নির্যাতন, ভালোবাসায় ব্যর্থতা, পরীক্ষায় অকৃতকার্য, বেকারত্ব, যৌন নির্যাতন, অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণসহ বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। আর এই মানসিক ব্যাধি রোধে আজ পালিত হবে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘একযোগে আত্মহত্যা প্রতিরোধ’। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যৌথভাবে প্রতিবছর দিবসটি পালন করে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালে ১০ হাজার ৬০০, তার আগের বছর সাড়ে ১০ হাজার, ২০১৪ সালে ১০ হাজার ২০০ জন, ২০১৩ সালে ১০ হাজার ১২৯ জন, ২০১২ সলে ১০ হাজার ১০৮ জন, ২০১১ সালে ৯ হাজার ৬৪২ জন, ২০১০ সালে ৯ হাজার ৯৬৫ জন আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীই বেশি। এর কারণ উদ্ঘাটনে আত্মহত্যার ৯৭০টি ঘটনা পর্যালোচনা করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ।
তারা বলেছে, বাংলাদেশে নারীদের ওপর শারীরিক, যৌন ও মানসিক নির্যাতন এবং ইভটিজিংয়ের ঘটনা বাড়ায় অনেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে আত্মহত্যা করছেন। অবিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য হওয়া অথবা স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্ক স্থাপনের পর গর্ভধারণের কারণে অনেকে আত্মহত্যা করেন। বেশিরভাগ নারী আত্মহত্যা করেছেন গলায় দড়ি দিয়ে, পুরুষেরা কীটনাশক খেয়ে।
বাংলাদেশ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আবেগতাড়িত ও পরিকল্পিত এ দুই ধরনের আত্মহত্যা হয়। তবে দেশে আবেগতাড়িত আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি, এটি একটি মানসিক সমস্যা। সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে এ ধরনের ঝুঁকি থেকে বাঁচানো সম্ভব।’
চিকিৎসকদের মতে, আত্মহত্যাকারীদের ৯৫ শতাংশই মানসিক রোগে ভোগেন। বছর তিনেক আগে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ৬৫ লাখ মানুষ আত্মহত্যার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অথচ এর প্রতিরোধে নেই যথেষ্ট মানসিক চিকিৎসালয় ও কাউন্সিলিং সেন্টার। মানসিক রোগের চিকিৎসকের সংখ্যাও নিতান্তই কম। বিভিন্ন জেলায় আত্মহত্যা হলেও জেলা পর্যায়ে মানসিক রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। কেবল ২২টি মেডিক্যাল কলেজ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও পাবনায় মানসিক রোগের চিকিৎসা হয়। আর পুরনো আটটি মেডিক্যাল কলেজের একটিতেও এ বিষয়ের অধ্যাপক নেই। ফলে এ সংক্রান্ত সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা ব্রাইটার টুমোরো ফাউন্ডেশনের সভাপতি জয়শ্রী ভাদুড়ি বলেন, ‘বিষন্নতার কারণেই বেশি আত্মহত্যা হয়। আমাদের দেশে বিনোদনকেন্দ্রের অভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ হচ্ছে না। এ ছাড়া আত্মহত্যা মানসিক রোগ হিসেবে না দেখে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক ও বন্ধুত্বের সম্পর্কে আরও দায়িত্ববান হতে হবে। সরকারেরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্যনীতিতেও আত্মহত্যাকে দেখতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে।’
সংগঠনটি দেশে আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তারা আজ ঢাবি ক্যাম্পাসে একটি দৌড়ের আয়োজন করেছে। ৫ কিলোমিটারের এ দৌড় সকাল ৬টায় অপরাজেয় বাংলা প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হবে। এতে বিভিন্ন বয়স এবং শ্রেণি-পেশার মোট ২৫০ রানার অংশ নেবে। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এবং ঢাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে রানারদের মাঝে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করবেন। এ ছাড়াও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলালউদ্দিন আহমেদ, বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সামিনা চৌধুরী, এভারেস্ট জয়ী প্রথম বাংলাদেশি নারী নিশাত মজুমদার এবং ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।