ক্রীড়া ডেস্ক:
রূপকথার গল্প লিখল ক্রোয়েশিয়া। ফুটবলের জন্মভূমির দেশ ইংল্যান্ডকে পরাস্ত করে আগামীকাল ফরাসিদের সঙ্গে ফাইনাল খেলবে ছোট্ট এ দেশটি।
বিশ্বকাপে দলটির সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল তৃতীয় স্থান। ১৯৯৮-এর বিশ্বকাপে চমকের পর চমক দেখায় এ দলটি। সেবার তৃতীয় হন ক্রোয়েটরা।
সেই রেকর্ড ছাপিয়ে প্রথমবারের মতো রাশিয়া বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠে গেলেন হারভাসকারা। ঝলমলে জার্সির দলের সফল অধিনায়ক লুকা মড্রিচ। ক্রোয়েশিয়া গৃহযুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ থেকে উঠে আসা এক অধিনায়ক। এ মুহূর্তে ক্রোয়েটদের পোস্টার বয় তিনি। তার ১০ নম্বর জার্সি এখন ক্রোয়েশিয়ায় সমর্থকদের ৯০ শতাংশের গায়ে।
ইংল্যান্ড বনাম ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ চলার অতিরিক্ত সময়ে ক্রোয়েশিয়া যখন ইংল্যান্ডের জালে জয়সূচক বলটি জড়ায় তখনই লুঝনিকি স্টেডিয়ামের ভাসমান প্রেস সেন্টার থেকে এক ইংরেজ সাংবাদিক রেডিওতে ধারাভাষ্য দেয়ার সময় বলেছিলেন- ‘লুকা মড্রিচ ফাইনালে তুলে দিল দলটাকে। ও দৌড়াচ্ছেন ক্রোয়েশিয়া সমর্থকদের কাছে। যারা ওকে জেলে পুরতে চেয়েছিলেন।’
শুনতে তেতো হলেও কথাটা সত্যি। কে এই মড্রিচ! স্লাভদের গৃহযুদ্ধের সময় ক্রোয়েশিয়ার বর্তমান অধিনায়ককে চুক্তিতে ভুল তথ্য দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। দিনের পর দিন আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছিল তাকে। তাকে জেলে পাঠানোর চেষ্টা হয়েছিল। অপমান আর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন তিনি প্রতিনিয়তই।
মড্রিচের দাদাকে প্রকাশ্যে খুন করেছিলেন গৃহযুদ্ধের দাঙ্গাবাজরা। জীবন বাঁচাতে রাতারাতি ছোট্ট লুকা মডরিচকে নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন তার বাবা।
গ্রেনেড মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল মড্রিচের বসতভিটা। পালিয়ে এসে একটা বস্তিতে ঠাঁই হয়েছিল মডরিচ পরিবারের। আলো ছিল না বাড়িতে। লুকার বাবা একটি বস্ত্র কারখানায় মজুরের কাজ করতেন। একটা ঘরে থাকতেন সাতজনের মড্রিচ পরিবার। অর্ধেক দিন খাবার জুটত না। খাওয়ার জন্য পানি পর্যন্ত ঠিকমতো জুটত না মড্রিচদের।
যন্ত্রণার লাভাস্রোত আর বঞ্চনার জীবন নিয়ে বেড়ে ওঠা সেই লুকা এখন বিশ্ব ফুটবলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। রাজধানীর জাগ্রেবের রাস্তায় মিছিল উল্লাস হয় তার ছবি নিয়ে। উদ্বাস্তু শিবিরে বেড়ে ওঠা লুকার হাতে ফুটবল বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ সম্মানটি দেখতে চান এখন ক্রোয়েটরা।