নিজস্ব প্রতিবেদক :
গত কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়াশি অভিযান। এসব অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিকের বেশি মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। আজও বন্দুকযুদ্ধে ৭ জন নিহত হয়েছেন।
এদের মধ্যে রাজধানীতে ১ জন, নরসিংদীতে ২ জন, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, কক্সবাজার ও কুমিল্লায় একজন করে নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
রাজধানী : রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ কামরুল ইসলাম (৪০) নামে এক মাদকব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৫মে) রাত সাড়ে ১২টার দিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন বিজিপ্রেসের গলিতে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় র্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন।
নিহত কামরুল মহাখালী দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা। তিনি তেজগাঁও রেললাইন বস্তি এবং মহাখালী সাততলা বস্তি এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে ১৫টির বেশি মাদক ও অস্ত্র মামলার আসামি।
শিল্পাঞ্চল থানার এসআই মিজান জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে মাদক বিক্রির জন্য একদল মাদক ব্যবসায়ী বিজি প্রেস এলাকায় অবস্থান করছে–এমন খবরে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-২। বিজি প্রেস সংলগ্ন স্কুলের মাঠের পাশে যাওয়ার পর র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। র্যাবও পাল্টা গুলি চালালে আহত হয় কামরুল। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ১টার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ নগরীতে গোয়েন্দা পুলিশের ( ডিবি) সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে মাদক সম্রাট রাজন (৩৫) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. আশিকুর রহমান ও কনেস্টেবল কাওছার গুরুতর আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২৫ মে) রাত পৌনে ২টার দিকে নগরীর পুরোহিত পাড়া রেলওয়ে কলোনী ভাঙ্গা ওয়াল পুকুর পাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক পরিমল চন্দ্র দাস জানান, নগরীর পুরোহিত পাড়া রেলওয়ে কলোনী ভাঙ্গা ওয়াল পুকুর পাড় এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক ভাগাভাগি করছে রাত সোয়া একটার দিকে এমন খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেখানে অভিযান চালানো হয়। পৌনে ২টার দিকে সেখানে পৌঁছালে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. আশিকুর রহমান ও কনস্টেবল কাওছার গুরুতর আহত হন। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পলিয়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থলে মাদক সম্রাট রাজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাৎক্ষণিক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রাজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৪০০ পিস ইয়াবা, তিনটি গুলির খোসা ,১টি চাইনিজ কুড়াল ও ১টি ধারালো হাসুয়া উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজনের বিরুদ্ধে মাদক মামলাসহ ৮/৯ টি মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
নেত্রকোনা : জেলা সদরের মদনপুর ইউনিয়নের মনাং এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অজ্ঞাতপরিচয়ের দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৪ মে) রাত ১টার দিকে বন্দুকযুদ্ধে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছেন।
নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি মো. বোরহান উদ্দিন জানান, মাদক কেনাবেচার খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে মদনপুর ইউনিয়নের মনাং এলাকায় পুলিশ অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে উপ-পরিদর্শক (এসআই) জলিল, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) জাকির ও কনস্টেবল ওয়াহিদ আহত হন। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। তাদের নাম জানার চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থল থেকে ৭০০ গ্রাম হেরোইন, তিন হাজার পাঁচ পিস ইয়াবা ও দু’টি পাইপগান জব্দ করা হয়েছে।
কুমিল্লা : জেলার বুড়িচং উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কামাল ওরফে ফেন্সি কামাল (৫১) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সময় হালিম ও ইলিয়াস নামে দুই মাদক বিক্রেতাকে আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ মে) রাত ১২টার দিকে উপজেলার ৪ নম্বর ষোলনল ইউনিয়নের মহিশমাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। কামাল কুমিল্লা সদরের রাজমঙ্গলপুর এলাকার বাসিন্দা।
বুড়িচং থানার ওসি মনোজ কুমার দে জানান, মাদক কেনা-বেচার খবর পেয়ে রাত ১২টার দিকে মহিশমাড়া গ্রামে অভিযান চালায় পুলিশ। মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালালে ঘটনাস্থলে ফেন্সি কামাল নিহত হন। এ সময় হালিম ও ইলিয়াস নামে দুই মাদক বিক্রেতাকে আটক করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে ৫০ কেজি গাজাঁ ও একটি পাইপগান জব্দ করা হয়েছে।
কক্সবাজার : জেলার মহেশখালীতে বন্দুকযুদ্ধে এক ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। উদ্ধার হয়েছে এক হাজার পিস ইয়াবাসহ অস্ত্র ও গুলি। মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানান, বড় মহেশখালীর পাহাড়তলী এলাকায় স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ উল্লাহ ও আরিফ উল্লাহর মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার এমন খবর পায় পুলিশ। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে তারা পালিয়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থলে মোস্তাক আহমদ (৩৫) নামে একজনকে পরে থাকতে দেখা যায়। দ্রুত তাকে মহেশখালী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থল থেকে ৩০ রাউন্ড গুলির খোসা, ৪টি বন্দুক, ৭ রাউন্ড তাজা কার্তুজ ও ১০০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
ঝিনাইদহ : জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শামীম হোসেন (৪৬) নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশের চার সদস্য আহত হয়েছেন ।
বৃহস্পতিবার (২৪ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ওয়াপদা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শামিম আরপাড়ার শিবনগর এলাকার মমিন সরদারের ছেলে।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান খান জানান, কালীগঞ্জ পৌরসভা এলাকার ওয়াপদা রোডের একটি পরিত্যক্ত ভবনের মধ্যে মাদক বেচা-কেনা হচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালালে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
এতে কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অমিত দাস, সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শামীম হোসেন, পুলিশ কনস্টেবল নাজিম উদ্দীন ও রতন আহত হন। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে এক পর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে শামীম নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাৎক্ষণিক তাকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, ৪৮০ পিস ইয়াবা ও ১৭ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়েছে। শামীমের নামে থানায় নয়টি মাদক মামলা রয়েছে বলেও জানান।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ