স্বাস্থ্য ডেস্ক:
ব্রেইন টিউমার যেকোন আকার বা গঠনের হতে পারে এবং লক্ষণ ও হতে পারে বিভিন্ন। আমেরিকার অয়েইল কর্নেল ব্রেইন এন্ড স্পাইন সেন্টার এর এমডি এবং নিউরোসার্জন থিওডর স্কোয়ারটজ বলেন, টিউমারের লক্ষণ নির্ভর করে এর অবস্থানের উপর। স্কোয়ারটজ বলেন, উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে – যদি আপনার টিউমারটি মস্তিষ্কের এমন অংশে হয় যা আপনার বাহু ও দৃষ্টি শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে আপনার মধ্যে বাহু দুর্বল অনুভব করা বা দৃষ্টিশক্তি ঘোলা হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাবে। তারপরও ব্রেইন টিউমারের সাধারণ কিছু লক্ষণের বিষয়ে জেনে আসি চলুন।
খিঁচুনি
টিউমারের ধরণ যাই হোকনা কেন খিঁচুনি হচ্ছে এর প্রথম লক্ষণ। স্কোয়ারটজ বলেন, টিউমারের যন্ত্রণার কারণে মস্তিষ্কের নিউরনের কাজ অনিয়ন্ত্রিত হয় এবং আপনার চলাফেরায় অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। টিউমারের মত খিঁচুনিও অনেক ধরনের হতে পারে। আপনার সারা শরীরে খিঁচুনি বা ঝাঁকুনি দেখা দিতে পারে অথবা একটি বাহুতে বা মুখের একপাশে বাঁকা হয়ে যেতে পারে।
জড়তা
স্কোয়ারটজ বলেন, যদি আপনি এলোমেলোভাবে হাটেন বা আপনার ভারসাম্যের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়, হাত বা পা চলাচলের ক্ষেত্রে ধীর গতি দেখা যায় তাহলে তা বড় কোন সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। তিনি আরো বলেন যে, কথা বলতে, ঢোক গিলতে বা মুখের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সমস্যা হলে বোঝা যায় যে, আপনার মাথার ভেতরে বা এর চারপাশে কোন সমস্যার কারণেই এমন হচ্ছে।
অসাড়তা
স্কোয়ারটজ বলেন, শরীরের কোন একটি অংশের বা চেহারার অনুভূতি কমে যাওয়ার মত লক্ষণ দেখা দিলে সজাগ হওয়া প্রয়োজন। যদি আপনার টিউমারটি মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের সংযোগস্থলে হয় তাহলে আপনার অনুভূতি কমে যাওয়া বা চলাফেরায় জড়তার অভিজ্ঞতা হতে পারে।
স্মৃতি বা চিন্তায় পরিবর্তন হওয়া
টিউমার মানুষের চেহারা বা ব্যক্তিত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে এটা সত্যি হলেও সিনেমায় যেমন আমূল পরিবর্তন দেখানো হয় তা অস্বাভাবিক বলেন স্কোয়ারটজ। তিনি বলেন, টিউমারে আক্রান্তদের কোন কিছু মনে রাখতে সমস্যা হতে পারে, দ্বিধায় ভুগতে পারেন বা চিন্তা করার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।
বমি বমি ভাব
স্কোয়ারটজ বলেন, বমি বমি ভাব হওয়া বা অসুস্থ অনুভব করা, বিশেষ করে পাকস্থলীতে ক্রমাগত ও অকারণে সমস্যা হওয়া টিউমারের লক্ষণ হতে পারে।
দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন হওয়া
স্কোয়ারটজ বলেন, ঝাপসা দৃষ্টি, দ্বৈত দৃষ্টি এবং দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া টিউমারের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। আপনি চোখের সামনে কোন দাগ বা কোন আকৃতি ভাসতে দেখতে পারেন।
মাথাব্যথা
আমরা যেমন মনে করি তেমনি মাথাব্যথা ব্রেইন টিউমারের নির্দেশক নয়। স্কোয়ারটজ বলেন, টিউমার অনেক বড় হয়ে গেলে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারে, তবে সাধারণত এটি প্রাথমিক লক্ষণ নয়।
ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা ও খিটখিটে মেজাজ
ব্রেইন টিউমার থাকলে রোগীদের মাঝে ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি এমনকি খিটখিটে মেজাজের প্রবণতা দেখা যায়। তারা ক্রমাগত ঝুঁকিপূর্ণ কাজের প্রতি আগ্রহ দেখাতে থাকে, আগ্রাসী মনোভাব প্রদর্শন করে।
শ্রবণশক্তি হারানো ও কানে তালা লাগা
একদিকের কানে শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া বা একেবারেই কিছু শুনতে না পারা, অথবা কানে তালা লাগার মতো বা অবিরত ঘণ্টার মতো শব্দ শোনা গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন দ্রুত।
বন্ধ্যাত্ব
মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের কাজ হলো শরীরের বিভিন্ন হরমোনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ। মস্তিষ্কে টিউমারের কারণে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড প্রভাবিত হলে নারীরা গর্ভধারণে অক্ষম হতে পারেন অথবা সন্তান প্রসবের পর স্তন্যদানে অক্ষম হতে পারেন।
ভারসাম্যহীনতা
হাঁটার সময় ভারসাম্য রাখতে অসুবিধা, বিশেষ করে অন্ধকারে হাঁটতে সমস্যা বা একদিকে ঝুঁকে হাঁটার প্রবণতা হতে পারে মস্তিষ্কের সেরেবেলাম অংশে টিউমারের লক্ষণ।
ক্লান্তি ও আলস্য
মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্স অংশটি সারা শরীরে পেশী নিয়ন্ত্রণ করে। ডানদিকের মোটর কর্টেক্স শরীরের বামদিক নিয়ন্ত্রণ করে, আর বামদিকের মোটর কর্টেক্স শরীরের ডানদিক নিয়ন্ত্রণ করে। এসব জায়গায় টিউমার থাকলে শরীরে ব্যথা হবে না, তবে হাত-পায়ে দুর্বলতা, এসব অঙ্গ নড়াচড়া করতে সমস্যা হতে পারে।
স্কোয়ারটজ বলেন, জেনেটিক ডিজঅর্ডারের কারণে ব্রেইন টিউমার হতে পারে। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, বেশিরভাগ টিউমারেরই জানা কোন রিস্ক ফ্যাক্টর বা পূর্বাভাস নেই। তিনি আরো বলেন, শিশু এবং ৬০ বছরের বেশি বয়স্কদের টিউমার হয়ে থাকে, কিন্তু যেকোন বয়সের মানুষেরই টিউমার হতে পারে।
ব্রেইন টিউমার হওয়ার কারণ
সেল ফোন টিউমারের রিস্ক ফ্যাক্টর নয়। তিনি বলেন, এটি একটি সাধারণ ভুল ধারণা, সেল ফোন ও টিউমারের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের বিষয়ে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বড় বা ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের চিকিৎসায় সার্জারি, ঔষধ, রেডিয়েশন বা কেমোথেরাপি দেয়া হয়। ভালো খবর হচ্ছে – সব ব্রেইন টিউমারই মারাত্মক নয়। স্কোয়ারটজ বলেন, ‘অনেক টিউমারই ছোট এবং বিনাইন ধরনের হয় এবং কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়না’। স্কোয়ারটজ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘যদি আমরা কারো টিউমার শনাক্ত করতে পারি তাহলে আমরা এর বৃদ্ধি ও পরিবর্তনকে পর্যবেক্ষণ করি’।