নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাজেটে সংকুচিত ভিত্তি মূল্য তুলে দিয়ে জুয়েলারি খাতে ১৫% ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। যা পার্শ্ববর্তী দেশে মূসকের হার কম থাকায় ক্রেতাগণ স্থানীয় বাজার থেকে স্বর্ণালঙ্কার না কিনে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে স্বর্ণালঙ্কার ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করবে বলে আশঙ্কা করছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। শনিবার রাজধানীর ফেডারেশন ভবনের সম্মেলন কক্ষে দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ (এফবিসিসিআই) নয়টি ব্যবসায়িক সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।
এসময় এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বাজেটে সঙ্কুচিত ভিত্তি মূল্য তুলে দিয়ে জুয়েলারি খাতে ১৫% ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এতে করে ক্রেতা সাধারণকে বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী ভরিতে প্রায় ৭ হাজার টাকা ভ্যাট প্রদান করতে হবে। যা পার্শ্ববর্তী দেশে মূসকের হার কম থাকায় ক্রেতারা স্থানীয় বাজার থেকে স্বর্ণালঙ্কার না কিনে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে স্বর্ণালঙ্কার ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করবে। এতে স্থানীয় জুয়েলারি শিল্প যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনি সরকার রাজস্ব হারাবে। এ অবস্থায় জুয়েলারি শিল্পের স্বার্থে শুধুমাত্র মজুরীর উপর ১৫% ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করছি। এসময় তিনি প্রস্তাবিত বাজেটে বেশকিছু পণ্যের পর ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি করেন। তিনি বলেন, প্লাস্টিকের বর্জ্য থেকে তৈরী রি-সাইক্লিং দানা (এইচ এস কোড ৩৯.০২) ভ্যাট অব্যাহতি পণ্য হিসেবে আছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এ অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে আমরা রি-সাইক্লিং দানার উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছি।
চপ্পল ও পাদুকা ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার প্রস্তাব করে তিনি বলেন, নিম্ন ও দরিদ্র আয়ের ব্যবহৃত প্লাস্টিক ক্রোকারিজ আইটেম (এইচ এস হেডিং ৩৯.২৪) হতে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ সমস্ত প্লাস্টিক ক্রোকারিজ পণ্য পুরাতন ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য হতে রি-সাইক্লিং করে তৈরী করা হয়ে থাকে যা পরিবেশ বান্ধব। স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষার স্বার্থে স্থানীয়ভাবে তৈরী প্লাস্টিক ক্রোকারিজ আইটেম এবং রাবার ও প্লাস্টিকের তৈরী হাওয়াই চপ্পল ও পাদুকা ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার প্রস্তাব করছি।
পাউরুটি ও হাতে তৈরী বিস্কুটের উপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করে মহিউদ্দিন বলেন, পাউরুটি ও বিস্কুট খাদ্য পণ্য। পাউরুটি রোগীর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এ পণ্যের কাঁচামালসমূহের উপর ভ্যাট না থাকায় রেয়াত গ্রহন সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে ১৫% হারে সরাসরিভাবে ভ্যাট আরোপ হবে। এর ফলে এই শিল্প এবং ক্রেতা সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সংকুচিত ভিত্তিমূল্য (ট্রাঙ্কেটেড বেজড) তুলে দেওয়ার কারনে ৩৮টি সেবা খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মোটরগাড়ীর গ্যারেজ ওয়ার্কসপ, ডকইয়ার্ড, নির্মাণসংস্থা, ভুমি উন্নয়ন সংস্থা, যোগানদার, ভবন নির্মান সংস্থা, জুয়েলারি ইত্যাদি। এসকল ক্ষেত্রে ১৫% পরিবর্তে হ্রাসকৃত হারে মূসক নির্ধারণ করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে আইন সংশোধনের জন্য আমরা আহবান জানাচ্ছি। রিয়েল এস্টেট খাতের দূদিনের কথা স্বরন করিয়ে দিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ভবন নির্মান সংস্থা বা বিভিন্ন সাইজের (বর্গফুট হিসেবে) ফ্ল্যাট বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ১.৫%, ২.৫% ও ৪.৫% মূসক-এর পরিবর্তে ১৫ শতাংশ মূসক নির্ধারন করায় রিয়েল এস্টেট সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই খাতের সাথে অনেক সাব-সেক্টরও জড়িত। যেমন- লৌহ ও ইস্পাত শিল্প, সিরামিক, সিমেন্ট ইত্যাদি। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে রিয়েল এস্টেট সেক্টর ভাল অবস্থায় নেই। অনেক ফ্ল্যাট অবিক্রিত রয়েছে। এ সেক্টরকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে হ্রাসকৃত হারে মূসক হার নির্ধারনের প্রস্তাব করছি।
এছাড়াও আন্ডার ইনভয়েসিং এবং মিস ডিক্লেরেশন এ কারনে সরকার যেমন রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বৈষম্য তৈরী হয়। এজন্য আন্ডার ইনভয়েসিং এবং মিস ডিক্লেরেশন রোধের জন্য পন্যভিত্তিক বিনিময় মূল্যের ডাটাবেজ প্রণয়নের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক নীতি সদস্যকে আহবায়ক করে এফবিসিসিআই, ট্যারিফ কমিশন, শুল্ক মূল্যায়ন কমিশনারেট-এর সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছিলাম কিন্তু বাজেটে আমরা প্রতিফলন দেখতে পায়নি। এ প্রস্তাবটিকে আবার সক্রিয় বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ