২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:৩৬

কোরবানির তাৎপর্য ও ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক:
কোরবানি একটি ফজিলতময় ইবাদত। এটা মুসলিম উম্মাহর সমুন্নত ঐতিহ্যের একটি অন্যতম নিদর্শন। মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) এর ত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অনুপম দৃষ্টান্ত হলো কোরবানি। আল্লাহর প্রিয় বন্ধু হজরত ইবরাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে একমাত্র পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করার কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তখন থেকেই তাদের ত্যাগের অবিস্মরণীয় স্মৃতিকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে কোরবানি বা ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়ে আসছে। ইসলামের পরিভাষায় প্রত্যেক সক্ষম ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত পশু আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে জবাই করাকে কোরবানি বলা হয়।

কোরআনে কোরবানির নির্দেশ
কোরবানি আল্লাহ প্রদত্ত একটি নেয়ামত। এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে। কোরবানির পশু জবাই করার ক্ষেত্রে শরিয়তের নীতিমালার অনুসরণ করতে হবে। শুধু জবাই করলেই পশুর গোশত হালাল হয় না, বরং এ ক্ষেত্রে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা ওয়াজিব। তাহলে পশুর গোশত মুসলিম উম্মাহর জন্য হালাল হবে। তবে কোরবানির গোশত নিজে খাওয়া, আত্মীয়স্বজন ও গরিব-মিসকিনকে প্রদান করা সুন্নত। কারণ নবীজি (সা.) কোরবানির গোশতকে এভাবে তিন ভাগে ভাগ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তুমি ঘোষণা করে দাও মানুষের মধ্যে হজের। তারা আসবে তোমার কাছে পায়ে হেঁটে এবং উটে চড়ে, যা আসবে দূরদূরান্ত থেকে যাতে তারা শামিল হয় তাদের লাভের ব্যাপারগুলোতে এবং স্মরণ করে আল্লাহর নাম গৃহপালিত চতুষ্পদ পশুর ওপরে, যা আল্লাহ দান করেছেন কতক নির্দিষ্ট দিনে। অতঃপর তোমরা নিজেরাও খাও এটা থেকে এবং গরিব অভাবীকেও খাওয়াও।’ (সূরা হজ : ২৭-২৮)। তিনি আরও বলেন, ‘আমি নির্ধারণ করেছি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানির নিয়ম, যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে গৃহপালিত চতুষ্পদ পশুর ওপরে। (সূরা হজ : ৩৪)।

হাদিসের আলোকে কোরবানি
রাসুল (সা.) নিজেও কোরবানি করেছেন এবং উম্মতদেরও তা করার জন্য হুকুম দিয়েছেন। সেই সঙ্গে নিজের কোরবানির পশুকে নিজে জবাই করাকে সুন্নত বলেছেন। তবে বর্তমান সমাজে পশু জবাইকালে কোরবানিদাতারা মাওলানার অপেক্ষায় থাকেন। এমন অপেক্ষা জরুরি নয়। জবাই করার সুন্নত তরিকা জানা থাকলে নিজের কোরবানির পশু নিজেই জবাই করা উত্তম। হাদিসেও এর বর্ণনা রয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) আদেশ দিলেন এমন একটি শিংদার দুম্বা আনতে যা কালোতে হাঁটে, কালোতে শোয় ও কালোতে দেখে, যাতে তিনি তা কোরবানি করতে পারেন। সুতরাং তাঁর জন্য এরূপ একটি দুম্বা আনা হলো। তখন তিনি বললেন, হে আয়েশা! ছুরিটি দাও, অতঃপর বললেন, পাথরে ছুরিটি ধারালো করো। আয়েশা বলেন, আমি তা করলাম। অতঃপর তিনি তা গ্রহণ করলেন এবং দুম্বাকে ধরলেন, এরপর তাকে কাত করে শোয়ালেন এবং জবাই করতে গিয়ে বললেন, ‘বিসমিল্লাহ’ হে আল্লাহ! তুমি এটা মুহাম্মদ, মুহাম্মদের পরিবার এবং মুহাম্মদের উম্মতদের পক্ষ থেকে কবুল করো। অতঃপর এটা দ্বারা তিনি লোকদের সকালের খানা খাওয়ালেন।’ (মুসলিম : ৫২০৩)। হাদিসে আরও আছে, হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করেছেন আর বরাবর কোরবানি করেছেন।’ (তিরমিজি : ১৫৮৯)।

ইসলামে কোরবানির ফজিলত
ইসলামে কোরবানির ফজিলত অপরিসীম। এটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভের অনন্য সোপান। হজরত ইবরাহিম ও হজরত ইসমাইল (আ.) এর ত্যাগের বিনিময়ে মুসলিম উম্মাহর ওপর এই কোরবানি সুন্নতরূপে অর্পিত হয়। কোরবানির গুরুত্ব সম্পর্কে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর হাদিস রয়েছে। যেমনÑ হজরত যাইদ বিন আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একদা সাহাবারা রাসুল (সা.) কে প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কোরবানি কী? উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, এটা তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) এর সুন্নত। তারা পুনরায় প্রশ্ন করলেন, এতে আমাদের জন্য কী প্রতিদান আছে? প্রতি উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, কোরবানির পশুর প্রতিটি লোমের বিনিময়ে এক একটি সওয়াব পাবে। পুনরায় সাহাবারা প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! উট বা দুম্বার পশমের কী হুকুম? তদুত্তরে নবীজি (সা.) বললেন, এসবেরও প্রতিটি পশমের পরিবর্তে নেকি পাবে।’ (ইবনে মাজাহ : ৩২৪৭)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘কোরবানির দিন কোরবানির রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় অন্য কোনো আমল আল্লাহর কাছে নেই। ওই ব্যক্তি কেয়ামতের দিন জবাইকৃত পশুর লোম, শিং, খুর, পশম ইত্যাদি নিয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে উপস্থিত হবে। কোরবানির রক্ত মাটিতে পতিত হওয়ার আগেই তা আল্লাহ তায়ালার কাছে পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পবিত্র মনে কোরবানি আদায় করো।’ (তিরমিজি : ১৫৭২)।

প্রকাশ :আগস্ট ১৬, ২০১৮ ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ