নিজস্ব প্রতিবেদক :
চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস) বিশ্ব থাইরয়েড দিবস উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে থাইরয়েড এর প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থি থাইরয়েড। শরীরে থাইরয়েড হরমোন বেড়ে গেলে বিভিন্ন সমস্যা হয়। বাংলাদেশে সম্ভাব্য থাইরয়েড হরমোনজনিত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। তাদের মধ্যে প্রায় ৩ কোটি রোগীই জানেননা যে তাদের এই সমস্যা রয়েছে। এছাড়া নারীদের থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা পুরুষদের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি।
আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে বিশ্ব থাইরয়েড দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা গর্ভবতী নারীদের উপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে এদের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশের কোন না কোন থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা রয়েছে। আর গ্রামের পরিস্থিতির কোনো রেকর্ড নেই। তবে তাই ধারণা করা যায় সেখানকার অবস্থা আরও করুণ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিইএসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান, সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. হাফিজুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহজাদা সেলিম প্রমুখ।
এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ যৌথভাবে আগামী ২৬ মে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের গ্যালারী ১-এ বৈজ্ঞানিক অধিবেশনের আয়োজন করেছে। ওই অধিবেশনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষসহ সেখানে কর্মরত সকল চিকিৎসক অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তরা বলেন, বাংলাদেশে ৬টি মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। কিন্তু উন্নত বিশ্বে সাতটি মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং যার ৭ম টি হচ্ছে থাইরয়েড হরমোন বিষয়ক তথ্য অধিকার। আর যেকোনো দেশে এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করা খুবই সহজ একটি কাজ বলে বক্তরা উল্লেখ করেন।
থায়রয়েডজনিত রোগ বিশ্বের ১ নম্বর রোগ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা বলেন, বাংলাদেশে সম্ভাব্য থায়রয়েড হরমোনজনিত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। যার মধ্যে প্রায় ৩ কোটি রোগীই জানে না তাদের এই সমস্যা রয়েছে। তাই এই রোগ প্রতিরোধ কিংবা চিকিৎসার ক্ষেত্রে জনসচেতনতাই মূখ্য।
থাইরয়েড হরমোন কম বা বেশি নিঃসৃত হওয়া উভয়ই রোগের সৃষ্টি করে। তাই বিয়ের আগে কিংবা গর্ভধারণের পূর্বে নারীদের অবশ্যই থায়রয়েড পরীক্ষা করে নেওয়া উচিৎ। এবং এ রোগের সম্ভাবনা থাকলে যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে তারপর গর্ভধারণ করা উচিৎ। নাইলে বাচ্চাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ না থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এ হরমোনের তারতম্যের ফলে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, হঠাৎ করে শরীর মোটা ও চিকন হওয়া, মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, হার্টের সমস্যা, চোখ ভয়ংকর আকারে বড় হয়ে যাওয়া, বন্ধ্যাত্ব, এমনকি ক্যান্সারের সৃষ্টি হতে পারে। সাধারনত একজন পুরুষের বিপরীতে ১০ জন নারীর থায়রয়েড রোগে আক্রান্ত হয়।
এ রোগের প্রতিরোধের বিষয়ে বক্তারা আরও বলেন, সব বয়সের মানুষের স্ক্রিনিং, আয়োডিনের অভাব, ভেজাল খাদ্য ও আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করা এ রোগের প্রধান প্রতিরোধক বিষয়। এছাড়া সরকার খুব সহজে থায়রয়েডের বাধ্যতামূলক স্ক্রিনিং চালু করতে পারে। পাশাপাশি বাজারের লবণগুলোর আয়োডিনের মান নিশ্চিত করতে পারে। আমাদের গবেষণা অনুসারে বাজারের লবণে সঠিক আয়োডিনের মাত্রা নেই।
এছাড়া প্রতিটি বাচ্চা জন্মগ্রণের পর বাধ্যতামূলকভাবে থায়রয়েড পরীক্ষা নিশ্চিত করা উচিৎ। কেননা বিকলাঙ্গ বাচ্চা আমাদের কারোরই কাম্য নয়। আর বাবার এ সমস্যা থাকলে কোনো ঝুঁকি নেই বরং মায়েদের ক্ষেত্রে রয়েছে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের শহরের ২০ থেকে ৩০ ভাগ গর্ভবতীরা থায়রয়েড রোগে আক্রান্ত। আর গ্রামের পরিস্থিতির কোনো রেকর্ড নেই তাই ধারণা করা যায় সেখানকার অবস্থা আরও করুণ।
এদেশে থায়রয়েডের উচ্চমানের চিকিৎসা রয়েছে উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, এই রোগের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এখানে আয়োডিনের ডোজ মাত্র ৩০০ টাকা আর সিঙ্গাপুরে তার খরচ ৫০ হাজার টাকা। আর অন্যান্য দেশে আরও বেশি। এদিকে এই রোগের পরীক্ষা করাতে দেশের সরকারি হাসপাতালে খরচ মাত্র ২৫০ টাকা আর বেসরকারিতে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।
এছাড়া দেশের সরকারি বেসরকারি সব হাসপাতালে হরমোন বিষয়ক চিকিৎসক রয়েছেন। পাশাপাশি অন্যান্য বিভাগের ডাক্তাররা চিকিৎসা সম্পন্ন করতে পারেন। তবে আমাদের চিকিৎসকদের প্র্যাভকটিসের অভাবে তার সঠিকভাবে প্রতিফলন বা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সচেতনতামূলক কার্যক্রমে চিকিৎসকদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
দৈনিক দেশজনতা/এন আর