নিজস্ব প্রতিবেদক:
আওয়ামী লীগ টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে ‘বঙ্গবন্ধু’ ও ‘লীগ’ শব্দ যুক্ত করে প্রায় শতাধিক ভুঁইফোড় সংগঠন গড়ে উঠেছে। এবার এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী তথ্য-প্রযুক্তি লীগ’। এ ভুঁইফোড় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে রাজধানীর নয়াপল্টনের ৫৫/বি নোয়াখালী টাওয়ার। যদিও এ ঠিকানা অনুযায়ী নোয়াখালী টাওয়ারে গিয়ে সংগঠনটির কোনও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ভবনের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘এ নামের কোনও সংগঠনের কার্যালয় এই ভবনে নেই। কেউ হয়তো ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করছেন।’
নোয়াখালী টাওয়ার নিচ তলার হোমিও ওষুধের দোকানের মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ নামের কোনও দলের অফিস এই ভবনে নেই। এমনকি এই ভবনে কোনও রাজনৈতিক দলেরও অফিস বা কার্যালয়ও নেই।’ একই কথা বলছেন, ভবনের নিরাপত্তা কর্মী নজরুল ইসলাম।
এদিকে ফেসবুকে আওয়ামী তথ্য প্রযুক্তি লীগ নামের একটি পেজ রয়েছে। সেখানে এ সংগঠনের ঠিকানা দেওয়া আছে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। আর ২টি মোবাইল নম্বরও দেওয়া আছে।
একটি নম্বরে ফোন করা হলে প্রকৌশলী আরিফুল মাওলা নামের এক ব্যক্তি নিজেকে বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি লীগের সহসভাপতি পরিচয় দেন। তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালে বাংলাদেশ তথ্য-প্রযুক্তি লীগের যাত্রা শুরু হয়। আমাদের সংগঠন চট্টগ্রাম ভিত্তিক। আর ঢাকায় ২৩ বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা ব্যবহার করি। আমরা সংগঠন করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করেছি।’
এই দলের সভাপতি কে জানতে চাইলে তিনি ড. ফয়সাল কামাল নামের একজনের নম্বর দেন। কিন্তু ফয়সাল কামাল নিজেকে তথ্য-প্রযুক্তি লীগ নয়, নিজেকে বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদের নেতা বলে দাবি করেছেন।
সম্প্রতি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ আওয়ামী তথ্য-প্রযুক্তি লীগ আগামী সাতক্ষীরা জেলা শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে মাসুদ পারভেজ (ক্যাপ্টেন) আর হুময়ন কবির (হান্টু)-কে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। তবে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, ‘সাতক্ষীরায় এ নামের কোনও সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। আর যাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে, এরকম কেউ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছে বলেও আমার মনে পড়ে না। এরা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অকর্ম করে দলের বদনাম করে।’
সাতক্ষীরা জেলা কমিটির ঘোষণা দেওয়া প্রেস রিলিজে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী তথ্য-প্রযুক্তি লীগ’ নিজেদের আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে দাবি করেছে। যদিও আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৫ (১) অনুযায়ী সাতটি সহযোগী সংগঠন রয়েছে। এর বাইরে দু’টি সংগঠন ‘জাতীয় শ্রমিক লীগ’ ও ‘ছাত্রলীগ’-এর নাম গঠনতন্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। তবে তারা নিজ নিজ সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। কিন্তু কোন তালিকায় এই সংগঠনের নাম উল্লেখ নেই।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, ‘এসব ভুঁইফোড় সংগঠনকে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুসারে কোনও স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও প্রশ্নই থাকে না। তবে এ সংগঠনগুলো যদি আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নেওয়া হবে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘এ নামে আওয়ামী লীগের কোনও সহযোগী সংগঠন নেই। এ সংগঠনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনও সম্পর্কও নেই।’
তবে আওয়ামী লীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দু’জন কেন্দ্রীয় নেতা এসব ভুঁইফোড় সংগঠনকে উৎসাহ বা বৈধতা দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে একজন নেতাকে বিভিন্ন সময় এসব সংগঠনের ব্যানারে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিভিন্ন আলোচনা সভা অংশ নিতে দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের বাইরে থাকা শতাধিক ভুঁইফোড় সংগঠনের নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে- বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ, বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু বাস্তুহারা লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী হকার্স ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা বাস্তবায়ন পরিষদ, বঙ্গবন্ধু গ্রাম ডাক্তার পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আদর্শ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ, জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় লীগ, জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় সংসদ, আওয়ামী প্রচার লীগ, আওয়ামী সমবায় লীগ, আওয়ামী শিশু লীগ, আওয়ামী তৃণমূল লীগ, আওয়ামী ছিন্নমূল হকার্স লীগ, আওয়ামী মোটরচালক লীগ, আওয়ামী তরুণ লীগ, আওয়ামী রিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ, আওয়ামী যুব হকার্স লীগ, আওয়ামী পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ, আওয়ামী ক্ষুদ্র মত্স্যজীবী লীগ, আওয়ামী যুব সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদশে আওয়ামী পর্যটন লীগ, জননেত্রী পরিষদ, দেশরত্ন পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব পরিষদ, আমরা নৌকার প্রজন্ম, আওয়ামী শিশু যুবক সাংস্কৃতিক জোট, তৃণমূল লীগ, একুশে আগস্ট ঘাতক নির্মূল কমিটি, আমরা মুজিব হবো, চেতনায় মুজিব, মুক্তিযোদ্ধা তরুণ লীগ, নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী, দেশীয় চিকিত্সক লীগ, ছিন্নমূল মত্স্যজীবী লীগ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লীগ, নৌকার নতুন প্রজন্ম, ডিজিটাল ছাত্রলীগ, ডিজিটাল আওয়ামী প্রজন্ম লীগ প্রভৃতি।
দৈনিক দেশজনতা /এন এইচ