জেলা প্রতিনিধি:
উপদেশ দিয়ে নয়, মাদক ব্যবসায়ীদের প্রাণহানি হলেই কেবল মাদকরোধ করা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।
মঙ্গলবার নগরের মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে কোতোয়ালী থানা কমিউনিটি পুলিশিং আয়োজিত সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি।
নগর পুলিশ কমিশনার মাহাবুবর রহমান বলেন, বাংলাদেশকে ইয়াবার মাধ্যমে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র রুখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাদকবিরোধী সংগ্রাম চলছে।
তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের কোন ধর্মীয় উপদেশ দিয়ে কাজ হবে না। বড় ভাই হয়ে তাদের মাথায় হাত রেখে বোঝালেও কাজ হবে না। কারণ ৫০ টাকার ইয়াবা এনে সে যদি ৫০০ টাকায় বিক্রি করে, তার যদি ৪৫০ টাকা লাভ হয়, সে এই ব্যবসা ছাড়বে কেন? একমাত্র সে যদি মনে করে এই ব্যবসা করলে তার জীবনহানির আশঙ্কা আছে, তার জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাহলেই সে এই ব্যবসা ছেড়ে দেবে। মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে অস্ত্র আছে। সেই অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ, র্যাব যাচ্ছে। তারা অস্ত্রের ব্যবহার করছে। এতে অনেকের জীবনহানি হচ্ছে।
মাহাবুবর রহমান বলেন, আমি মনে করি, প্রাণহানি হতে হবে। শান্তির জন্য অশান্তির প্রাণহানি হতে পারে। তারা (মাদক ব্যবসায়ী) অস্ত্র হাতে নিয়ে আমাদের মোকাবেলা করতে চায়, আমাদের হাতেও অস্ত্রও আছে। সেই অস্ত্র ব্যবহারের অধিকার আমাদের আছে। সুতরাং মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রাণহানি হতে পারে।
মিয়ানমার থেকে ইয়াবার প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ১২০ কিলোমিটার সীমান্ত যদি আমরা রক্ষা করতে পারতাম তাহলে ইয়াবা দেশে ছড়িয়ে পড়ত না। সীমান্তের একটি পয়েন্টে যদি ১০ লাখ ইয়াবা ঠেকানো যেত তাহলে সেগুলো ১০০ জায়গায় ছড়িয়ে পড়ত না। এক পয়েন্টে ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ সহজ নাকি ১০০ পয়েন্টে?
নগর পুলিশ কমিশনার বলেন, সব দোষ যেন পুলিশের। অথচ যাদের ব্যর্থতার কারণে ইয়াবা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে তাদের নাম কেউ মুখে আনে না। দুঃখের বিষয় তাদের কথা মিডিয়াতেও আসে না। বিজিবি ও কোস্টগার্ডকেও ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। তারা কঠোর হলে ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ অনেক সহজ হত। আমি আশা করব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড শক্তিশালী হবে এবং সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে।
ইয়াবা ব্যবসায় পুলিশের জড়িয়ে পড়া কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনজন এসআইকে হাতকড়া পরিয়ে জেলে পাঠিয়েছি। আমার অবস্থান স্পষ্ট, যে বা যারা ইয়াবার সঙ্গে যুক্ত তারা পুলিশের কেউ না। পুলিশ ব্যর্থ হতে পারে, কিন্তু ইয়াবার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে না। ইয়াবা ব্যবসা করতে হলে পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিতে হবে।
কোতোয়ালী থানা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের আহ্বায়ক এএসএম সাহাবুদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম, উপ-কমিশনার এস এম মোস্তাইন হোসেন, কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন, চট্টগ্রাম মহানগর কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্য সচিব অহিদ সিরাজ স্বপন এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।