নিজস্ব প্রতিবেদক:
১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসে ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতীকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেননি রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আতাউর রহমান প্রধান। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, রুপালী ব্যাংকের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৫ আগষ্ট সকালে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপক, উপমহাব্যবস্থাপক, সহকারী মহাব্যবস্থাপকসহ প্রায় ৫ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ৩২ নম্বরে উপস্থিত হন। ঐদিন একই ব্যাংক থেকে স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং রূপালী ব্যাংক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ আলাদা ব্যানারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ৩২ নম্বরে যান। এমডির নেতৃত্বে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক, ব্যাংকের নির্বাহীসহ সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রতীকৃতিকে উদ্দেশ্য করে আগাতে থাকেন। কাছাকাছি আসা মাত্রই স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং কর্মচারী নেতারা জোরপূর্বক ব্যাংকের ব্যানার এবং ফুল ছিনিয়ে নিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপস্থিত কর্মকর্তাদের বাদ দিয়েই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
নিজ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এহেন কর্মকান্ডে এমডিসহ উপস্থিত সকলেই হতবিহ্বল হয়ে পরেন। এরপর এমডি মো. আতাউর রহমান প্রধান কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে ফিরে আসেন। এ ঘটনায় একাধিক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জনরোষ থেকে বাঁচতে স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং কর্মচারী নেতারা সেখান থেকে দ্রুত কেটে পরেন। এ সময় কর্মকর্তাদের অনেকেই বলেন, ‘প্র্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী উপস্থিত থাকার পরও তাকে বাদ দিয়ে এহেন কাজ ষড়যন্ত্র ছাড়া অন্য কিছুই নয়।’
এদিকে জাতীয় শোক দিবস যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালনের লক্ষ্যে গত ১৩ আগষ্ট ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে উর্ধ্বতন নির্বাহী ও সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয়ে একটি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান কার্যালয়, স্থানীয় কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয় এবং তাদের অধীনস্থ অফিসসমূহে জাতীয় শোক দিবস পালনের দিকনির্দেশনা দিয়ে ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়। ১৪ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস পালন কমিটি-২০১৮ নামে প্রকাশিত আরো একটি সার্কুলার জারি করা হয়। ফলে রুপালী ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে দিধাদ্বন্দ্ধ দেখা দিয়েছে।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ আগষ্ট সকাল ৬টা ৩০মিনিটে রুপালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের সামনে থেকে ব্যাংকের এমডি মো. আতাউর রহমানের নেতৃত্বে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী জাতির পিতার প্রতীকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে ৩২ নম্বরে গমন, শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে প্রধান কার্যালয়ে ফিরে ব্যাংকে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন, কোরআন খতম ও দোয়ার আয়োজন এবং দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়। ২৮ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শের উপর ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে আলোচনা সভার আয়োজন করার কথা রয়েছে।
অথচ ১৪ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস পালন কমিটি-২০১৮’র নামে আরো একটি সার্কুলার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এতে দেখানো হয়েছে, মহাব্যবস্থাপক কাইসুল হকের সভাপতিত্বে গত ২ আসস্ট একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অন্যন্য কর্মসূচি পালনের সাথে ব্যাংকে স্থাপিত ম্যূরালে শ্রদ্ধা নিবেদনপর্ব বাদ দেয়া হয়। একইসাথে ১৪ তারিখ প্রকাশিত স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং কর্মচারী ইউনিয়নের নামে প্রকাশিত জাতীয় শোক দিবস পালন কমিটিও ব্যাংকের সামনে ২৮ আগস্ট শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে।
একইদিনে একইস্থানে দুটি আলোচনা সভার আয়োজন কথা জানতে পেরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিধাগ্রস্থ হয়ে পরেছেন। কোনটা ব্যাংকের কর্মসূচি আর কোনটা শোক দিবস পালন কমিটির কর্মসূচি তা বুঝতে পারছেন না তারা। তাছাড়া কাইসুল হক সাক্ষরিত যে জাতীয় শোক দিবস পালন কমিটি-২০১৮ প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে উপ-মহাব্যবস্থাপক এবং সহকারী মহাব্যবস্থাপকদের মধ্য থেকে ১জনকেও রাখা হয়নি। শোকদিবস পালনের নামে কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে যে কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে তা নিয়ে নির্বাহীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কারণ সেখানে বলা হয়েছে, ‘মুজিব আদর্শের অনুসারীদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ প্রশ্ন উঠেছে- তাহলে কি রূপালী ব্যাংকে সকল নির্বাহী মুজিব আদর্শের বিরোধী?
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী মো. আতাউর রহমান প্রধানকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা ব্যাংকের ক্ষতির জন্যও উঠেপড়ে লেগেছে।