২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:১৩

ভালো আছে তোফা ও তহুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: 

কোমরের নিচে জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম নেওয়ার পর অপারেশনের মাধ্যমে গত বছরের আগস্ট মাসে আলাদা করা হয় তোফা ও তহুরাকে। এরপর তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হয় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের কাশদহ গ্রামের নানার বাড়িতে। এখনও সেখানেই আছে তারা।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন শারীরিকভাবে ভালো আছে তোফা ও তহুরা, হেসে খেলে দিন কাটছে তাদের। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ সবসময় শিশু দু’টির  সার্বিক খোঁজখবর রাখছেন। তোফা ও তহুরার ব্যাপারে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, তোফা ও তহুরার জন্য বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এবার সেখানে আলাদা ঘর করে দেওয়া হচ্ছে তাদের থাকার জন্য।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘জন্ম নেওয়ার পর থেকেই তোফা ও তহুরার পাশে ছিল স্থানীয় প্রশাসন। সবসময় তাদের দেখভাল করে আসছে প্রশাসন। এর আগে শিশু তোফা ও তহুরার নানার বাড়িতে দেওয়া হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ সংযোগ। সেই সঙ্গে গরম থেকে রক্ষা পেতে তাদের জন্য ফ্যানও দেওয়া হয়। কিছুদিন আগেও চিকিৎসার জন্য ঢাকা যাওয়ার খরচ হিসেবে তাদের আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। তবে এবার শিশু দুটির বেড়ে ওঠার সুবিধার জন্য তাদের নানার বাড়িতেই আলাদা একটি ঘর করে দেওয়া হবে।’

তোফা ও তহুরার মা শাহিদা বেগম বলেন, ‘তোফা-তহুরা এখন ভালো আছে। তারা দু’জনে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবারও খাচ্ছে। এছাড়া তারা খেলছে ও বাড়ির উঠানে বাঁশ ধরে হাঁটা শিখছে। চিকিৎসকের পরামর্শে তহুরাকে ক্যাথেটার দিয়ে তিন ঘণ্টা পরপর প্রসাব করাতে হয়। তবে তহুরা এখনো মূত্র জটিলতায় ভুগছে। সেটাও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।এছাড়া আর কোন সমস্যা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘তোফা-তহুরার শারীরিক সমস্যাসহ যে কোনও বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যালের চিকিৎসকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করি। তারপর তাদের পরামর্শে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তবে সব মিলে এখন দু’জনে ভালো আছে। ঈদের পর তোফা-তহুরার বাকি দু’টি অপারেশন করার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক।’ শাহিদা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তোফা-তহুরার জন্মের আগে থেকেই বাবার বাড়িতে থাকছেন তিনি। দরিদ্র বাবার ঘরেই কষ্ট করে থাকতে হয় তোফা-তহুরাকে নিয়ে।

এ প্রসঙ্গে তোফা ও তহুরার নানা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তোফা ও তহুরার জন্ম নেওয়ার ছয় মাস আগে বাড়িতে আসেন মেয়ে শাহিদা বেগম। এই বাড়ি থেকেই ঢাকায় নিয়ে গিয়ে অপারেশন করা হয় তোফা ও তহুরার। অপারেশন শেষে আবারও এখানেই ফিরে আসেন তারা। সন্তান জন্ম, অপারেশন এবং এরপরেও দীর্ঘ সময় ধরে মেয়ে শাহিদা বেগম এই বাড়িতে থাকলেও তার স্বামী সাজু মিয়া তোফা-তহুরাসহ তাদের মায়ের কোনও খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না।’

শহিদুল ইসলাম আরও জানান, তিনি দরিদ্র হওয়ায় বাড়িতে শুধু দু’টি ঘর আছে। একটি ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে নিজে থাকেন এবং অপর ঘরে ছোট ছেলে থাকে। ছোট ছেলের ঘরেই এখন তোফা-তহুরাকে নিয়ে থাকেন মেয়ে শাহিদা বেগম। এক সঙ্গে থাকতে গিয়ে তোফা ও তহুরার অনেক সমস্যা হয়। এজন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে শিশু দু’টির জন্য আলাদা ঘরের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ আগস্ট জোড়া লাগা কোমড়ের দুই শিশু তোফা ও তহুরাকে অপারেশনের মাধ্যমে আলাদা করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা। এরপর গত ১০ সেপ্টেম্বর মেডিক্যাল থেকে ফিরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাশদহ গ্রামের নানার বাড়িতেই অবস্থান করছে তারা। বাড়ি ফেরার এক মাস পর হঠাৎ করেই জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তোফা-তহুরা। এছাড়া তহুরা ঘনঘন প্রসাব করাসহ কিছুই খাচ্ছিলো না। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে ৮ অক্টোবর তাদের ঢাকায় নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে আবারও নানার বাড়িতে ফিরে আসে তারা।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :মে ২৬, ২০১৮ ১:০১ অপরাহ্ণ