বিনোদন ডেস্ক:
নায়ক হিসেবে সফল তিনি, প্রযোজক হিসেবেও সমান সফল জন আব্রাহাম। সাফল্যের উড়ানেও মাটির সঙ্গে থাকতে পছন্দ করেন এই অভিনেতা। সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা জন আজও মধ্যবিত্ত মূল্যবোধ আঁকড়ে ধরে বাঁচতে ভালোবাসেন। ১৫ আগস্ট মুক্তি পাচ্ছে জন আব্রাহাম অভিনীত ছবি সত্যমেব জয়তে। বান্দ্রার তাজ ল্যান্ডস অ্যান্ড হোটেলে জনের মুখোমুখি প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য।
প্রশ্ন: আবার অ্যাকশন ছবিতে দেখা যাবে আপনাকে। কেমন লাগছে?
জন আব্রাহাম: আমি খুবই খুশি। অনেক দিন পর সত্যমেব জয়তের মতো পুরোপুরি একটা বাণিজ্যিক বিনোদনমূলক ছবিতে কাজ করছি। এটা পরমাণু বা মাদ্রাজ ক্যাফে নয়। সত্যমেব জয়তে একটা থালার মতো। এতে রোমান্স, অ্যাকশন, ড্রামা, আবেগ—সবকিছু আছে।
প্রশ্ন: তাহলে ‘সত্যমেব জয়তে’ কি শুধুই বিনোদনমূলক ছবি?
জন আব্রাহাম: আমার মনে হয় মিলাপ (ছবির পরিচালক) যেভাবে আমাদের সমাজের বর্তমান পরিস্থিতিকে এই ছবির মাধ্যমে বিনোদনমূলকভাবে তুলে ধরেছে, তা প্রশংসনীয়। আমরা সিনেমা হলে যাই আনন্দ পেতে। এই ছবি পুরোপুরি বিনোদনমূলক হলেও এতে মেয়েদের প্রতি হওয়া অন্যায়, ঘুষ, অরাজকতা—সব তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের দেশে মেয়েদের যেভাবে আজও হেনস্তা করা হয়, তা খুবই লজ্জাজনক।
প্রশ্ন: মনোজ বাজপেয়ির সঙ্গে দ্বিতীয়বার কাজ করলেন। কী রকম অভিজ্ঞতা?
জন আব্রাহাম: অভিনেতা হিসেবে আমি মনোজজিকে খুব শ্রদ্ধা করি। এর আগে আমি তাঁর সঙ্গে শুটআউট অ্যাট লোখন্ডওয়ালা ছবিতে কাজ করেছি। তখন মনোজজির সঙ্গে কমই কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এই ছবিতে আমরা একসঙ্গে অনেক কাজ করেছি। আর মনোজজির মতো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করলে একজন অভিনেতার মাত্রা নিজ থেকেই উচ্চ হয়ে যায়। তিনি খুবই শক্তিশালী অভিনেতা। আমি মনে করি, সব অভিনেতার একবার করে মনোজজির সঙ্গে কাজ করা উচিত। আর তিনি মানুষ হিসেবেও দুর্দান্ত।
প্রশ্ন: আপনার পরিচয় মূলত অ্যাকশন হিরো হিসেবে। কিন্তু কমেডিনির্ভর একাধিক ছবিতে আপনাকে দেখা গেছে। আপনার প্রিয় ঘরানা কোনটি?
জন আব্রাহাম: কমেডি আমার সবচেয়ে প্রিয় ঘরানা। আমি মানুষকে হাসাতে চাই। আমি মনে করি, মানুষকে হাসানো সবচেয়ে কঠিন কাজ। কমেডির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সময়। কমেডি করার জন্য সময়জ্ঞান থাকা জরুরি।
প্রশ্ন: অক্ষয় কুমার এবং আপনার জুটি সবাই খুব পছন্দ করেন। আপনারা একাধিক হিট কমেডি ছবি উপহার দিয়েছেন। আবার আপনাদের ম্যাজিক পর্দায় কবে দেখা যাবে?
জন আব্রাহাম: জানেন, কদিন আগেই গরম মাসালা ছবিটা দেখছিলাম। ছবিটা দেখার পর অক্ষয়কে ফোন করি। অক্ষয় বলে, আমাদের গরম মাসালা টু করা উচিত। আসলে আমি আর অক্ষয় দুজনেই একসঙ্গে কাজ করতে চাই। হাউসফুল টুতে আমরা অনেক দৃশ্য নিজে করেছিলাম। যা-ই হোক, আমি একটা কমেডি ছবিতে কাজ করতে চলেছি। আপাতত এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না।
প্রশ্ন: ‘সত্যমেব জয়তে’ ১৫ আগস্ট মুক্তি পাচ্ছে। স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে আপনার কোনো ছোটবেলার স্মৃতি?
জন আব্রাহাম: আমার কাছে বিশেষ দুটি দিন হলো ১৫ আগস্ট ও ২৬ জানুয়ারি। ছোটবেলা থেকেই ১৫ আগস্টকে ঘিরে রোমাঞ্চিত থাকতাম। আমার আলমারিতে সবচেয়ে মূল্যবান যে জিনিসটি সযত্নে রাখা আছে, সেটা হলো জাতীয় পতাকা।
প্রশ্ন: এই ছবির শুটিং ঘিরে কোনো ঘটনা…
জন আব্রাহাম: আমার এই ছবির ৮০ শতাংশ শুটিং রাতে হয়েছে। এদিকে আমার রাত ১০টার মধ্যে বিছানায় যাওয়ার অভ্যাস। আর ভোর সাড়ে ৪টার সময় আমি ঘুম থেকে উঠে পড়ি। তাই রাতে শুটিংয়ের ফলে আমার বডিসাইকেল বদলে গিয়েছিল। তাই দুদিন শুটিং করার পর আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। রাতে শুটিং করতে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু আমি মিলাপ এবং নিখিল আদভানিকে (প্রযোজক) কিছুতেই অসুবিধার কথা বলতে পারছিলাম না। কারণ, আমি আগে থেকে চুক্তিবদ্ধ ছিলাম। অবশেষে আমি মনোজজির দ্বারস্থ হই। তাঁকে বলি রাত ১২টার পর কীভাবে শুটিং করা যায়? তারপর তাঁর সামনেই আমি আমার সমস্যার কথা নির্মাতাদের বলি।
প্রশ্ন: প্রযোজনায় আসার পর কোন দিকটায় বেশি জোর দিতে চান?
জন আব্রাহাম: আমি এত বছরে নানা ঘরানার ছবিতে কাজ করেছি। ওয়াটার, কাবুল এক্সপ্রেস, নো স্মোকিং, গরম মাসালা, নিউ ইয়র্ক, মাদ্রাজ ক্যাফে, পরমাণুসহ একাধিক সিরিয়াস ও কমেডি ধরনের ছবি করেছি। একজন অভিনেতা তথা প্রযোজক হিসেবে আমি আরও ভালো ভালো কনটেন্ট সৃষ্টি করতে চাই। অন্য ধরনের ছবি করতে চাই, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে যেটা আমির খান করতে পেরেছেন। আমি আমিরের ছবিই দেখি। আমি চাই তাঁর মতো ভালো কনটেন্টনির্ভর ছবি বানাতে।
প্রশ্ন: একজন প্রযোজক হিসেবে নিজের মধ্যে কতটা বদল এসেছে?
জন আব্রাহাম: অনেক বদল এসেছে। প্রযোজনায় আসার পর আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে। অনেক বেশি সাহসী হয়ে উঠেছি। আগে ব্যর্থতাকে নিতে পারতাম না। এখন সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতাও সমানভাবে মেনে নিতে পারি। তরুণ অভিনেতারা আমার ব্যানারে কাজ করতে পছন্দ করেন। কারণ, আমার কনটেন্ট ভালো থাকে। আর আমি ওই ধরনের অভিনেতা নই যে নামীদামি পরিচালক ছাড়া কাজ করি না। আমি এমন সব পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি, যাঁরা আমার সময়ে তাঁদের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। কবির খান, সুজিত সরকার, অভিষেক শর্মা, মিলাপ—তাঁরা সবাই তাঁদের ক্যারিয়ারের শুরুতে আমার সঙ্গে কাজ করেছেন। আমার কারও সঙ্গে কাজ করতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, আমি কারও অতীত রেকর্ড দেখি না।
প্রশ্ন: প্রযোজক হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন প্রতিভাদের কীভাবে দেখেন?
জন আব্রাহাম: আমাদের ইন্ডাস্ট্রি প্রতিভায় ভরপুর। এ প্রজন্মের অভিনেতাদের মধ্যে বরুণ ধাওয়ান, টাইগার শ্রফ, আয়ুষ্মান খুরানা—এদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো। আমি প্রযোজক হিসেবে এমন সব কনটেন্ট আনতে চাই, যা একজন অভিনেতাকে সবার সামনে নিয়ে আসবে। নিজেকে বড় অভিনেতা হিসেবে প্রমাণ করব বলে আমি ছবি প্রযোজনা করি না। আমি বরুণ, রাজকুমার, টাইগার, এমনকি রানী মুখার্জির সঙ্গেও কাজ করতে পারি।
প্রশ্ন: প্রযোজনা না অভিনয়, আপনার কাছে কোনটা বেশি চ্যালেঞ্জিং?
জন আব্রাহাম: এটা বলা মুশকিল। আমি দুটো দিকই উপভোগ করি। দুটোই চ্যালেঞ্জিং। প্রযোজকের কাজটা থ্যাঙ্কসলেস জব। এদিকে একটা ছবি চললে এর কৃতিত্ব অভিনেতা নিয়ে যান। আবার ছবিটা না চললে গালাগালিও খান অভিনেতা।
প্রশ্ন: ‘সত্যমেব জয়তে’ ছবির ট্রেলারে দেখা গেছে বাবা-ছেলের সম্পর্কের এক শক্তিশালী বন্ধন। আপনার সঙ্গে আপনার বাবার সম্পর্ক কেমন ছিল?
জন আব্রাহাম: বাবা আমার কাছে ঈশ্বরের মতো। এই ছবিতে বাবা-ছেলের সম্পর্কের সঙ্গে আমি কোথাও কোথাও নিজেকে রিলেট করতে পারি। আমার বাবাও জীবনে কোনো দিন ঘুষ নেননি, ঘুষ দেননি। একটা সময় বাবার অংশীদার তাঁকে ঠকিয়ে সব টাকা আত্মসাৎ করেন। তখন বাবার কাছে টাকা ছিল না। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও বাবা আমাকে সৎ থাকার কথা বলেছিলেন।
প্রশ্ন: শুনেছি হৃতিক, অভিষেক, উদয় চোপড়া—তাঁরা সবাই আপনার সহপাঠী ছিলেন?
জন আব্রাহাম: বোম্বে স্কটিশ স্কুলে আমি পড়াশোনা করেছি। এরা আমার সঙ্গেই পড়াশোনা করত। হৃতিক জুনিয়র কেজি থেকে আমার সঙ্গে ছিল। বলা যায়, তখন পুরো ইন্ডাস্ট্রি এই স্কুলে পড়াশোনা করত। আদিত্য চোপড়া আমার সিনিয়র ছিলেন। আমির খান সুপার সিনিয়র ছিলেন। একতা কাপুর, রণবীর, ইমরান—এরা সবাই আমার জুনিয়র ছিল। স্কুল আমার জীবনের সেরা সময়। আর এই স্কুল এমন একটা জায়গা, যেখানে অর্থের বিচারে আপনি ফেমাস হবেন না। ক্লাসে প্রথম হলে বা ফুটবল টিমের অধিনায়ক হলে অথবা ভালো রানার হলেই আপনি স্কুলে পরিচিতি পাবেন। আমি যখন স্কুল ছেড়ে বের হলাম, তখন উপলব্ধি করলাম যে এদের কাছে গাড়ি আছে, আমার কাছে ট্রেন আছে। আর কলেজজীবন আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমার বড় প্লাস পয়েন্ট ছিল, আমি মধ্যবিত্ত। আর আমি মনে করি, মধ্যবিত্তের মূল্যবোধ সবচেয়ে মূল্যবান। একজন মধ্যবিত্তের কাছে এক টাকাটা হলো এক শ পয়সা। আমরা জিনিসের দাম জানি না, কিন্তু তার মূল্য (ভ্যালু) জানি। তখন আমার একটাই লক্ষ্য ছিল—মোটরসাইকেল কেনা। ভাইয়ের থেকে টাকা ধার করে আমি মোটরসাইকেল কিনেছিলাম। আজ যদি সব বাইক আমার কাছে থাকত, তাহলে এর সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে যেত।
প্রশ্ন: আপনি ফুটবলের বড় ভক্ত। বিশ্বকাপ ফাইনালে কাকে সাপোর্ট করেছিলেন?
জন আব্রাহাম: ফ্রান্স খুবই শক্তিশালী দল। আর ওদের এমবাপ্পে নামের ১৯ বছরের ফুটবলারটি দুর্দান্ত। তবু আমি ক্রোয়েশিয়াকে সাপোর্ট করেছিলাম। কারণ, আমি আন্ডারডগকে সাপোর্ট করি সব সময়।
প্রশ্ন: এখন বায়োপিকের ট্রেন্ড। আপনি কার ওপর বায়োপিক করতে ইচ্ছুক?
জন আব্রাহাম: আমি একদমই বায়োপিক স্রোতে গা ভাসাতে চাই না। আমি বিপরীত কিছু করতে পছন্দ করি।
প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন, সামনে আপনার কী কী ছবি আসছে?
জন আব্রাহাম: আমি এখন রোমিও আকবর অলটার ছবিতে কাজ করছি। এরপর রর কাজ শুরু হবে। নিখিল আদভানির সঙ্গে খুবই এক্সক্লুসিভ এবং একটা সত্য ঘটনার ওপর নির্মিত ছবিতে কাজ করতে চলেছি। ছবিটির নাম বাটালা হাউস।