নিজস্ব প্রতিবেদক:
নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেক রাজনৈতিক ফ্লেভার দিতেই মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেবরা শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে পারছেন না বলেই এখন প্রলাপ বকতে শুরু করেছেন। গুজবের আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষমতাসীন নেতারা তাদের নিজস্ব মিডিয়া দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে নোংরা অপপ্রচারে মেতে উঠেছেন। ছাত্র আন্দোলনের সহিংসতায় বিএনপিকে জড়াতে তারা কুৎসিত অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।’
আজ বুধবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়াপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহদফতর সম্পাদ মো: মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
‘কোথায় কি হচ্ছে আমরা জানি…’, গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, আমার প্রশ্ন ১/১১’র কুশিলব কারা? তাহলে আপনারা কে? আপনাদের আন্দোলনের ফসলই তো ১/১১। আপনিই তো ১/১১’র প্রক্রিয়াকে মহিমান্বিত করে তা ‘পাঠশালা’ হিসোবে আখ্যায়িত করেছিলেন। আপনাদের আন্দোলনের ফসলের বিরুদ্ধে এখন বিরূপ মন্তব্য করছেন কেনো? তারা আপনাদের এতো প্রিয় ছিল যে, তাদের সব অপরাধ ও বেআইনি কাজ বৈধ করে দেবেন বলেছিলেন এবং ক্ষমতায় এসে তা করেছেন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ১০ বছর আপনারা ক্ষমতায়। জনগণের ইচ্ছাকে হানাদার বাহিনীর মতো পদদলিত করে র্যাব-পুলিশকে নিজেদের মতো সাজিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-শ্রমিকলীগকে বেআইনী অস্ত্রে সজ্জিত করে গণতন্ত্রকে নিশ্চিহ্ন করার পরও ১/১১’র কুশীলব নিয়ে কথা বললে মানুষ মুখ টিপে হাসে। কারণ জোরে হাসলে গুম হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবরা শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে পারছেন না বলেই এখন প্রলাপ বকতে শুরু করেছেন, গুজবের আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষমতাসীন নেতারা তাদের নিজস্ব মিডিয়া দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে নোংরা অপপ্রচারে মেতে উঠেছেন। ছাত্র আন্দোলনের সহিংসতায় বিএনপিকে জড়াতে তারা কুৎসিত অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।
রিজভী বলেন, ৬ আগস্ট দৈনিক জনকণ্ঠে একটি ছবি ছাপা হয়েছে, যে ছবিটি ৬ বছরের পুরোনো, ২০১২ সালের ২৫ জানুয়ারি দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশিত একটি ছবি। ছবিতে দেখানো হয়েছে ছাত্রদলের এক নেতার নাম, আসলে সে ছাত্রদলের নেতা নন এটা ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ছবি। ছবিতে যারা ছিল তারা সবাই ছাত্রলীগ। জনমনকে বিভ্রান্ত করতে বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার জন্য সরকারি প্রোপাগান্ডা মেশিন দিনরাত কাজ করছে। যেটার নজির গত ৬ আগস্ট জনকণ্ঠে দেখানো হলো। সরকারের প্ররোচণায় পত্রিকাটি গুজব রটিয়ে চলছে। আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি।
রিজভী বলেন, দেশে শান্তিময় অবস্থার কথা ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, কিন্তু বলেননি কি ধরণের শান্তি। হত্যা, গুপ্তহত্যা, ক্রসফায়ার, গুম আর অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ভয়ে আতঙ্কিত মানুষকে দেখে তিনি শান্তিময় বলতেই পারেন। কিন্তু সেটা যে কবরের শান্তি, গোরস্থানের নীরবতা, তা তিনি টের পান না ক্ষমতার উষ্ণতায়। কিন্তু নীরব মানুষের ক্ষোভ যে ছাই চাপা আগুনের মতো ধিকি ধিকি জ্বলছে এবং সেটা যে কোনো সময় কুন্ডলী পাকিয়ে বিরাট আকার ধারণ করতে পারে সেটির আঁচ পেরেই বেসামাল কথা বলছেন। ওবায়দুল কাদের, গতকাল আপনাদেরই একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী পরোক্ষে আপনাদের উদ্দেশ করেই স্বৈরাচারি চেহারার কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, গণমাধ্যমের স্বাাধীনতা নেই উল্টো গণমাধ্যমের ওপর চলছে দলন নিপীড়ন, সশস্ত্র হামলা। রক্তাক্ত আক্রমণের শিকার হচ্ছেন তারা। ধমক দেয়া হচ্ছে ইলকট্রনিক্স মাধ্যমকে।
তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত মানুষ গুম হচ্ছে, বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছে মানুষ। মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। ন্যায়বিচারের বাণী গুমরে গুমরে কাঁদছে। দেশজুড়ে লুটের রাজত্ব চলছে সবই আছে সাবেক ওই প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে। এই বিভৎস্য অনাচারমূলক অরাজক পরিস্থিতিকেই কি ওবায়দুল কাদের শান্তিময় পরিবেশ বলতে চাচ্ছেন।
‘নির্বাচনে অনিয়ম হবে না, সে নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না’- প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া তিনি বলেন, কেন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না? কারণ ওবায়দুল কাদেররা সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশও ধ্বংস করে দিয়েছে। কাদের সাহেব, আপনারা যতই ধাপ্পাবাজি করুন না কেনো, জনগণের কাছে জবাব দেয়ার সময় হয়ে গেছে। জবাব দিতে হবে পাথর লুটের, কয়লা লুটের, ব্যাংক লুটের, শেয়ারবাজার লুটসহ সমস্ত আর্থিক খাত ধ্বংসের। জবাব দিতে হবে অসংখ্য গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যার। জবাব দিতে গণতন্ত্র হত্যার, রাজনীতি ধ্বংস করার, মানুষের ভোটাধিকার হরণের। জবাব দিতে হবে বাকস্বাধীনতা হরণের। জবাব দিতে তরুণ সমাজের সাথে প্রতারণার। ষড়যন্ত্রের কথা বলে পার পাওয়া যাবে না। আপনারাই প্রতিনিয়ত দেশ ও দেশের মানুষের সাথে চক্রান্ত করে চলেছেন।
রিজভী বলেন, গতকাল দেখা গেছে কীভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ শিক্ষার্থীকে কোমরে দড়ি লাগিয়ে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। এ যেন গোটা ছাত্রসমাজের কোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নেয়া হচ্ছে। এটা জাতির জন্য শুধু লজ্জার নয়, এ দৃশ্য দেখে মানুষ ধিক্কার জানাচ্ছে। সরকার কতটা নিষ্ঠুর, নির্মম হতে পারে যে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের ন্যায্য আন্দোলনের দাবি দমন করতে তাদরে গ্রেফতার করে পায়ে ডান্ডাবেড়ি ও কোমরে দড়ি দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে কতটা নির্মমতার পথ বেছে নিতে পারে, এটি তার একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ।
তিনি বলেন, তারা তো কোনো অন্যায় করেনি। নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। এমন ন্যাক্কারজনক দৃশ্যের নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। অবিলম্বে তাদের রিমান্ড বাতিল করে মুক্তি দিতে হবে। এছাড়াও গতকাল চলমান ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থীকে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। আসলে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের ডি-ফ্যাক্টো কর্তৃপক্ষ হচ্ছে ছাত্রলীগ। তাদের কথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন উঠে বসে, সেজন্যই ছাত্রলীগের হুকুমই তামিল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রলীগের কারণেই সেখানে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো নিরাপত্তা নেই। সর্বব্যাপী নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্ররা প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। তাদেরকে দমিয়ে রাখা যাবে না। ন্যায্য দাবির আন্দোলনে তারা বিজয়ী হবেই।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, চলমান ছাত্র আন্দোলন সমাধানহীন সরকারি সহিংসতার ছোবলে রক্তাক্ত। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে না নিয়ে এখন অবলম্বন করা হয়েছে নির্যাতনের পথ। দেখানো হচ্ছে নানা ধরণের নাটক ও প্রহসন। আন্দোলন শুরু হওয়ার দুদিন পর ওবায়দুল কাদের বললেন এবার মাঠে নামবে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগকে তো মাঠে নামানো হলো কি কারণে তার নমুনা তো সারা দেশবাসী দেখলো। নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের সশস্ত্র হামলা করতে ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা করতেই তাদের নামনো হয়েছিল। রক্তাক্ত শরীরে ভয়ার্ত আর্তনাদে ছুটাছুটি করতে দেখা গেছে কোমলমতি শিক্ষার্থী আর সাংবাদিকদের। আন্দোলন দমাতে এখন সরকারি সহিংসতার পাশাপশি তারা নির্বিচারে মিথ্যা মামলা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে।
রিজভী বলেন, স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের আন্দোলনে বিএনপিকে জড়াতে হীন কৌশল তারা প্রথম থেকেই এঁটে আসছে। এখন সেটা জোরেশোরে শুরু করেছে ঢাকার বিভিন্ন থানায় মিথ্যা দিয়ে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতি আন্দোলনকে রাজনৈতিক ফ্লেভার দেয়ার জন্যই এ মিথ্যা মামলা। বানোয়াট মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহববুল হক নান্নুকে, নির্বাহী কমিটির সদস্য মেহেরুন্নেছা হককে, অনলাইন এক্টিভিস্ট মাহাদী আরজান ইভান, রাজন বেপারী, ফাতেমা খানম, শান্ত ইসলাম জুম্মন, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক মেজবাহ উদ্দিন পিয়াসকে ও যুবদল নেতা টিপু সুলতান মজুমদারকে। আমি অবিলম্বে আটকৃত নেতৃবৃন্দের মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।