নিজস্ব প্রতিবেদক:
আমার বাবার কি অপরাধ ছিলো? তারা কেন আমার বাবাকে হত্যা করেছে? ছোট ছোট তিন সন্তান নিয়ে কিভাবে সংসারের হাল ধরবে উপার্জন অক্ষম মা? জায়গা জমি সংক্রান্ত প্রতিহিংসার জেরে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আমাদের বাবা আজ আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে!
বাবা যদি সত্যিকারের মাদক ব্যবসায়ি হতো তাহলে হত্যার পর কেন তারা বাবার নাম ঠিকানা কিছু জানাতে পারেনি? কেনইবা কৌশলে মহল্লা কমিটির সিসিটিভি ফুটেজ মুছে ফেলা হয়?
ঠিক এভাবেই অজস্র প্রশ্ন রেখে অজোর ধারায় কাঁদলেন সম্প্রতি র্যাবের বন্দুকযুদ্ধে নিহত কথিত মাদক ব্যবসায়ি হাবিবুর রহমানের তিন ছেলে মেয়ে। বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে হাবিবুর রহমানকে হত্যার অভিযোগ এনে পরিবারের পক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে একাধারে কেঁদেছে মেয়ে সানজিদা ও তার দু ভাই। শুধু তাই নয়, এসময় উপস্থিত সকলকে কাঁদালেন সম্প্রতি র্যাবের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হাবিবুর রহমানের মেয়ে সানজিদা রহমান ইভা।
আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষ থেকে হাবিবুর রহমানকে মিথ্যা মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে র্যাবের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ তুলে নিহতের মেয়ে সানজিদা রহমান ইভা।
নিহতের পরিবারের দাবি গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর মোমিন রোড ঝাউতলা মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হওয়ার পর সাদা পোশাকধারী কয়েকজন তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। পরে মাদক ব্যবসায়ি সাজিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয় জায়গা সংক্রান্ত প্রতিহিংসা পরায়ন মিথ্যা ও বানোয়াট মামলার শিকার হয়ে হাবিবুর রহমানের নির্মম মৃত্যু হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তার ভাই আব্দুল আলী রাব্বি ও ছোটভাইসহ পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
হাবিবের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, স্ত্রী মর্জিনা বেগম এবং দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে অনেকটা মানবেতর ভাবেই বসবাস করছেন। এসময় বড় ছেলে আব্দুল আলী রাব্বী এবং মেয়ে অপর্ণাচরণ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সানজিদা রহমান ইভাও বাবার জন্য কাঁদছিলেন।
নিহত হাবিবের স্ত্রী মর্জিনা জানায়, ঘটনার দিন হাবিবকে ধরে নিতে সহযোগিতা করেছে র্যাবের সোর্স মোশারফ। একই রাতে র্যাবের কথিত বন্দুকযুদ্ধে তারও মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে হাবিবের স্ত্রী মর্জিনা বলেন, র্যাবকে ভূল তথ্য দেয়ায় পরিণাম হিসেবে মোশারফকেও মরতে হয়। মর্জিনা জানান, হাবিবকে কেন ধরিয়ে দেয়া হয় এনিয়ে মোশারফ ও তার স্ত্রী নাজমার বাক বিতন্ডা হয়। তবে এ সংক্রান্তে নাজমার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মর্জিনা জানান, গত বৃহস্পতিবার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ৯ টাকা নিয়ে বের হয়েছিল হাবিব। বাসার অদুরেই লাকী হোটেলে চা নাস্তা করেছিল হাবিব। তবে টাকা কম থাকায় দোকানদারকে বিল পরিশোধ করতে না পেরে বলেছিলেন কখনো মরে গেলে মাফ করে দিতে। এসময় ছেলেকে বলেছিলেন প্রথম রমজানের সেহরি খেতে তার জন্য আলুর ভর্তা তৈরি করতে।
মর্জিনা বলেন, হাবিব কখনো ধূমপান করতেননা। তাহলে তার মৃত্যুর পর হাতে সিগারেট কিভাবে আসল। বাসায় নুন আনতে পান্তা ফুরায় যেখানে তার হাতে এত টাকা এবং অস্ত্র কোত্থেকে এসেছে।
এদিকে কোতোয়ালী থানা সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র কোতোয়ালী থানায় হাবিবের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা আছে। ২০১৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ও ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর হাবিব দু’বার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। একই থানায় তার স্ত্রী মর্জিনার বিরুদ্ধেও মাদক আইনের দুটি মামলা রয়েছে। এছাড়া, কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত মোশারফ মাদকের আখড়ার অন্যতম নিয়ন্ত্রক বলে র্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও তার বিরুদ্ধে কোন মামলার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
হাবিবের শ্বশুর নজরুল ইসলাম বলেন, নগরীর ‘ঝাউতলায় জায়গার মালিকানা নিয়ে এক প্রভাবশালীর সাথে হাবিবের বিরোধ ছিল। তার জেরে ওই প্রভাবশালী প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তার মেয়ে ও মেয়ে-জামাইয়ের নামে বিভিন্ন সময়ে থানায় মিথ্যা মাদকের মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।
তিনি বলেন, একাধিকবার পুলিশ হাবিবকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে হাবিব ওমানে চলে যায়। বিদেশ থেকে ফিরে কিছুদিন কাঁচা সবজির ব্যবসা করে এবং তবলীগে যায়। ছেলে রাব্বি বাবাকে নিয়ে চট্টগ্রাম কোর্ট ভবনে একটি চায়ের দোকান করতো। এখন প্রবাসী বোন ও বোন জামাইয়ের পাঠানো টাকায় সংসার চলে।
সর্বশেষ প্রায় এক মাস কারাবাসের পর হাবিব গতকাল মঙ্গলবার জামিনে মুক্তি পায়। সবখানে ব্যর্থ হওয়ার পর প্রতিপক্ষ এবার র্যাব দিয়ে হাবিবকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করিয়েছে।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর