২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:৩০

তিস্তার এক ফোঁটা পানিরও চুক্তি হয়নি : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

তিস্তার পানি বণ্টনসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানে ভারতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী করেছেন জানতে চেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেই বলেছিল তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি এখন সময়ের ব্যাপার। অথচ দীর্ঘ ৯ বছর হয়ে গেল এখন পর্যন্ত তিস্তা নদীর এক ফোঁটা পানির ব্যাপারেও কোনো চুক্তি হয়নি।

শুক্রবার রাজধানী গুলশানের ইমানুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে ইফতারপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজনীতিবিদদের সম্মানে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. টিআইএম ফজলে রাব্বী চৌধুরীর সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে স্বাগত বক্তব্য দেন মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণ করেছে, অত্যন্ত ভালো কথা। সেই সঙ্গে আমাদের প্রশ্ন, জনগণের প্রশ্ন আমরা আমাদের যে পাওনাগুলো রয়েছে, সমস্যাগুলো রয়েছে সেই সমস্যাগুলো সম্পর্কে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কথা বলছেন কিনা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু তিস্তা নয়, অভিন্ন যে ১৫৮টি নদী রয়েছে সেই নদীগুলোর হিস্যার ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি। অথচ দেখা যাচ্ছে যে, সামরিক চুক্তি হচ্ছে। সীমান্তে যে মানুষদের হত্যা করা হয় সেটাকে বাদ দিয়ে ট্রানজিট হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন বন্দর নির্মিত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই কানেকটিভিটির পক্ষে। আমরা অবশ্যই একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের সংযোগ স্থাপন হবে তার পক্ষে। একই সঙ্গে তার বিনিময় আমরা কী পাচ্ছি সেটাও জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। এভাবে জনগণকে বোকা বানিয়ে প্রতারণা করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে।’

নির্বাচনী বিধি সংশোধন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারণায় অংশ নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন যে সংশোধন এনেছে তা থেকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছি। এই নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে সংসদ সদস্যদের নির্বাচনের প্রচারণায় নামার জন্য অনুমোদন দিয়ে কাজ করছে। আমরা খুব স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, ইসির এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।

বিশেষ করে স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে, সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে যদি সংসদ সদস্যদের প্রচারণায় নামতে দেয়া হয় তাহলে সেখানে কিছুতেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না। সে কারণে আমরা এটার বিরোধিতা করেছি। এটা এখনও আইন হয়নি। এটা থেকে তারা (ইসি) বিরত থাকবেন এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার কাজ তারা করবেন।’

মাদকবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে সরকার বিভিন্ন অভিযানের নামে এ দেশের নিরহ মানুষদের হত্যা করছে। আজকে আবার হঠাৎ করেই রোজার মাসে নির্বাচনের বছরে আপনারা মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করেছেন। আগে নিজের ঘরটা পরিষ্কার করুন। আপনার ঘরের মধ্যে কতজন আছেন যারা মাদকের ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তাদের আগে নিয়ে আসুন। আজকে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলের কাছে এই অভিযান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালানো হচ্ছে। এটা শুধু মাত্র আরেকটি কৌশলবিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য।’

খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সরকার একতরফা নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কাজেই তাকে বাদ দিয়ে কখনও কোনো অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। যারা বিএনপি ও ২০ দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের চিন্তা করছেন তারা অলিক চিন্তা করছেন। এ দেশের মানুষ আরেকবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হতে দেবে না।’

ইফতারে ২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পরোয়ার, আবদুল হালিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা এম এ রকীব, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, কল্যাণ পার্টির এমএম আমিনুর রহমান, বাংলাদেশ ন্যাপের এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, মো. শহীদন্নবী ডাবলু, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ।

আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএমএম আলম, আহসান হাবিব লিংকন, নওয়াব আলী আব্বাস খান, আনোয়ারা বেগম, মাওলানা রুহুল আমিন, অ্যাডভোকেট শফিউদ্দিন ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব এএসএম শামীম প্রমুখ।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :মে ২৬, ২০১৮ ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ