রংপুর থেকে, গোলাম আযম:
ঢাকার সাবেক সরকারি কর্মকর্তার সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় গত তিন বছরে প্রায় ৪০০ অস্ত্রের ভুয়া লাইসেন্স প্রদান করেছে একজন অফিস সহকারি এবং একজন পিয়ন, এ ঘটনার দালিলিক প্রমাণ পাওয়ার কারনে অভিযুক্ত দুই কর্মচারীকে জেলা প্রশাসন বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মামলা করেছে। ঘটনার দুই নায়ককে গ্রেফতার করতে দুদকসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অভিযান চালাচ্ছে।
রংপুরের ডিসি মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টিতে আমরা তাজ্জব বনে গেছি। ব্যাকডেটে এভাবে সই জাল করে অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি আমাদের হতবাক করেছে। আমরা তাদের সাসপেন্ড করেছি। তদন্ত করা হচ্ছে। মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে আরো কেউ জড়িত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যে ভাবে সূত্রপাত:
একটি বেসরকারি চ্যানেলের জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক প্রমাণপত্র নিয়ে ডিসি অফিসের সংশ্লিষ্ট দফতরে অনুসন্ধান চালাতে যান। সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হলে বিষয়টি দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়ে যায়। ডিসি অফিসের জিএম শাখায় অভিযান চালানোর সময় অফিস সহকারী সামসুল ইসলামের আলমিরা থেকে ১১ লাখ নগদ টাকাও উদ্ধার করা হয়।
অভিযুক্তদের বহিষ্কার ও মামলা:
এ ঘটনায় ডিসি অফিসের জিএম শাখার সব কাগজপত্র তাৎক্ষণিকভাবে সিলগালা করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন এবং অভিযুক্ত অফিস সহকারী সামসুল আলম ও পিয়ন পিন্টুকে বরখাস্ত করা হয়েছে.
এ ঘটনায় রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ^াস বাদি হয়ে সামসুল আলম ও পিন্টুর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন এবং সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারবিষয়ক আইনে দু’টি পৃথক মামলা করেছেন। অবৈধ অর্থ উপার্জনের জন্য মামলা হয়েছে দুদকে।
ডিসি অফিস যা বলছে.
ডিসি অফিস সূত্র জানায়, ডিসি অফিসের জিএম শাখার অফিস সহকারী সামসুল ইসলাম ও পিয়ন পান্নু ঢাকার একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তার সমন্বয়ে দীর্ঘ দিন থেকে ডিসি এবং সংশ্লিষ্ট সব সই জাল করে অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়ে আসছিল। সম্প্রতি বিষয়টি দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়ে যায়। এতে দেখা যায় ওই দুই কর্মচারী ১৯৮৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত যারা ডিসি ছিলেন তাদের সই জাল করে চার শতাধিক অস্ত্রের ভুয়া লাইসেন্স দিয়েছেন। প্রতিটি অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য তারা ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেন এবং টাকা দেয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তাদের লাইসেন্স দেয়া হয়। এভাবে সিন্ডিকেটটি ২০০ কোটি টাকারও বেশি অবৈধভাবে আয় করেছে।
লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে যাদের কে:
ব্যাকডেটে সই জাল করে দেয়া অস্ত্রের লাইসেন্সগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকার মোহাম্মদপুরের শেখ জহুরুল ইসলামকে দেয়া একটি ৩২ বোর পিস্তল, এফ৯৯৭৯৯ডব্লিউ, ইতালি, কার্তুজ ২৫ রাউন্ডসহ অস্ত্রের লাইসেন্স। যার নং০ ০৪/২০০০। অস্ত্রটি তিনি ক্রয় দেখিয়েছেন মেসার্স মাহবুব আর্মস কোং লিমিটেড, গনেশতলা দিনাজপুর থেকে। তিনি লাইসেন্স নেয়ার সময় রংপুর মহানগর শালবন এলাকার সোনালি এন্টারপ্রাইজের ঠিকানা দিয়েছেন। কিন্তু সেটা ছিল ভুয়া। এ ছাড়াও রংপুরের বদরগঞ্জের দামোদারপুর এলাকার রাজু আহমদের ছেলে সুমন আলীকে ২০০৬ সালে একটি ১ নালা বন্দুক, বেলজিয়াল ৫৫২১৬, কার্তুজ ১০ রাউন্ডসহ অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়। যার নং ০২/২০০৬। ওই অস্ত্রটি কেনা হয়েছিল বগুড়া খান মার্কেটের খান আর্মস কোং লিমিটেড থেকে। এই লাইসেন্সটি রিনিউ করা হয় ২০১৫ সালে। অন্য দিকে রংপুরের তারাগঞ্জের ইকরচালী গ্রামের মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের পুত্র মনোয়ারুল ইসলামকে ২০০৯ সালে একটি এক নালা বন্দুক, আমেরিকা পিডটওয়াই-১৬ এর লাইসেন্স দেয়। যার নং ০৯/২০০৯। এই তিনটি লাইসেন্সই দেয়া হয় ডিসিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সই নকল করে। এভাবে ৪০০-এর বেশি অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে বলে দালিলিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএম