হঠাৎ কেন যেন বাবা কে খুব বেশি মিস করলাম,তাই মনের অজান্তেই ফোন করলাম, ওপাশ থেকে বাবা বললো,হঠাৎ কি মনে করে?.. বললাম খুব বেশি মিস করছিলাম আপনাকে,তাই কল করলাম।
বাবা কে জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছেন?.আপনার শরীর কেমন? বাবা বললো ভালো আছি। কোথায় আছেন জিজ্ঞেস করতেই বাবা বললেন (অমুকের) বাড়িতে, সচারাচার বাবা এত রাত বাড়ির বাহিরে থাকেন না,কৌতুহল বসত জিজ্ঞেস করলাম ও বাড়ি কেন?.. বাবা বললেন অমুকের বউটা বিষ পান করে মরে গেছে। নির্বাক হয়ে গেলাম, এ এক সুইসাইডের গল্প।
বাবাকে বললাম ওর না এক বছরের একটা ছেলে আছে?.একটা ছেলে নাইনে পড়ে। কাহিনী কি?..বিষ পান করলো কেন?. (ওদের কি হবে?..) বাবার কাছে এত টুকু জানলাম,মহিলার শাশুড়ীকে বাড়ি নিয়ে এসেছে বলে, শাশুড়ীকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রীতে দ্বন্ধ। আর সেই দ্বন্ধের জের ধরেই আত্বহুতি।
উল্লেখ্য বিধবা শশুড়ীর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে ভিন্ন আপন ঠাঁই বলে কিছু নেই। অথচ দুখিনীর কপালে আদরের বউদের কারনে আপন ঔরসজাত সন্তানের ভাত কপালে নেই।তাই উপয়ান্ত হয়ে মেয়ের স্বামীর বাড়িতে থাকতে হয়। এমন দুখিনী “মা” সমাজে কম হবে বলে মনে হয় না।
অসংখ্য কুলাঙ্গার রয়েছে যারা বউ পেলে আপন মা বাবা কে ভুলে যায়। একটা সুইসাইড কতটা কষ্টের, কতটা নির্মম,কতটা বেদনাদায়ক,সে কেবল ভুক্তভোগি পরিবারটিই বোঝে।
চোখের সামনে দেখেছি নিজ সুখের স্বল্পতায় আত্মহুতি দেয়া মায়ের সন্তাদের বেড়ে ওঠা,কত লাথি গুড়ি,চর থাপ্পর,বকা ঝোকাই না শুনতে হয়েছে এই সমাজের মানুষের কাছে থেকে।তাদের জীবনটা আট দশটা সন্তানের মত স্বাভাবিক নয়, মায়ের আচলে লুকানোর সুখ, কি জিনিস তা তাদের অচেনা। মায়ের আদর কি জিনিস, মা কেমন হয়,মা দেখতে কেমন,মা ডাকার অনুভূতিটা কেমন,তার কোনটাই তাদের জানা নেই। তারা কেবল অন্যের মা কে দেখে নিরবে চোখের জ্বল ফেলতে পারে।তারা পারে নিজের মত করে নিজের জীবন পরিচালনা করতে।
বেচে থাকবার তাগিদে নিজেকেই করতে হয় সংসারের যাবতীয় কাজ ।কেউ বলার নেই আয় বাবা দুমুঠো ভাত খাইয়ে দেই,ইস কি বিশ্রিই না দেখাচ্ছে আয় গোসল করিয়ে দেই। তাদের কেউ বলার নেই,আয় মা তোর চুল গুলো একটু বেনী করে দেই,কত দিন চুলে শ্যাম্পু করিস না,তেল দিস না,মাথায় চুলে জট পরেছে।। ইসরে আমার আদরের মেয়েটা রোদে পুড়ে কালো হয়ে যাচ্ছে,ঘেমে শরীরটা ভিজে গেলো, যা ঘরে গিয়ে বস,আমি পাখা দিয়ে বাতাস বাতাস করে দিচ্ছি।
বাড়িটা শূণ্য পড়ে থাকে, অভিভাবক বলে কিছু থাকে না।।প্রাণের স্বামীও কোলবালিসের চাপা কান্নায় নিজেকে লুকিয়ে রাখে।হয়তো বা জেলের করিডোরে বসে খুঁজে ফেরে অতীত বিধুর স্মৃতি।। কিন্তু এ ভাবে আর কত দিন?
একটা সুইসাইড কি সব কিছুর সমাধান করতে পারে?. পারে না,বরং একটা সুইসাইড হাজারো দুঃখের জন্ম দেয়। সময়ের বহমান ধারায় একটু মানিয়ে নিলেই পরিসমাপ্ত হবে এই নির্মম আত্মহুতি। কি হবে আজ সেই মাসুম বাচ্চাটির, যে আজ মা হারালো,যে আর কখনই পাবে না মায়ের বুকের দুধ, পাবে না মায়ের আচলে লুকানো উষ্ণ আবেগ,সে আর কখনই জানবে না মা কি জিনিস,মা কেমন হয়! ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাকে করলো মাতৃহারা । কি হবে সেই সন্তানটির যে আর কখনও পাবে না মায়ের হাতের খাবার,স্বামীটিও পাবেনা প্রাণের বউটির হাসি মাখা মুখখানি।
“আর নয় আত্মহুতি” স্লোগানটি হোক বাংলায় প্রতিধ্বনিত।
লোকমান হোসেন (শিক্ষার্থী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় )