২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:১৭

শ্যামনগরে প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় গ্রামীণ জনগণ শীর্ষক আলোচনাসভা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:

লবণ পানির চিংড়ী চাষে মিষ্টি পানির আধার,কৃষি ফসল কমে গেছে, ষাটের দশকে নির্মিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেড়ী বাঁধের আকার আকৃতি পরিবর্তন করতে হবে। ভেড়ী বাঁধ গুলি সংস্কার না করলে যে কোন সময়ে এলাকা প্লাবিত হতে পারে এ সব কথা গুলি বলছিলেন রবিবার সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় বারসিক শ্যামনগর রির্সোস সেন্টারে বিশ^ পরিবেশ দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় গ্রামীণ জনগণ শীর্ষক আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে নিরঞ্জন জোয়ারদ্দার।
সভায় স্থানীয় মেীয়ালী আনোয়ার গাজী বলেন সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ মধুর প্রাপ্যতা কমেছে। মধুর প্রাপ্যতা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া,গাছে ফুলের সংখ্যা কমে যাওয়া, মেীয়ালদের প্রশিক্ষণ না থাকা সহ অন্যান্য কারণ উল্লেখ করেন। বনজীবি আজগর আলী বলেন সুন্দরবনের বৃক্ষ কমে বহুলাংশে কমেছে। নদনদীর পানিতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি,মাছ,কাঁকড়া বা অন্যান্য পাশ নিয়ে ছোট বড় গাছ কাটার জন্য বৃক্ষ কমছে।
ষাটর্ধো বয়সী জেলে সুপদ মন্ডল বলেন এখান থেকে বিশ/ত্রিশ বছর আগে সুন্দরবনে এক স্থানে জাল দিয়ে কয়েকমণ মাছ পাওয়া যেত। এখন মাছ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তিনি বলেন নদীতে নেট জালের অবাধ ব্যবহার,ছোট ছোট পোনা নিধন সহ অন্যান্য কারণে মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। জেলে সুপদ মন্ডল বলেন নদীতে কইবোল মাছ পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে।
বেহারা প্রশান্ত সরকার আলোচনায় বলেন যান্ত্রিকযুগে পালকি এক স্বপ্ন। পালকির যুগ হারিয়ে গেছে।ফলে বিকল্প পেশার জন্য ছুটতে হচ্ছে।হস্তশিল্পী গীতা রানী বলেন প্লাষ্টিকের যুগে বাঁশ বেত শিল্পের কথা মানুষ ভূলে যাচ্ছে। আগে প্রায় বাড়ীতে ধান হত এ সকল ধান চাল সংগ্রহে ধামা,পালি ব্যবহার হত। এখন বিক্রী নেই বললে চলে। অমল কর্মকার তার পেশার বর্ণনায় বলেন দা,কাঁচি,ছুরি তৈরী ও ব্যবহার কমেছে। চিংড়ীর কারণে ধানের জমি কমে যাওয়ায় ধান কাটার কাঁচি বানাতে হয়না। এর সাথে গো সম্পদ কমেছে। গোচারণ ভূমি কমে যাওয়া,গোখাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও অন্যান্য কারণে গোসম্পদ হারিয়ে যাচ্ছে।   ঢোল বাদক  ও চামড়া ব্যবসায়ী কালীপদ  ও প্রবীন দাশ বলেন দিনে দিনে বাজনদারদের চাহিদা কমে যাচ্ছে। বিয়ে হচ্ছে অনানুষ্টিকভাবে। ফলে বাজনদারদের কদর থাকছেনা। স্থানীয়ভাবে চামড়ার বাজার গড়ে না উঠায় চামড়ার সঠিক মূল্য পাওয়া যাচ্ছেনা ।এ জন্য তারা কতৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন।
সভায় সকল বক্তারা বলেন কবিতার ছন্দে ‘দাও সে ফিরিয়ে  অরণ্য- লহ এ নগর’। আমারা আবার গোয়ালভরা গরু চাই,পুকুরভরা মাছ চাই,কলসভরা দুধ চাই,গোলাভরা ধান চাই এ গুলি ফিরে পেলে  আমাদের এ রুক্ষ পরিবেশ আর দেখতে হবেনা।
বিভিন্ন পেশাজীবিদের অংশ গ্রহণে টেক সই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় বক্তারা প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় সরকারী বেসরকারী ভূমিকা থাকা প্রয়োজন বলে মতামত প্রকাশ করেন।

দৈনিক দেশজনতা /এমএম

 

প্রকাশ :জুন ৪, ২০১৭ ৫:২৫ অপরাহ্ণ