লাইফ স্টাইল ডেস্ক:
সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারে আমরা কী খেতে পারি? এ নিয়ে নানা ভাবনা। লক্ষ করলে দেখা যাবে, আমাদের দেশে ইফতারের বেশির ভাগ খাবারই হচ্ছে চর্বিযুক্ত ও তেলে ভাজা। খাবার নির্বাচনে রোজাদারের বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় রাখা হয় না। সারা দিন রোজা থাকার পর পাকস্থলীতে এমন কিছু খাবার দেয়া উচিত, যা দ্রুত শরীরে শক্তি জোগায় ও বিভিন্ন ঘাটতি পূরণ করে।
ইফতার শুরু করা উচিত শরবত দিয়ে। তবে লক্ষ রাখতে হবে, শরবতে কৃত্রিম রঙ যেন মেশানো না থাকে। এ রঙে থাকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান। বাজারে অনেক কৃত্রিম রঙ মেশানো শরবত পাওয়া যায়। সেসব অবশ্যই পরিহার করবেন।
ইফতারে ফলের রস বেশ উপকারী। এ সময় যে কোনো একটি ফল খাবেন। ফলে থাকে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ, যা আপনাকে স্বাস্থ্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবে। বুট, ছোলা ও মুড়ি খেতে পারেন এ সময়। দই, চিড়া ও কলা খেলে ভালো। তবে প্রচলিত বেগুনি ও পেঁয়াজু সর্বদা পরিহার করবেন। তেলে ভাজা এসব খাবার স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটাতে পারে। তাছাড়া খাবারগুলো পুরনো তেলে ভাজা হলে ক্ষতির পরিমাণটা বেড়ে যায়।
তেল বারবার গরম করলে ক্ষতিকর পলিনিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন তৈরি হয়, যাতে থাকে বেনজোপাইরিন। এটা ক্যান্সার সৃষ্টি করে। তাই ইফতারে খেজুর ও বিভিন্ন ফল রাখা ভালো। সারা দিন না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দেয়। খেজুর সে ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। ইফতারের সময় প্রচুর পানি পান করবেন। পানি আপনার শরীরের কোষগুলোকে সজীব রাখবে। তৈলাক্ত খাবার পরিহার করে সহজপাচ্য খাবার খেলে এসিড নিঃসরণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং স্বাস্থ্যগত কোনো অসুবিধা হবে না।
সেহরি খাওয়ার পর সারা দিন উপবাস থেকে ইফতারে প্রচুর পানি খাওয়া দরকার। রমজানে ইফতারের সময় মুড়িসহ অন্যান্য ভাজাপোড়া খাবার খেতে আমরা সবাই খুবই আগ্রহী, কিন্তু অতিরিক্ত ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবার গ্রহণ করা ঠিক নয়। অন্যদিকে যাদের হজমে সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিক আছে, তাদের জন্য তেল-চর্বিযুক্ত খাবার একেবারেই পরিহার করতে হবে। ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পর পানি খাওয়া ভালো। এতে হজমে খানিকটা সহায়তা করে।
আমাদের দেশে যে হারে ভেজালের ছড়াছড়ি, তাতে বাইরের তৈরি খাবার কতটা মানসম্পন্ন, সেটা নিশ্চিত হওয়া প্রায় অসম্ভব। এজন্য যে কোনো রেস্টুরেন্ট বা দোকানের তৈরি ইফতার খাওয়া উচিত নয়। এক্ষেত্রে বাসায় তৈরি করা ইফতার খাওয়া ভালো। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকলে যতটা সম্ভব খাবারের মান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গ্রহণ করা দরকার। যাদের ডায়াবেটিস নেই, তাদের জন্য লেবুর শরবত খাওয়া ভালো। সেসঙ্গে কেমিক্যাল নেই এমন ফল খাওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে টাটকা ফলের জুস করে খাওয়া ভালো। অন্যদিকে শরীরের জন্য দ্রুত শক্তি ও ক্যালরি বৃদ্ধি করে এমন খাবারও পরিমাণমতো খাওয়া যেতে পারে। তবে সহজে হজমযোগ্য এবং পানির পরিমাণ বেশি আছে এ ধরনের খাবার গ্রহণ করা উচিত।
মনে রাখতে পারেন যা
বেশি ঝাল, মসলাযুক্ত খাবার এবং ভাজাপোড়া খাবার পরিত্যাগ করতে হবে।
খাদ্যতালিকা থেকে কোমলপানীয় বাদ দিতে হবে। কারণ এতে পিপাসা তো মেটেই না, বরং শরীরটা আরো দুর্বল করে দেয়।
আঁশযুক্ত খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ইফতারের পর প্রচুর আঁশ আছে এমন শাকসবজি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
ইফতারের পর থেকে সেহরির শেষ সময় পর্যন্ত প্রচুর পানি পান করতে হবে। অবশ্যই তা একটানা নয়। ওই সময়টুকুর মধ্যে এক-দুই করে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে পারলে শরীর স্বাভাবিক থাকবে। কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা কিডনিতে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
ইফতারের পর ফলের রস পানেও যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ