নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থ পাচার নিয়ে বৈশ্বিক কোনো সংস্থার প্রতিবেদন প্রকাশ হলেই সেখানে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের তথ্য রয়েছে। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড প্রতিবেদন, মোসাক ফনসেকার পানামা পেপারস বা ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্গ্নোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের তথ্য আসছে বারবার।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, দুঃখের বিষয় বিশ্বের সকল উন্নয়নশীল দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে। চীন, ভারতের মতো বড় দেশ থেকে পাচার হচ্ছে বেশি। বর্তমানে উন্নত দেশ থেকেও অর্থ নিয়ে যাওয়ার জন্য নানান ধরনের টোপ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে উন্নত জীবন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা সুবিধার কথা বলছে উন্নত দেশগুলো। এই সুবিধা পাওয়ার জন্য উন্নয়নশীল দেশের ধনীরা অর্থ পাচার করছে। এ ছাড়া যেসব দেশে গণতান্ত্রিক স্বস্তি কম, বাকস্বাধীনতার অভাব, স্বাস্থ্য শিক্ষার সুযোগ কম সে সব দেশ থেকেও অর্থ যাচ্ছে। বিনিয়োগ সুবিধার অভাবেও অনেকে অন্য দেশে অর্থ নিয়ে যাচ্ছেন।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বলেছেন, কিছু অর্থ পাচার হচ্ছে। নিরাপত্তা ও বিনিয়োগ সুবিধার অভাবে অর্থ বিদেশে নিচ্ছেন তারা। বিএনপি নেতা সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বিনিয়োগ সুবিধা না থাকায় উদ্যোক্তারা বিদেশে অর্থ নিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল সমকালকে বলেন, অর্থ পাচার রোধে যে ধরনের আইন, গোয়েন্দা তৎপরতা ও গবেষণা দরকার সেগুলো না থাকায় পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি পাচার বাড়ছেও। একদিকে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, অন্যদিকে অর্থ পাচার বাড়ছে, এ দুটোর মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা দরকার।
তবে বারবার বিভিন্ন প্রতিবেদনে অর্থ পাচারের তথ্য উঠে এলেও তা ঠেকাতে বিশেষ উদ্যোগ দেখা যায় না। এসব তথ্য যখন প্রকাশিত হয় তখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংক কারা পাচার করেছে তা বের করার জন্য তৎপর হয়। কিন্তু পাচারকারী ব্যক্তি ও পাচার হওয়া অর্থ আইনের আওতায় আনা তো দূরের কথা, বছর শেষে পাচারের অঙ্ক বড় হচ্ছে। পাচার ঠেকাতে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই।
গত বছর জিএফআই প্রতিবেদন প্রকাশের পর রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। প্রতিবেদনকে ‘আই ওপেনিং রিপোর্ট বা চোখ খুলে দেওয়া প্রতিবেদন’ উল্লেখ করে পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কারা অর্থ পাচার করেছে তার তথ্য পাওয়ার জন্য সুইস ব্যাংকের সঙ্গে কয়েক দফা চিঠি চালাচালি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিছুদিন যাওয়ার পর এ বিষয়ে আর কোনো উৎসাহ, উদ্যোগ দেখা যায় না।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, পণ্যমূল্য বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে যাতে আমদানি-রফতানি না হয় সে নির্দেশনা ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হয়েছে। এজন্য এলসির ব্যাংকের তথ্য ও কাস্টমের তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা সমকালকে বলেন, আমদানি-রফতানির মাধ্যমে যাতে অর্থ পাচার না হয় সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাচার অর্থের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। – See more at: http://bangla.samakal.net/2017/05/04/289988#sthash.ePCbQAhx.dpuf