২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:৪১

পরিবহন শ্রমিকদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করুন

তামান্না আক্তার:
আজকাল এমন সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে যা ঘুমের ঘোরে দুঃস্বপ্ন দেখার মতো মনে হয়। মানুষের বিবেক আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। একবছরের নিষ্পাপ শিশুটিকেও রেহাই দিচ্ছে না। পরিবহন শ্রমিকদের এমন আচরণে আমরা সত্যিই অনেক বেশি শঙ্কিত। আমাদের জীবনের মূল্য কি এসব শ্রমিকদের কাছে কিছুই না? রাস্তায় বের হলে বাসায় ফেরার কেউ কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। বাংলাদেশ যেন এক আজব দেশ। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এ দেশে কারো প্রাণের কোনো মূল্য নেই। সড়কে বিশৃঙ্খলা নিয়ে এতো আন্দোলন হলো কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এভাবে আর কত প্রাণ অকালে ঝরে গেলে কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে? বিনা অপরাধে আর কত মায়ের বুক খালি হবে?

গত মাসের ২৮ তারিখ মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়ার চৌড়হাস এলাকায় এক পথচারী মা এবং তার একবছরের শিশু আকিফাকে ফয়সাল গঞ্জেরাজ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় আকিফা তার মায়ের কোল থেকে ছিটকে মাটিতে পড়ে যায়। এতে মা ও মেয়ে আহত হয়। ঘটনাটি পাশের একটি স্বর্ণের দোকানের সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও থেকে জানা যায়। আর এই ধারণকৃত ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ঘটনাটি মানুষের বিবেককে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছে। ঘটনার আকস্মিকতায় সাধারণ মানুষজন পরিবহণ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে। আহত রিনা বেগম ও তার মেয়ে আকিফাকে সেদিনেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। একটা প্রবাদ আছে—ভাগ্যের লিখন কখনো খণ্ডানো যায় না। ভাগ্য তাদের সহায় ছিল না। মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ আকিফাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মেয়ের মৃত্যুতে শোকাহত বাবা দিশেহারা হয়ে পড়েন। দিশেহারা হয়ে পড়েন আত্মীয়-স্বজনও। কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। কারো মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিল না।

ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায় যে, রাজশাহী থেকে আগত ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ফয়সাল গঞ্জেরাজ বাসটি ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েছিল। সেই সময়ে রিনা বেগম তার সন্তানকে কোলে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল। বাসের সামনে চলনরত অবস্থায় হঠাত্ কোনো হর্ণ বাজানো ছাড়াই চালক বাসটি চালিয়ে মা-মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আহত মা-মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। এ ঘটনার ফুটেজকৃত ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে কুষ্টিয়ার সচেতন মহল ফুঁসে ওঠে। বহুল আলোচিত এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে গত ২৯ তারিখ বুধবার বাসচালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বেলা ১১:৩০টায় স্থানীয় এলাকার সচেতন মহলসহ স্কুলের শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকরা মানববন্ধন করেছিল কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। তবে আশার কথা হলো কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় তদন্তের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আমরা মনে করি কর্তৃপক্ষ একটু কঠোর হলে এরকম হূদয়বিদারক ঘটনা আর ঘটবে না। পরিবার তথা সমাজ জীবনে সুখ শান্তি বিরাজ করুক এটাই কামনা করি।
লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ২, ২০১৮ ১২:৩৭ অপরাহ্ণ