২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:১৬

মৃত নবজাতকের লাশ ডাস্টবিনে ফেলে দিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ!

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

এক নবজাতকের লাশ তার পরিবারকে বুঝিয়ে না দিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারি ‘পিপলস হাসপাতাল’-এর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (২২ মে) বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের এমডি সুভাস চন্দ্র সূত্রধর এ তথ্য স্বীকার করেছেন। তার ভাষ্য, ‘মৃত শিশুর একজন অভিভাবকের অনুমতি নিয়েই আমাদের একজন নার্স তাকে ডাস্টবিনে ফেলে দেন।’

ওই নবজাতকের মায়ের নাম আমিনা বেগম (২৬)। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর বাকুলিয়া থানাধীন চেয়ারম্যানঘাটা এলাকার মো. ফরিদের স্ত্রী। মো. ফরিদ সৌদি আরবে থাকেন।

আমিনা বেগমের স্বজনরা জানান, প্রসব বেদনা ঊঠলে মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে পিপলস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আমিনা বেগমকে। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তিনি একটা জীবিত ও একটা মৃত শিশুর জন্ম দেন।

আমিনা বেগমের অপারেশন করেন কুসুম আক্তার নামে এক চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘তিন দিন আগে আমিনা বেগমকে হাসপাতালে আনা হয়। তখন তাকে দেখে আমি তার স্বজনদের জানাই, তার গর্ভে দু’টি বাচ্চা রয়েছে। এর মধ্যে একটা বাচ্চার অবস্থা ভালো, আর আরেকটা বাচ্চার অবস্থা খারাপ। এসময় আমি আমিনা বেগমকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য তার স্বজনদের পরামর্শও দেই। কিন্তু তারা আমাকে কিছু না জানিয়ে আমিনা বেগমকে তাদের বাসায় নিয়ে যান।’

কুসুম আক্তার আরও বলেন, ‘আজ আবারও আমিনা বেগমকে হাসপাতালে আনা হয়। ওই সময় (সকালে) আমি হাসপাতালে ছিলাম না। এতে আমার বাসায় গিয়ে আমিনা বেগমের স্বজনরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এরপর আমি আমিনা বেগমের সিজারিয়ান অপারেশনের দায়িত্ব নেই। আমিনা বেগম একটি জীবিত ও একটি মৃত বাচ্চা প্রসব করেন। এর মধ্যে মৃত বাচ্চাটা প্রিম্যাচিউর্ড ছিল। বাচ্চাটি মায়ের পেটে মারা গিয়ে পচেও গিয়েছিল। অপারেশনের পর মৃত বাচ্চাকে আমি আমিনা বেগমের শাশুড়িকে দেখাই। এরপর আমি বাসায় চলে যাই। আর কিছু আমি জানি না।’

আমিনা বেগমের ফুফু খালেদা আক্তার তৃষার অভিযোগ, ‘মৃত শিশুটিকে আমাদের বুঝিয়ে না দিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের কাছে বাচ্চাটাকে চাওয়া হলে তারা প্রথমে এ ব্যাপারে কোনও সহযোগিতাই করেননি। পরে বেলা ২টার দিকে সাংবাদিকদের সামনে ডাক্তারদের ধরলে তারা বাচ্চা এনে দেবেন বলেন জানান। কিন্তু এখনও (সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা) বাচ্চাটাকে এনে দেননি।’

বিকালে আমিনা বেগমের শাশুড়ি হাসপাতালে ছিলেন না। তবে তার মা তাদের মৃত বাচ্চা দেখানোর কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘বাচ্চাটা কাপড়ে মোড়ানো ছিল। তার চোখ-মুখ কিছুই দেখিনি আমরা।’ আমিনার শাশুড়ি মৃত বাচ্চাকে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়ার ব্যাপারে অনুমতি দেননি বলেও জানান তিনি।

হাসপাতালের এমডি সুভাস চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘মৃত বাচ্চাকে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়াটা অন্যায় হয়েছে। তবে বাচ্চার অভিভাবকরা ফেলে দিতে বলায় আমাদের কোনও এক নার্স তাকে ফেলে দিয়েছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) গাড়ি এসে হাসপাতালের বর্জ্য নিয়ে যায়। আজ দুপুরে চসিকের গাড়ি আসলে তাতে ওই মৃত বাচ্চাকে তুলে দেন আমাদের একজন নার্স। এরপর খোঁজ নিয়ে জেনেছি, গাড়িটি চসিকের ডাম্পিং স্টেশন আনন্দবাজারে যায়। চসিকের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বলেছি, মৃত বাচ্চাটাকে ফেরত দিয়ে যেতে। তারা বাচ্চাটাকে হাসপাতালে নিয়ে আসছে।’

দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ

প্রকাশ :মে ২২, ২০১৮ ৮:২৩ অপরাহ্ণ