২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:৫৩

কোটা সংস্কার নেতার ওপর হামলাকারীদের দ্রুত বিচার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সরকারি চাকরতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী এপিএম সোহেলের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা।

রোববার দুপুর ১২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন। এসময় তিনি সরকারকে সোহেলের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় বহনের দাবিও জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সোহেলের উপর হামলাকারীদের পরিচয় তুলে ধরেন আন্দোলনকারীরা। তারা বলেন, সোহেলকে মোবাইল, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হামলার হুমকি দেয়া হয়েছিল। শুধু সোহেলকে নয়; আন্দোলনকারী সকল নেতাকর্মীদেরকে বিভিন্নভাবে হামলার হুমকি দেয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তারা।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সোহেল বলেন, পরীক্ষার হল থেকে বের হওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমিটির জবি শাখার যুগ্ম-আহবায়ক শোভন, জামালপুর জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক এস কে মিরাজ, পরিসংখ্যান বিভাগের মাহফুজ ও সাইকোলজি বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী বাবু তার ওপর হামলা করে। মূলত শোভনের নেতৃত্বে এ হামলা পরিচালিত হয় বলেও অভিযোগ তার। এরা সবাই জবি শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ও শাখা সভাপতি তারিকুল ইসলামের অনুসারী বলে জানান তিনি।

হামলার ঘটনা উল্লেখ করে সোহেল জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে জবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। আন্দোলনে অংশগ্রহন না করতে তারা এর আগেও বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছিল।

তিনি বলেন, হামলার দিন (বুধবার) আমার পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দিয়ে বিকাল তিনটার দিকে আমি বের হই। তখন থেকেই ছাত্রলীগের বাবুসহ কয়েকজন নেতাকর্মী আমাকে অনুসরণ করছিল। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেট দিয়ে বের হয়ে রাস্তা পার হয়ে বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে যেতেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার গতিরোধ করে। এ সময় আমার সাথে কয়েকজন বন্ধু ছিল। ওরা (হামলাকারীরা) আমাকে এসে বলে ‘তোমার সাথে একটু কথা আছে, সাইডে চলো।’ তখন আমার বন্ধুরা জিজ্ঞেস করে- ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? প্রশ্নের জবাবে তারা বলে, ‘কোথাও না, ওর সাথে একটু কথা বলবো, তোমরা চলে যাও।’ এরপর ওরা আমাকে নিয়ে ক্যাম্পাসের টিএসসির পাশের গলিতে ঢুকে। সেখানে একটা জায়গায় আমাকে দাঁড় করিয়ে আশপাশে তাকিয়ে তারা সিসিটিভি ক্যামেরা দেখতে পায়। ক্যামেরা দেখে ১০-১২ জন ছাত্রলীগ কর্মীদের একজন বলে উঠ, এখানে দাঁড়াবো না ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা আছে। অন্য জায়গায় যাই। তখন তারা আমাকে বাংলাবাজার গার্লস স্কুল লাগোয়া সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের গলির ভেতর ঢোকায়। সেখানে দেয়ালের সাথে দাঁড় করিয়ে তারা আমাকে বলে, কিরে আন্দোলন তো ভালই করলি, কত টাকা পেয়েছিস কোটা আন্দোলন করে? আয় তোকে আন্দোলন শেখাই। তুই না সেলফি তুলতে পছন্দ করিস? তোর দাঁতগুলো তো অনেক সুন্দর। আয় এগুলো ভেঙে দিয়ে সেলফি তুলি। এটা বলেই তারা আমার নাকেমুখে কিল ঘুষি মারতে শুরু করে। এ সময় আমার নাকের নিচে ঠোটের উপরের অংশ ফেটে রক্ত পড়তে থাকে। আর কয়েকজন রড ও লাঠি দিয়ে আমার পায়ে ও পিঠে আঘাত করতে থাকে। পরে আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে তারা চলে যায়।

হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে জানিয়ে সোহেল বলেন, বুধবার রাতে আমি নিজে বাদি হয়ে হামলার ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় মামলা করেছি। জড়িতদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুতেই আন্দোলনকারীদের উপর শুরু থেকেই হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। কয়েকদিন আগে সোহেলের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করে। আমরা তাদের বিচার দাবি করি। একইসঙ্গে সোহেলের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে সরকারকে আহবান জানাই।

হামলাকারীদের বিচার না করলে ছাত্রসমাজ আবারও রাজপথে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীদের যুগ্ম-আহবায়ক ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, আমরা সোহেলসহ এ পর্যন্ত সকল আন্দোলনকারীদের হামলার বিচার চাচ্ছি। আর আগামীতে এই ধরণের ঘটনা পুনরায় ঘটলে সারা বাংলার ছাত্র সমাজ রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।

দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ

প্রকাশ :মে ২৭, ২০১৮ ৪:০২ অপরাহ্ণ