’নিজস্ব প্রতিবেদক:
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক বদলি নীতিমালা সংশোধনে আগ্রহী নয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মেট্রোপলিটন ও সিটি কর্পোরেশনে শিক্ষক বদলিতে তদবিরের হিড়িক পড়ায় নীতিমালা সংশোধনের কাজ স্থগিত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে দুবার এবং ২০১১ ও ২০১৫ সাল মিলে মোট চারবার প্রাথমিকের ‘শিক্ষক বদলি নীতিমালা’ পরিবর্তন করা হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালে পঞ্চমবারের মতো বদলি নীতিমালা যুগোপযোগী করতে খসড়া নীতিমালায় অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। তবে চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই মন্ত্রণালয়ে শিক্ষক বদলিতে তদবিরের হিড়িক পড়ে। ফলে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রণালয়।
প্রণীত খসড়ার ৩-এর ৯ ধারায় বলা হয়েছে, প্রাথমিকের শিক্ষিকারা স্বামীর কর্মস্থল এলাকা বা এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় বদলি (পদশূন্য থাকা সাপেক্ষে) হতে পারবেন। আগে স্বামীর নিজ জেলায় শিক্ষিকারা বদলি হতে পারলেও স্বামীর কর্মস্থল এলাকায় বদলিতে অনেক জটিলতা পোহাতে হতো, যা ছিল অনেকটা দুঃসাধ্য। নীতিমালা পরিবর্তন হলে মানবিক কারণসহ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে সারা বছর বদলির আবেদন করা যাবে। ফলে স্বামীর সঙ্গেই থাকতে পারবেন প্রাথমিকের শিক্ষিকারা।
২০১৫ সালে শিক্ষকের স্ত্রী/স্বামী সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত কোনো প্রতিষ্ঠানের চাকরি করলে সেখানে কর্মস্থলে বদলির করা যেত। আধাসরকারি ধারায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে ‘আধাসরকারি’ শব্দটি বাদ দিয়ে নতুন করে তফসিলভুক্ত ব্যাংক ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কর্মস্থলে বদলি হওয়া যাবে বলে ধারায় বলা হয়।
খসড়া নীতিমালায় আরও বলা হয়, চাকরি পাওয়ার পর নারী শিক্ষকদের বিয়ে হলে স্বামীর কর্মস্থলের পার্শ্ববর্তী স্কুলে বদলি হতে পারবেন। প্রতিবন্ধী শিক্ষকদের স্থায়ী ঠিকানার পার্শ্ববর্তী এলাকার স্কুলে বদলি করা যাবে। স্বামী মারা গেলে বা বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সুবিধামতো স্থানসহ বিশেষ কোনো কারণে বছরের যে কোনো সময় বদলি হওয়া যাবে। দুর্গম এলাকায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা চাকরির মেয়াদ ১০ বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর পর নিজ এলাকায় বদলি হতে পারবেন। এছাড়া জাতীয়করণ হওয়া অনেক শিক্ষককে ভিন্ন জেলায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তারা প্রেষণে নিজ জেলায় বদলি হতে পারবেন।
তবে সাধারণ বদলির ক্ষেত্রে বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আবেদনের সময় নির্ধারিত রয়েছে। আগের মতো শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ দুই বছর পূর্ণ হলে বদলির আবেদন করতে পারবেন। এক বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বদলির আবেদন করা যাবে না। তবে বিশেষ কারণে যে কোনো সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালক, প্রাথমিক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিভাগীয় উপ-পরিচালকের সুপারিশে সুবিধামতো স্থানে বদলি হওয়া যাবে।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, নীতিমালা জারি হওয়ার আগেই মেট্রোপলিটন ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বদলির আবেদনের হিড়িক পড়ে। পদ শূন্য না থাকলেও বিভিন্ন মহল থেকে বদলির তদবির শুরু হয়। তদবির সামলাতে মন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিপাকে পড়েন। এ কারণে মন্ত্রীর পরামর্শে বদলির কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষক বদলির বিষয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা তৈরি হয়েছে। গত আড়াই বছরে ১২০০ শিক্ষক বদলির পর মেট্রোপলিটন ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বদলি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। সবাই শুধু জেলা শহর আর ঢাকায় আসতে চান, মফস্বলে কেউ থাকতে চান না। শূন্য আসন না থাকায় এসব এলাকায় নতুন করে আর শিক্ষক বদলির প্রয়োজন নেই। এ কারণে নীতিমালা সংশোধনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে নারী শিক্ষকরা নানা সমস্যায় পড়েন। এতে সেখানে তার অবস্থান অসম্ভব হয়ে পড়ে। নানা ধরনের মানবিক কারণে শিক্ষকদের সুবিধামতো স্থানে বদলিতে আমরা নীতিমালা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু দেখা গেছে, ভালো স্থানে বদলি হতে সবাই নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ে ভিড় জমাতে শুরু করেন। এ কারণে ২০১৭ সাল থেকে মেট্রোপলিটন ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বদলি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
‘প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে এ নীতিমালা সংশোধন করা হবে’ বলেও জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী।