স্বাস্থ্য ডেস্ক:
বাংলাদেশের গর্ভবতী গ্রামীন নারীদের রক্তে উচ্চ মাত্রার সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আসিসিডিডিআরবি) এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আইসিসিডিআরবি বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলার ৪৩০ জন গর্ভবতী গ্রামীণ নারীদের মধ্যে এ গবেষণা পরিচালনা করে। খববর ইউএনবির।
গবেষণার তথ্যানুসারে, জরিপে অংশ নেয়া এক তৃতীয়াংশ গর্ভবতী নারীদের রক্তে প্রতি ডিসিলিটারে (এক লিটারের এক দশমাংশ) ৫ মাইক্রোমগ্রাম উচ্চ মাত্রার সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এছাড়াও ছয় শতাংশ নারীর রক্তের প্রতি ডিসিলিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম এবং এমন একজনকে পাওয়া গেছে যার রক্তের প্রতি ডিসিলিটারে ২৯.১ মাইক্রোগ্রাম উচ্চ মাত্রার সিসা পাওয়া গেছে, যা কিনা রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধের (সিডিসি) চেয়ে ছয় গুণ বেশি।
পরিবেশে ও বিভিন্ন খাদ্য উৎসের মাধ্যমে ওইসব নারীদের মধ্যে এমন উচ্চ মাত্রার সিসার উপস্থিতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষণার সঙ্গে জড়িত সিনিয়র লেখক ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিফেন পি. লুবি।
আসিসিডিআরবি’র গবেষণা তদন্তকারী ও ওই গবেষণার সহ-লেখক সরকার মাসুদ পারভেজ বলেন, রক্তে কম মাত্রার সিসার উপস্থিতির নারীদের তুলনা করে দেখা যায়, বেশি মাত্রার সিসার উপস্থিত পাওয়া যাওয়া নারীরা ওইসবা খাদ্য খেয়েছেন যেখানে খাদ্যদ্রব্যে বেশি মাত্রায় ওষুধ ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।
আইসিডিডিআরবির গবেষকেরা গবেষণাকৃত এলাকার মাটি, পানি, হলুদ, চাল, দেশীয় ওষুধ ও কৃষিজাত ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের বিভিন্ন ‘ক্যান’ পরীক্ষা করেছেন সিসার উপস্থিতি খুঁজে বের করতে।
এদের মধ্যে খাদ্যজাত এবং কৃষি রাসায়নিক নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৭ ধরনের হলুদের গুড়ার মধ্যে সাতটিতে উচ্চ পর্যায়ের সিসার উপস্থিতি রয়েছে।
বাংলাদেশ স্ট্যানডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) নির্ধারিত মাত্র অনুযায়ী, প্রতিগ্রামে ২.৫ মাইক্রোগ্রাম সিসার উপস্থিতি সহনীয়। কিন্তু খোলা বাজারের উন্মুক্ত এসব হলুদের প্রতিগ্রামে ২৬৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত সিসা পাওয়া গেছে।
এছাড়াও বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য যেমন, অনেক দিনের ফ্যাকাসে চাল, মেশিনে ভাঙানো চাল বিশেষ করে যথাযথ ভাবে না রাখা শুকনো খাবারে সিসার উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে, সিসা শিশুদের মস্তিস্ক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে এবং স্নায়বিক প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে থাকে।
গর্ভকালীন মায়েদের দেহে সিসার পরিমাণ বেশি থাকলে গর্ভপাত, মৃত বাচ্চা প্রসব বা সময়ের আগেই শিশুর জন্ম হয়ে থাকে।
আর এসব শিশু কম ওজনের হয়ে থাকে এবং মায়ের গর্ভে শিশুর সঠিক গঠন হয় না। এছাড়া সিসা গর্ভকালীন ও জন্মের পর শিশুর বোঝার ক্ষমতাকে নষ্ট করে।