আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পূর্ব ইউরোপের বর্বর রাষ্ট্র সার্বিয়া দেশটির একটি দ্বিতল মসজিদ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। গত ২৬ মে শুক্রবার রাজধানী বেলগ্রেডের জেমিন পৌর কর্তৃপক্ষ দেশটির মুসলিম নাগরিকদের দ্বিতীয় উপসনালয়টি ভেঙ্গে দেয়। পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে এমন অজুহাতে তারা এই বর্বরতা দেখায়।
দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ আশা করলেও এখন পর্যন্ত তিনি এ বিষয়ে নির্বিকার, নির্বাক। তার কাছ থেকে কোনো ধরনের সাড়া পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন তারা। খবর রয়টার্স, ইনসার্বিয়া ইনফো, হিন্দুস্তান টাইমসের।২০১৪ সালে আলোচিত মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কর্তৃপক্ষের নানা ধরনের বাধার মুখে থেমে থেমে এর নির্মাণ কাজ চলেছে। দেড় কোটি জনসংখ্যার বেলগ্রেড শহরে ২০ হাজার মাসলমান বাস করে। তাদের জন্য মাত্র একটি মসজিদ রয়েছে, যেটি অটোমান সাম্রাজ্য তথা তুরস্কের শাসনামলে ১৫৭৫ সালে নির্মাণ করা হয়। এটি সার্বিয়ার দ্বিতীয় মসজিদ। এর পর দ্বিতীয়তম মসজিদ হিসেবে আলোচিত মসজিদটির নির্মাণ শুরু হয় স্থানীয় মুসলমানদের নিজস্ব অর্থায়নে। গত ২৫ মে পৌর কর্তৃপক্ষ মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলতে আসে। কিন্তু সেদিন বিপুল সংখ্যক নারী, পুরুষ, শিশু তাতে বাধা দিলে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। তবে তাতে দমে যায়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। পরদিন শুরুবার বিপুল সংখ্যক সশস্ত্র পুলিশ দিয়ে পুরো মসজিদ এলাকা ঘিরে ফেলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হতাশা, কান্নাকে উপেক্ষা করে মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলে তারা। মসজিদ কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা বার বার পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে মসজিদটির অনুমোদন চেয়েছেন। কিন্তু তারা এই অনুমোদন দেননি। অনুমোদনহীনতার অজুহাত দেখিয়ে মসজিদটি ভেঙ্গে দেওয়া হলেও, এর মাত্র ৩০০ মিটার দূরে নির্মিত অনুমোদনহীন একটি চার্চে কিন্তু একটি আচঁড়ও বসায়নি জেমিন পৌরকর্তৃপক্ষ। বেলগ্রেডের শীর্ষ ধর্মবেত্তা মুফতি মোস্তফা বিষয়টিকে দুঃখজনক, সাম্প্রদায়িক ও বর্বর ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে পবিত্র রমজান মাস শুরুর ঠিক আগে আগে।
তিনি অভিযোগ করেন, কর্তৃপক্ষ গত ৫০ বছরে বেলগ্রেডে কোনো মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেয়নি। এদিকে মসজিদটির ইমাম জেজনুলাহু বলেছেন, পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের একটি চুক্তি হয়েছিল। সে চুক্তি অনুসারে তারা নিজেরাই মসজিদটির কিছু অংশ সরিয়ে ছোট করে নেবেন অঙ্গীকার করেছিলেন। বিনিময়ে মসজিদের বাকী অংশের অনুমোদন দেবার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সেই চুক্তির প্রতি সম্মান দেখায়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি বলেছেন, এটি হচ্ছে দুর্বলের উপর সবলের পেশিশক্তির প্রয়োগ। তারপরও তারা ধর্মপ্রাণ মুসলিমদেরকে সংযত থাকার ও ধৈর্য ধরার আহ্বান করেছেন বলে বার্তসংস্থা তানজুংকে বলেছেন। তিনি এ-ও বলেছেন, মসজিদ ধংস করার কারণে তাদের বিশ্বাসে কোনো চিড় ধরবে না। প্রয়োজনে তারা রাস্তায় নামাজ পড়বেন। সেখান থেকে কেউ তাদেরকে ফেরাতে পারবে না।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ