রকমারি ডেস্ক:
আজ থেকে আনুমানিক ঠিক এক বছর আগে ডেমরা এলাকায় মন্দার্থে বিখ্যাত এক ব্যক্তির নাম জানতে পারি আমরা! তিনি আর কেউ নন, সকলের অপ্রিয় মিনহাজুর রহমান মিলন ওরফে মিলন শেখ ওরফে কুত্তা মিলন!
মূলত নিহত সন্ত্রাসী কুত্তা লিটন এর ডান হাত বলা হয় কুত্তা মিলনকে, এলাকার মানুষকে অতীষ্ঠ করে রাখা, মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করার পাশাপাশি নিজেকে বিত্ত বৈভব ও প্রাচুর্যে মুড়িয়ে নেয় এই কুত্তা মিলন ওরফে মিলন শেখ! ডেমরা বড় ভাঙ্গা এলাকায় এক প্রাসাদোপম দ্বিতল বাড়ির মালিক কোনো নির্দিষ্ট ব্যবসা ও চাকরি না করা এই কুত্তা মিলন!
এলাকায় রীতিমত এক আতংকের নাম কুত্তা মিলন! গত ১৯/০৮/২০১৮ রাত সাড়ে ৯টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি মহান এই ব্যক্তি তার বাসায় প্রবেশ করেছেন! সংবাদের ভিত্তিতে ডেমরা থানার তিনটি টিমসহ আমরা তার বাসার চারিপাশ ঘিরে অবস্থান নেই …
এরপর থেকে শুরু হয় মূল নাটক! আমরা তো নিশ্চিন্তেই ছিলাম যে পেয়ে গেছি আমাদের আকাঙ্খিত মিলনকে কিন্তু বিধি বাম! খুব খেয়াল করে দেখা গেল তার বাসার চারিপাশ ঘিরে প্রায় ১২-১৪টি এক্সিট ওয়ে অর্থাৎ পালানোর রাস্তা! বাসায় এত নিঁখুত পরিকল্পনা করে পালানোর পথ তৈরি করা একজন জাত অপরাধীর পক্ষেই সম্ভব!
বিশিষ্ট মিলন সাহেব যখন বুঝে গেলেন চারিপাশ পুলিশ ঘিরে ফেলেছে এবং পালানোর রাস্তা নেই তখন সে নিজ বাসার ছাদে উঠে তার কাছে রাখা মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন মালামালে আগুন ধরিয়ে দেয়! এ অবস্থায় যখন কিছুটা দ্বিধান্বিত তখন ডিসি ওয়ারী স্যারকে ফোন করলে স্যার নির্দেশনা দেন আমরা যেন স্পট না ছাড়ি এবং এলাকার লোকজন যেন সবকিছু চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করে..! স্যারের নির্দেশনা পেয়ে আমরা ইতোমধ্যে ফায়ার সার্ভিস ডেকে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করি এবং ছাদে আমাদের ফোর্স পাঠাই! বেরসিক মিলন ছাদের উপরেও লোহার দরজা আটকে রাখে যা ভাঙা সহজসাধ্য ছিল না! নীচের দিক থেকেও গেইট খুলছিল না, আমরা যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম ভাঙার তখন তার এক আত্মীয়কে পাই এবং বলি দরজা খুলতে সাহায্য করতে! শত শত মানুষের উপস্থিতিতে দরজা খুলে দেয়া হয়… এবং তারপর…!
বাসার ভেতরে ঢুকে পড়ে যাই গোলকধাঁধায়, মনে হয় এ যেন কোনো স্বর্ণকমল! বাসার খাটগুলোতে সোনালী আবরণে এক ভিন্নতর আভা। রুমের পর রুম খোঁজা হয় কিন্তু কুত্তা মিলন মেলেনা! তার বসবাসরত প্রতিটি রুমে জানালা এমনভাবে তৈরি করা যেন গ্রিল খুলে যে কেউ পালিয়ে যেতে পারে! বসার রুম, থাকার রুম, বিছানার নিচ, ওয়াশরুম এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে লুকিয়ে থাকার অথবা পালিয়ে যাবার ব্যবস্থা নেই। বাসার প্রতিটি কোণায় সিসিটিভি লাগানো যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি সহজেই টের পাওয়া যায়। এরকম দুর্লভ চিন্তার অধিকারী মহান ব্যক্তিকে দেখার তীব্র আকাংখা আর সংবরণ করতে পারছিলাম না!
বিশাল বাসাটির সকল কোণ খুঁজে খুঁজে যখন প্রায় নিরাশ তখন খেয়াল করি একটি রুম তালা লাগানো, জিজ্ঞেস করতে জানায় ওই বাসার ভাড়াটিয়া বেড়াতে গেছেন। আমার সন্দেহ ঘণীভূত হয়! তালা ভাঙার নির্দেশ দিলে তা ভাঙা হলে দরজায় ধাক্কা দিয়ে দেখি দরোজা ভিতর থেকে লাগানো। সাথে সাথে আশান্বিত হই আমরা, দরোজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে খাটের নীচ, ঘরের কোণা খুঁজেও কুত্তা মিলন মেলেনা! হঠাৎই দেখতে পাই বিশেষ প্রকৃতির এক জানালা যেখান দিয়ে একজন মানুষ দিব্যি বের হয়ে যেতে পারবে! পুরো বিল্ডিং পুলিশ ঘিরে রাখায় তার বের হতে পারাটা অনিশ্চিত ছিল। খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত হয়ে আমি ও কনস্টেবল মোর্শেদ আবারও দুই তলায় উঠি। মোর্শেদকে পাশের রুম দেখতে বলে আমি অন্য রুমে ঢুকি! ঠিক দুই সেকেন্ড পর মোর্শেদের চিৎকার, স্যার একটা মাথা দেখা যায়, দৌঁড়ে যেয়ে দেখি আমাদের অতি আকাংখিত একাধিক মামলার আসামী,মন্দার্থে বিখ্যাত কুত্তা মিলনের চাঁদ মুখ দেখা যায় …
মিলন লুকিয়েছিল সেই ওয়ার্ড্রোবের ভিতরে যেটি আমরা একাধিকবার সার্চ করে এসেছি; এর অর্থ হচ্ছে সে তার সাজানো পথ ব্যবহার করে বারবার দিক পাল্টাচ্ছিল! এ যেন টম এন্ড জেরি’র খেলা! তার স্ত্রী দিব্যি বসে বসে দেখছিল পুরো খেলা আর স্বামীকে বাহবা দিচ্ছিল আর ভাবছিল হায়রে বোকা পুলিশ!!
তার চালাক স্বামী প্রথমে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পুলিশকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা চালায়, কিন্তু বোকা পুলিশ ফায়ার সার্ভিস এনে আগুন নেভানোর পাশাপাশি তার যক্ষের ধন মাদকের মালামালও অনেকটা রিকভার করতে সমর্থ হয়! দ্বিতীয়ত মিলন তার হাতে বটি নিয়ে জানালার কাঁচ কাটতে থাকে, তাকে দেখা যাচ্ছিলনা কিন্তু শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল! বাসার চারিপাশ ঘুরে বিভিন্ন স্থানে রক্ত দেখতে পাই, জিজ্ঞেস করলে তার স্ত্রী জানায় সে জানেনা কিসের রক্ত! শত হলেও কুত্তা মিলন সাহেবের স্ত্রী, ওই রক্ত আসলে মিলনের কাঁচ কাঁটার রক্ত ছিল!! এত কিছুর পরেও শেষ রক্ষা হয়নি বিশিষ্ট মিলনের।
তার বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় বাসায় দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র রাখবার দায়ে অস্ত্র আইনে একটি মামলা, মাদকদ্রব্য রাখার দায়ে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা এবং পুলিশকে তার সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান ও আঘাত করায় পুলিশ এ্যাসল্ট মামলাসহ মোট ০৩টি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়।
পুলিশের দলটি একটা মুহূর্তও থামেনি, এসি ডেমরা, ওসি ডেমরা, ইন্সপেক্টর অপারেশন (ডেমরা), ইন্সপেক্টর তদন্ত(ডেমরা), এস আই তৌহিদ, এএসআই বাদশাসহ আরও অনেক নিবেদিত পুলিশ সদস্য প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা এই অভিযান চালায়, প্রতিটা মুহূর্তে ডিসি ওয়ারী স্যার ও এডিসি স্যার দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। যার ফলশ্রুতিতে একাধিক মামলার আসামী কুত্তা মিলনকে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হই…
ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে ওয়ারী বিভাগের পক্ষ থেকে ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী এলাকার সন্মানিত নাগরিকগণের জন্য এটি বড় একটি ঈদ উপহার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন উপস্থিত জনতা….. আমরাও আশ্বস্ত করে বলতে চাই – আপনাদের পাশেই রয়েছে ওয়ারী বিভাগ, সবসময়!
(বিঃদ্রঃ মিলন নামের আগে বারবার কুত্তা শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে কারণ আসামি এই নামেই পরিচিত)