২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:১৬

বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ১২ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

১২ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। এটি আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য যা চলতি বাজেটের তিনগুণ বেশি। চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বাজেট প্রস্তাবনা ২০১৮-১৯’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বারকাত বলেন, দেশে ধনী-দরিদ্রের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য বড় দুর্ভাবনার বিষয়। দরিদ্র মানুষের ৮২ শতাংশ গ্রামে বাস করে। গ্রামে ৬০ শতাংশ ভূমিহীন, ৪০ ভাগ খানায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, ৬০ ভাগ মানুষ সরাকারি স্বাস্থ্য সেবা থেকে কার্যত বঞ্চিত। ১০ শতাংশ ধনী মোট সম্পদের প্রায় ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রয়ক।

এত বড় বাজেটের অর্থের উৎস হিসাবে অর্থপাচার ও কালোটাকা থেকে অর্থ সংগ্রহের প্রস্তাব করেন। আবুল বারকাত বলেন, দেশে এখন ৭০-৮০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থপাচার হচ্ছে। বাজেটে এ সমস্যা সমাধানে পদ্ধতিগত নির্দেশনা থাকতে হবে। আমরা অর্থপাচার রোধ থেকে আগামী অর্থবছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের প্রস্তাব করছি।

একই সঙ্গে তিনি বলেন, দেশে পুঞ্জীভূত কালো টাকার আনুমানিক পরিমাণ হবে ৫ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে কালো টাকা দেশের মোট জিডিপির ৪২-৮০ শতাংশ। বিষয়টি বাস্তব সত্য। এটাকে কমানোর জন্য সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারে, অন্যদিকে একটি কার্যকর কমিশন গঠন করতে পারে। আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে ২৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ কালো টাকা উদ্ধারের প্রস্তাব করছি।

যদিও কি পদ্ধতিতে এই টাকা উদ্ধার করা হবে সেটা স্পষ্ট করেননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. বারকাত।

 

এর বাইরে রাজস্ব আয়ের প্রধান খাতসমূহ সম্পর্কে সাংবাদিকদের তিনি জানান, খাতগুলো হবে আয় ও মুনাফার উপর কর, মূল্য সংযোজন কর, লভ্যাংশ ও মুনাফা, জরিমানা-দণ্ড, বাজেয়াপ্তকরণ, সম্পূরক কর, লভ্যাংশ ও মুনাফা, অর্থপাচার রোধ থেকে প্রাপ্তি, কর ব্যতীত অন্যান্য রাজস্ব ও প্রাপ্তি, কালো টাকা উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি, সম্পদ কর, যানবাহন কর, মাদক শুল্ক, ভূমি রাজস্ব।

বাজেটে বরাদ্দের খাত : শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে সবচেয়ে বেশি ব্যয়, এরপর বিদ্যুত ও জ্বালানি, জনপ্রশাসন, পরিবহন ও যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ, কৃষি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিস, গৃহায়ণ।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা উচ্চাকাঙ্ক্ষার বাজেট প্রস্তাব কেউ কেউ বলতে পারে। যারা গত অর্থবছরের বাজেটকেও উচ্চাকাঙ্ক্ষার বাজেট বলেছে। আমাদের দেশে বিরোধী দলের কাজই হলো বাজেটের প্রস্তাবনার পর এটাকে ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষার বাজেট ও গরিব মারার বাজেট বলে।

সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন আপনাদের এখানের কেউ অর্থ মন্ত্রী হলে এ প্রস্তাবিত বাজের পাস করতে কি-না? এর জবাবে আবুল বারকাত বলেন, আমি ওই জিনিস (অর্থমন্ত্রী) হবো না। আমাদের এখান থেকে কেউ যদি অর্থমন্ত্রী হয় এ বাজেট পাস করতো।

আবুল বারকাত বলেন, উন্নয়ন প্রক্রিয়াটি হতে হবে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বণ্টন ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণের, দ্রুত বৈষম্য হ্রাসকরণের, মানবসম্পদ দ্রুত বিকশিতকরণের, শিল্পায়ন ত্বরান্নয়ে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগসহ (এসএমই)আত্মকর্মসংস্থান বিকশিতকরণের এবং সর্বপরি সমগ্র প্রক্রিয়ায় জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের।

রাজস্ব বাড়াতে রাজস্ব কমিশন গঠনের প্রস্তাবও দেন ড. আবুল বারকাত। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের বাজেট তৈরি করা হয় সব মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে এবং অর্থ বিভাগ তা চূড়ান্ত করে। এ ব্যবস্থায় সৃজশীল চিন্তার সুযোগ কম এ ক্ষেত্রে শুধু মেকানিক্যাল অর্থাৎ শতকরা হার বৃদ্ধি অথবা ব্যবহার করা হয়। এতে সমস্যার দোরগোড়ায় পৌঁছানো যায় না এবং বাজেট বাস্তবসম্মত হয় না। এ অবস্থা নিরসনে আমরা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি রাজস্ব কমিশন গঠনের প্রস্তাব করছি। যারা বাজেট কীভাবে যুগোপোযোগী করা যায় এ নিয়ে কাজ করবে।

এক প্রশ্নের জবাবে বারকাত বলেন, সরকারি অর্থ যারা নাড়াচাড়া করে তারা এ অর্থ না খেয়ে থাকতে পারে না। তিনি এসএমই মন্ত্রণালয় গঠন ও প্রবীণ নীড় গঠনের প্রস্তাব দেন। আমরা বৃদ্ধা আশ্রম বলছি না, বলছি প্রবীণ নীড়।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :মে ২৬, ২০১৮ ৮:১৫ অপরাহ্ণ