নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজনৈতিক নীল নকশা বাস্তবায়নে সরকার গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। সরকারকে এই হীন ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে এসে অবিলম্বে তার জীবন রক্ষার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালে সুচিকিৎসার দাবি জানিয়েছে দলটি।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনে দলের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎ করেছেন। তারা জানিয়েছেন যে, দেশনেত্রী অত্যন্ত অসুস্থ। তার বা হাত ও বাম পা প্রায় অবশ হয়ে গেছে। অসহ্য ব্যাথা অনুভব করছেন তিনি। একই কথা তিনি বলেছেন ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত বেআইনি আদালত কক্ষে।
তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়ার কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না। আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন তার স্বাস্থ্য নিয়ে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে মিথ্যা সাজানো মামলায় শাস্তি দিয়ে কারাগারে বেআইনিভাবে আটক রেখে তাকে হত্যা করার হীন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের সংবিধান এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনো অসুস্থ নাগরিককে সুস্থ না হলে বিচার কার্য চালানো যায় না। এটা সম্পূর্ণ অমানবিক এবং সংবিধান পরিপন্থি। আমরা অনেকবার বলেছি, তাকে পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা বলেছেন যে, তিনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ। তাই অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তর করে তাকে চিকিৎসা দেয়া তার জীবন রক্ষার জন্য অতি প্রয়োজন। সরকার আমাদের কথার কর্ণপাত না করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করবার জন্য তাকে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে পরিত্যক্ত নির্জন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্যাঁতস্যাঁতে অস্বাস্থ্যকর কক্ষে আবদ্ধ করে রেখেছে। একজন সাধারণ বন্দির সঙ্গেও এ ধরনের আচরণ করা হয় না।
ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার অবদান যারা অস্বীকার করতে চান তারা কেউই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলে আমরা মনে করি না। সরকার তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। উচ্চতর আদালত জামিন দেয়ার পরও তাকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। সম্পূর্ণ মিথ্যা এসব মামলায় তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। যদিও এইসব মামলায় অন্যান্য অভিযুক্তদের সকলকেই জামিন দেয়া হয়েছে।
এটা এখন স্পষ্ট যে, রাজনীতি থেকে এবং আসন্ন নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে একতরফাভাবে নির্বাচন নিজেদের নির্বাচিত ঘোষণা করবার নীল নকশা নিয়েই এই অপপ্রয়াস চালাচ্ছে সরকার। এতোটাই নিচে নেমে গেছে যে, একজন মারাত্মকভাবে অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে তারা চিকিৎসার কোনো সুযোগ দিচ্ছে না। অথচ চিকিৎসা পাওয়া তার সাংবিধানিক অধিকার’- বলেন ফখরুল।
ফখরুল আরো বলেন, এই গণবিরোধী সরকার নিশ্চিত হয়েছে যে, বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হলে তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বিপন্ন হবে এবং আগামী নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হতে বাধ্য। এটা এখন শুধুমাত্র আমাদের কথা নয়, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাক ভট্টাচার্য সম্প্রতি তার লেখায় বলেছেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের লজ্জাজনক পরাজয় ঘটবে। আর সেই কারণেই তারা আসন্ন নির্বাচনে তিনি যেন নেতৃত্ব দিতে না পারে এবং জনগণ যেন তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে না পারে সেই জন্যই তারা তার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে বেআইনিভাবে সাজা দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর সে জন্যই সারাদেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার হীন প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় সকল দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। বিশেষ করে সংবিধান লঙ্ঘন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে তাদের অভিযুক্ত হতে হবে। কারা কর্তৃপক্ষকেও আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্তৃপক্ষ। আপনাদের দায়িত্ব সুস্পষ্টভাবে আইন ও বিধান দ্বারা পরিচালিত। এ দায় আপনাদেরকেও বহন করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘এই সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়ে বাংলাদেশকে একটি স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এক ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতায় দেশ চলছে। বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। জনগণ এদের পরিবর্তন চায়।
আমরা আবারও সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। ইতিহাসের কাঠগড়ায় আপনাদের দাঁড়াতে হবে। সকল দায় দায়িত্ব আপনাদের ওপর বর্তাবে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে জেলগেটে বিচার হয়েছে-আওয়ামী লীগ নেতাদের এই বক্তব্যের প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড . খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমানের সময় জেলগেটে যে বিচার হয়েছে সেটা ছিল রাষ্ট্রদ্রোহীতার। তখন দেশে মার্শাল ল’ ছিল। তখন দেশের সংবিধান রহিত ছিল। এখনকি তাহলে দেশে মার্শাল ল’ চলছে?
‘ক্যামেরা ট্রায়াল নয়। পুরো দরজা খোলাই ছিল। এটা ক্যামেরা ট্রায়াল হলো কীভাবে’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের প্রসঙ্গে মোশাররফ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের কথা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চান। তার কথায় সত্যের অপলাপ। কারণ পরিত্যক্ত পুরনো কারাগারের গেটের বাইরেও কত ধরনের বাধা থাকে আপনারা জানেন। গত দুই ঈদে আমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তখন আপনারা দেখেছেন কারাগারের গেটের বাইরে কোথায় আমাদের আটকে দিয়েছে। তাহলে সেখানে কীভাবে দরজা খোলা থাকে বলছেন প্রধানমন্ত্রী?