২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:১৩

আসছে রাজউকের আরও চার আবাসন প্রকল্প

ডেস্ক রিপোর্ট:
প্লট বরাদ্দের মাধ্যমে মুষ্টিমেয় কিছু লোককে বিত্তশালী বানিয়ে দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক। ফলে রাজধানীর বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী আবাসন সুবিধার বাইরেই থেকে যায়। এমনটি বিবেচনায় নিয়ে প্লটের পরিবর্তে স্বল্পমূল্যে ফ্ল্যাট বরাদ্দের উদ্যোগ নিয়েছিল রাজউক। রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল হুদা, সাবেক পূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান এমনকি বর্তমান পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও নতুন করে রাজউক প্লটের ব্যবসা করবে না বলে জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাতে একমত পোষণ করেছিলেন। সে লক্ষ্যেই উত্তরা, পূর্বাচল ও ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে এক লাখ ফ্ল্যাট তৈরির উদ্যোগ নেয় রাজউক। কিন্তু বর্তমান সংসদের যেসব এমপির রাজধানীতে প্লট নেই তারা মন্ত্রীকে প্লটের জন্য চাপ দিতে থাকেন। এ রকম অবস্থার মধ্যে নতুন করে চারটি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে রাজউক। সেগুলো হবে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, দোহার, আমিনবাজার থেকে গাজীপুরের সফিপুর পর্যন্ত তুরাগ নদের দু’পাড়ে এবং অন্যটি হবে পূর্বাচল উপশহর প্রকল্প এলাকার পূর্ব দিকে ঢাকা মহানগর বাইপাসের উত্তর পাশে। এর বাইরেও শিক্ষা জোন (অঞ্চল) নামে আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে রাজউক। সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। এটা হবে পূর্বাচল প্রকল্পের দক্ষিণে পূর্বাচল ও ডেমরার মধ্যবর্তী স্থানে।

এ প্রসঙ্গে রাজউকের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, কেরানীগঞ্জ ও আশুলিয়ার প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে সবকিছু চূড়ান্ত করা হয়েছে। অন্যগুলোর বিষয়ে কাজ চলছে। রাজউকের পরিকল্পনা শাখা থেকে তারা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। রাজউকের পরিকল্পনা রয়েছে নবাবগঞ্জ-দোহার-মাওয়া এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ে একটি প্রকল্প করার। পূর্বাচলের দক্ষিণে হবে শিক্ষা জোন আর পূর্ব দিকে হবে আরেকটি আবাসন প্রকল্প।

এ প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, কেরানীগঞ্জে আগে যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সেটা এখন ছোট করে ফেলা হয়েছে। যেসব স্থানে ঘরবাড়ি আছে সেগুলো বাদ দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে সেসব ক্ষতিগ্রস্তের জন্য একটি অঞ্চল তৈরি করে প্লট দেওয়া হবে। এতে করে ওই এলাকার উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে।

আশুলিয়ায় নতুন আবাসন প্রকল্প সম্পর্কে মন্ত্রী আরও বলেন, তুরাগ নদের পাড় ঘেঁষে সাভার ও আশুলিয়া এলাকার জলাশয় ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রাজউক রক্ষা করতে পারছে না। বর্ষা মৌসুমে রাতের অন্ধকারে নৌকায় করে তারা বালু ফেলে। শুস্ক মৌসুম শুরু হতেই সেখানে চর জেগে ওঠে। এভাবে আশুলিয়ার বিশাল এলাকা ইতিমধ্যে ভরাট হয়ে গাছপালা গজিয়েছে। এ জন্যই আমিনবাজার থেকে কাশিমপুর পর্যন্ত পুরো এলাকা অধিগ্রহণ করে তুরাগ নদ ও জলাশয়গুলো রক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যেসব স্থান ভরাট হয়ে গেছে সেখানে প্লট বানিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হবে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে তিনি সম্প্রতি অবহিত করেন। এ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দেন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের ব্যাপারে রাজউককে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, আশুলিয়ার প্রকল্পটি খুব ভালো হবে। কারণ বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভার নির্মাণেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ভূমিদস্যুরা কি এতই শক্তিশালী হয়ে পড়েছে যে তাদের ক্ষেত্রে ভূমি ব্যবহার আইন-নীতিমালা কার্যকর করা যাবে না? রাষ্ট্রব্যবস্থা কি এতই ভেঙে পড়েছে? জলাশয় রক্ষার জন্য যদি এভাবে আবাসন প্রকল্প করতে হয় তাহলে তো সব জলাশয়ই সরকারকে অধিগ্রহণ করতে হবে। যারা এসব ভরাট করছে তাদের উচ্ছেদ করে জেল-জরিমানা দিতে হবে।

কেরানীগঞ্জের প্রকল্পটির নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে, ‘কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন’। প্রথমে কেরানীগঞ্জ মডেল টাউনের জন্য কেরানীগঞ্জের ১৬টি মৌজায় ২ হাজার ২৮৭ একর জমিতে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পপত্র তৈরি করেছিল রাজউক। নতুন প্রকল্পপত্রে ঘরবাড়িগুলো বাদ দেওয়ায় এখন তা কমে ৯১২ একর নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৬ মৌজার পরিবর্তে এখন তিনটি মৌজার জমি অধিগ্রহণ করা হবে। মৌজা তিনটি হলো বেওথা, বাড়িলগাঁও ও তারানগর। প্লট হবে তিন হাজারের কাছাকাছি।

অন্যদিকে গাবতলী ব্রিজের উত্তরে কোর্টবাড়ি মৌজা ও পশ্চিমে আমিনবাজার ল্যান্ডফিল থেকে উত্তর দিকে আশুলিয়া পর্যন্ত তুরাগ নদের দুই পাশ দিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর পর্যন্ত এলাকায় হবে আশুলিয়া আবাসন প্রকল্প। এসব এলাকায় বেশকিছু ঘরবাড়ি রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কারখানা, পার্ক, রেস্টুরেন্ট, পিকনিক স্পট, আবাসন প্রকল্পসহ প্রভৃতি অবকাঠামোও রয়েছে। এসবের প্রায় সবই জলাভূমি ভরাট করে তৈরি হয়েছে। তুরাগের সাভার অংশে জলাশয় ভরাট করে গড়ে উঠেছে মসজিদ, ঘরবাড়ি, মার্কেট প্রভৃতি।

এসব এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্পর্কে রাজউকের একজন পরিকল্পনাবিদ বলেন, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও আশুলিয়ায় যত্রতত্র ঘরবাড়ি উঠে অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে। এ দুটি এলাকায় রাজউকের আবাসন প্রকল্প হলে সমগ্র এলাকার যেমন পরিকল্পিত নগরায়ণ হবে, তেমনি আশপাশের এলাকাগুলোরও উন্নয়ন হবে। বিদ্যমান জলাশয়ও রক্ষা হবে। এ জন্যই তিনি এ দুটি প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে দুটিরই প্রকল্পপত্র তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করছে।

মাওয়া থেকে দোহার পর্যন্ত পদ্মা নদীর পাড় দিয়ে কিছু জমি রয়েছে, যেখানে বড় কোনো স্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এছাড়া পদ্মা সেতুর কারণে ওই এলাকার সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হওয়ার পথে। ওই এলাকায় আধুনিকতার ছোঁয়াও লেগেছে। এ জন্য রাজউক ওই এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায়।

পূর্বাচলের পূর্বপাশে পুবেরগাঁও, গুতুলিয়া, পাঁচরুখি, বান্টি ও কুমারটেকের মধ্যবর্তী স্থানেও এখনও কোনো অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। ওই স্থানেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যায়। এ জন্য পূর্বাচলের পূর্বে ওই অংশটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।

আর বেরাইদ এলাকায় করতে চায় শিক্ষা প্রকল্পটি। ওই এলাকার সঙ্গেও রাজধানীর ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। এসব এলাকায় জমি অধিগ্রহণের কাজও অনেকটাই সহজ হবে বলে মনে করে রাজউক।

প্রকাশ :আগস্ট ১৬, ২০১৮ ২:১৮ অপরাহ্ণ